নতুন অ্যাপল ওয়াচের যত ফিচার

অ্যাপল ওয়াচ ৯ এর নতুন প্রসেসর এস৯ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ সিরিজ ৯ এর উল্লেখযোগ্য দুটি ফিচার ডাবল ট্যাপ এবং অন-ডিভাইস সিরি প্রসেসিং এই চিপের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম

গত ১২ সেপ্টেম্বর নতুন আইফোন উন্মোচন অনুষ্ঠানে ওয়াচ সিরিজ ৯ এবং ওয়াচ আলট্রা ২ উন্মোচন করেছে অ্যাপল। সিরিজ ৯ এ আরও উন্নত চিপ, অন ডিভাইস সিরি প্রসেসিং ও ডাবল ট্যাপ নামের নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।

উন্নত চিপ যুক্ত করায় সিরিজ ৯ আরও দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে। সাধারণত নতুন অ্যাপল ওয়াচ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রসেসরের তুলনায় নতুন ফিচারই বেশি গুরুত্ব পায়।

অ্যাপল ওয়াচ ৯ এর নতুন প্রসেসর এস৯ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ সিরিজ ৯ এর উল্লেখযোগ্য দুটি ফিচার ডাবল ট্যাপ এবং অন-ডিভাইস সিরি প্রসেসিং এই চিপের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

সিরিজ ৯ এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি অ্যাপলের প্রথম কার্বন নিউট্রাল পণ্য। এর ব্যাটারি তৈরিতে অ্যাপল প্রথমবারের মতো শতভাগ পুনঃব্যবহারযোগ্য কোবাল্ট ব্যবহার করেছে।

ডাবল ট্যাপ

অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম

স্ক্রিন স্পর্শ করা ছাড়াই ওয়াচকে নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় হচ্ছে ডাবল ট্যাপ। শুধুমাত্র হাতের তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি পরপর দুই বার স্পর্শ করার মাধ্যমে কল রিসিভ , অ্যালার্ম স্নুজ ও আরও কিছু কাজ খুব সহজেই করা যায়। এজন্য আর আগের মতো ওয়াচের স্ক্রিন স্পর্শ করতে হবে না। এক হাত ব্যস্ত থাকা অবস্থায় ওয়াচ ব্যবহার আরও সহজ করার জন্য এই চমকপ্রদ ফিচার চালু করেছে অ্যাপল। মোট চার ধরনের ভঙ্গিমায় এসব কাজ করা যায়। 

অ্যাপল বলছে, নতুন মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে এস৯ চিপ অ্যাক্সিলারোমিটার, জাইরোস্কোপ ও অপটিক্যাল হার্ট সেন্সর প্রসেস করতে সক্ষম, যার ফলে ডাবল ট্যাপ ফিচারের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

ডাবল ট্যাপ দিয়ে কল রিসিভ বা বাতিল করা ছাড়াও উইজেট স্ক্রল, টাইমার সেট করা এবং ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানোর মতো কাজগুলোও করা যাবে। অন্য হাত ব্যস্ত থাকার সময় এই ফিচারটি দারুণ কাজে আসবে।

অন ডিভাইস সিরি প্রসেসিং

অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম

যেহেতু সিরিজ ৯ এ অন-ডিভাইস সিরি প্রসেসিং ফিচার চালু করা হয়েছে, তাই সিরির রেসপন্স টাইমও আগের চেয়ে দ্রুতগতির হবে। কোনো নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য সিরিকে এখন আর ক্লাউডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হচ্ছে না, যার ফলে এটি সম্ভব হচ্ছে। রাতে কতক্ষণ ঘুমিয়েছেন--সিরিকে এমন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নও করা যাবে ওয়াচ থেকেই। যেহেতু হেলথ অ্যান্ড ফিটনেস ট্র্যাকার হিসেবে অ্যাপল ওয়াচ খুবই জনপ্রিয়, এই ফিচারটি অনেকেরই কাজে আসবে। সিরির প্রসেসিং যেহেতু ওয়াচেই সম্ভব, তাই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখন আগের চেয়ে আরও সুরক্ষিত থাকবে। 

অ্যাপলের হোমপড এবং ওয়াচের মধ্যেও নতুন ইনটিগ্রেশন চালু হয়েছে, ফলে এখন ওয়াচ থেকেই হোমপডের গান, সংবাদ বা অন্যান্য মিডিয়া প্লেয়িং নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রিসিশন ফাইন্ডিং- অর্থাৎ কেনো কিছুর সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করা যাবে ওয়াচ ৯ এর মাধ্যমে।

সিরিজ ৯ এ সিরির কার্যক্রম দ্রুতগতির করা  ও ডাবল ট্যাপের মতো ফিচারগুলো যুক্ত করার মাধ্যমে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে অ্যাপল তাদের এই ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে চাইছে।

এটা একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, কারণ অ্যাপল ওয়াচে এতদিন শুধু ফিটনেস ফিচারগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো।

অন্যান্য ফিচার

অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম

এবারের অনুষ্ঠানে অ্যাপল ওয়াচ সম্পর্কে আরেকটি বিষয় অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। সেটি হচ্ছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার- উভয় দিক থেকেই ওয়াচের  ব্যবহারকে আরও সহজ করার দিকে মনোনিবশে করেছে অ্যাপল। গত জুনে উন্মুক্ত হওয়া ওয়াচওএস ১০ এ যখন উইজেট যুক্ত করা হয়েছিল, তখনও এর কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ওয়াচ উইজেটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো প্রদর্শিত হয়। ফলে এসব তথ্যের জন্য একাধিক অ্যাপে ঢুকতে হয় না।

গত তিন বছর ধরে দৌড়বিদ ও যারা আরও কম দামে স্মার্টওয়াচ কিনতে চায়, এমন সম্ভাব্য নতুন গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে ওয়াচ আনছে অ্যাপল। যেমন, ২০২২ সালে কোম্পানিটি অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা বাজারে আনে। এটি অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্মার্টওয়াচ এবং যারা দৌড়, রোমাঞ্চকর অভিযানে যান, তাদের জন্য খুবই সহায়ক। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে অ্যাপল ওয়াচ এসই নামে একটি কম দামি মডেল বাজারে আনে। এই মডেলটির আরেকটি ভার্সন ২০২২ সালেও বাজারে এনেছিল অ্যাপল।

দাম ও রং

অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯। ছবি: অ্যাপল ডট কম

ওয়াচ ৯ এর অ্যালুমিনিয়াম ভার্সনগুলো পাওয়া যাবে পিংক, স্টারলাইট (সাদা), সিলভার, মিডনাইট (কালো) রঙে। তবে প্রোডাক্ট রেড নামে একটি বিশেষ রঙেও পাওয়া যাবে। এই নির্দিষ্ট রঙের ওয়াচ বিক্রি থেকে পাওয়া লাভের একটি অংশ যাবে বৈশ্বিক এইডস ও করোনাভাইরাস তহবিলে। আর স্টেইনলেস স্টিল এডিশনের অ্যাপল ওয়াচ পাওয়া যাবে সোনালী, সিলভার ও গ্রাফাইট রঙে।

অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯ এর দাম শুরু হয়েছে ৩৯৯ ডলার থেকে। আলট্রা ২ মডেলের দাম ৭৯৯ ডলার আর অ্যাপল ওয়াচ এসই মডেলের দাম ২৪৯ ডলার।

ভবিষ্যতে যেসব ফিচার আসতে পারে 

বাজার বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক স্মার্টওয়াচের মার্কেটে অ্যাপলের অবস্থান সবচেয়ে শক্ত। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে বিক্রি হওয়া মোট স্মার্টওয়াচের ২২ শতাংশই ছিল অ্যাপলের। তবে অ্যাপলের ফ্ল্যাগশিপ ওয়াচে সম্প্রতি বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০২১ সালে স্ক্রিন সাইজ বড় করা হয়েছিল আর ২০২২ সালে টেম্পারেচার সেন্সর যুক্ত করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে অ্যাপল ওয়াচের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে অ্যাপল। নতুন ওয়াচের নাম হতে পারে অ্যাপল ওয়াচ এক্স।

সূত্র: সিনেট, ম্যাশেবল

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Labour Issues: Govt, businesses play down prospects of US trade penalties

The government and business leaders have played down the significance of the diplomatic note from the Bangladesh embassy in Washington DC to the commerce ministry about possible measures like trade penalties and visa restrictions over labour issues.

14h ago