নির্বাচন
গাজীপুর সিটি নির্বাচন

মা-ছেলে যে কয়দিন ভোট চাইতে বেরিয়েছি, সে কয়দিনই হামলা হয়েছে: জায়েদা খাতুন

শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে ছেলে জাহাঙ্গীরসহ এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে ছেলে জাহাঙ্গীরসহ সংবাদ সম্মেলন করছেন জায়েদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

'আমার নিজের ভোট নিজেই চাইয়া নিতে হইব জনগণের কাছ থেইকা। আমরা মা-ছেলে ভোট চাওয়ার জন্য বের হই। যে কয়দিনই বের হয়েছি টঙ্গীতে, এ কয়দিনই হামলা।' 

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন এসব কথা বলেছেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে ছেলে জাহাঙ্গীরসহ এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারের দায়িত্ব নিরপেক্ষ ভোট করা। প্রশাসনের কিছু লোক এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তারা আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে তাদের থ্রেট করছে, ভয় দেখাচ্ছে এবং অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে কোনোভাবেই যেন জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট না করে।'

জাহাঙ্গীর বলেন, 'তারা আজমত উল্লা খানকে ভোট করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। এটা কি নির্বাচনী পরিবেশ, না গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া? একজন মুখোশধারী ভণ্ড লোক, বলে একটা করে আরেকটা। আজমত উল্লা খানকে ভোট দেওয়ার জন্য তারা জোর করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার মা জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি মার্কার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছি আমি। আমরা যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি এবং মা যখন তার সন্তানকে বলেছে সন্তান হিসেবে আমার পাশে থেকো, সে হিসেবে আমি মায়ের প্রচারণার সব কাজের দেখভাল করছি।'

'আমি যখন কোনো প্রচারণায় যাই, তখন আমার কর্মী-সমর্থকদের তারা বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। আজমত উল্লা তার ও দলীয় লোক দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে,' যোগ করেন জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, 'আমার মা জায়েদা খাতুন বলেছেন আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেন। কিন্তু, কোনো জোর প্রয়োগ করবেন না। আপনারা দেখেছেন আমরা যেসব জায়গায় পোস্টার লাগাই, লিফলেট বিতরণ করি সেসব জায়গায় তারা রাতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। সে হিসেবে ভোট এখানে নিরপেক্ষ হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অনেক ভালো অফিসার আছেন, মন্দ অফিসার আছেন, তাদের অনুরোধ করব ভোট গাজীপুরের মানুষের একটা মতামতের জায়গা। যদি মতামতের ভোট দিয়ে তারা মেয়র ও কাউন্সিলর বানায়, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রাধান্য দেবে। যদি মনে করেন এখানে সুষ্ঠু ভোট করাতে পারবেন না, তাহলে সব প্রার্থীকে ডেকে বলেন, আমরা ছেড়ে দেই। কিন্তু ভোটকে অসম্মান করবেন না।'

তার ও তার মায়ের ওপর হামলা হচ্ছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, 'গত ৪ দিন টঙ্গীতে আমরা যেসব এলাকায় গিয়েছি, সেসব এলাকায় আজমত উল্লা নিজস্ব লোক দিয়ে আমাকে ও আমার মা জায়েদা খাতুনকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আমার ওপরে এবং আমার মাকে আক্রমণ করেছে।'

সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীর বলেন, 'কিছু টিভি চ্যানেল থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে আমার মায়ের টেবিল ঘড়ি মার্কার যেন প্রচার না করে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। গণতন্ত্রের ভাষায় সবাই প্রচার করবে এবং সব প্রার্থীকে টেলিভিশনে সমহারে দেখানোর কথা বা পত্রিকায় প্রচারের কথা। কিন্তু তারা একটা পক্ষপাতিত্ব করছে।'

'এখন মিডিয়ার যুগ, ইন্টারনেটের যুগ। ফেসবুকও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা ফেসবুকে আমার মা জায়েদা খাতুনের জন্য প্রচারণা চালায়, তাদের বলে দেওয়া হচ্ছে যেন প্রচারণা নামিয়ে ফেলা হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক,'বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে। আমি মনে করি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার চেষ্টা করছে একটি স্বচ্ছ ভোট করার জন্য। কিন্তু, মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা ভোটের পরিবেশ নষ্ট করলে সবার জন্য ক্ষতি হবে। গাজীপুর মহানগরের ১ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত মানুষ যাকে ভোট দেবে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দেবে।'

'আমার মা বলেছে এই নির্বাচনে উনি থাকবেন। আমরা আবারও বলছি নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। আমাকে গত ১৫ ও ১৬ তারিখে দুদক থেকে চিঠি দিয়েছে। আমি যদি ২১ ও ২২ তারিখে দুদক কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকি এটা কি আমার নির্বাচন করার জন্য দিয়েছেন? না আমার মায়ের নির্বাচন ক্ষতি করার জন্য দিয়েছেন?' প্রশ্ন করেন জাহাঙ্গীর।

সংবাদ সম্মেলনে জায়েদা খাতুন বলেন, 'আমার নিজের ভোট নিজেই চাইয়া নিতে হইব জনগণের কাছ থেইকা। আমরা মা-ছেলেরা ভোট চাওয়ার জন্য বের হই। যে কয়দিনই বের হয়েছি টঙ্গীতে, এ কয়দিনই হামলা। গতকাল গাড়ির সামনে যে হামলা করল আমাদের মা-ছেলের ওপর, আমাগো জীবন বাঁচানোর জন্য তো করে নাই।'

তিনি বলেন, 'আমি যদি ভোটই না চাইতে পারি, ভোট দেওয়ার জন্য লোকজনের কাছে না কইতে পারি, তাইলে ভোট কেমনে কালেকশন করব। ওরা ভোটের জন্য আমাকে-আমার ছেলেরে মারার জন্য প্রস্তুতি নিতাছে। আজমত উল্লা খান যেই লোক সেট করছে আমরা তো এগুলো ভাবতে পারি না। বের হলেই আমার ওপর হামলা দিব।'

তার নির্বাচনী প্রতীক ঘড়ি উল্লেখ করে জায়েদা খাতুন বলেন, 'আমার মার্কার, আমার ভোটের নিরাপত্তা চাই। আমার ভোট জনগণে দিব ২৫ তারিখে। প্রমাণ করে দিব ২৫ তারিখে আমি আর আমার ছেলে কী রকম। আমার ছেলের ওপর যে হামলা, যে মিথ্যা প্রচার হইছে, লোকজনে কি আমার ছেলে খারাপ থাকলে আমাকে ভোট দিবে? ২৫ তারিখে ভোটের মধ্যে প্রমাণ হবে যে জাহাঙ্গীরের মা কি সত্য? জাহাঙ্গীর কি সত্য না মিথ্যা।'

'আমার দাবি আমি ও আমার জনগণ যেন নিরাপত্তা পায়, ভোট দিতে পারে। তাদের হয়রানি করা হইছে। যারা ঘড়ি মার্কার ভোট চায় তাদের ঘরে গিয়ে পুলিশ দিয়ে আটকাতে চাইতেছে। আমি এইটার নিরাপত্তা চাই। সব মার্কার দলের লোকেরা ভোট চাইতে পারে। আমার ভোট কালেকশন করতে গেলে কেন আমার ওপর মাইরপিট হয়, ঝড়ঝাপটা হয়। আমার লোকেরা তো কারও ওপর হামলা করে না। এইডার আমি বিচার চাই,' বলেন জায়েদা খাতুন।
 

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Agency exists only in name

In December 2018, when the Digital Security Agency was formed under the Digital Security Act, it was hoped that the cybersecurity of important government sites with critical citizen data such as the Election Commission’s national identity database and the Office of the Registrar of Birth and Death  would be robust.

10h ago