প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে মাকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান: পিবিআই

রহিমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগম 'নিখোঁজ' হওয়ার আলোচিত ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তদন্তে বলা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে ওই 'অপহরণ নাটক' সাজিয়েছিলেনে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। 'আত্মগোপনে' যেতে 'নিখোঁজ হওয়ার দিন' মাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে ১ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন তিনি।

আজ সোমবার খুলনার পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, 'বেশ আগ থেকেই পরিকল্পনা করে রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। এর সঙ্গে তার আরেক মেয়ে আদুরি আক্তারও জড়িত। মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ওই পরিকল্পনা করা হয়।'

তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি মৌখিকভাবেও আদালতকে রহিমা বেগম ও তার ২ মেয়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান মুশফিকুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, 'রহিমা বেগম অপহৃত হওয়ার পক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং নিজেই আত্মগোপনে যাওয়ার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদেও রহিমা বেগম কখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রহিমা বেগম 'নিখোঁজ' হওয়ার ২৫ দিন আগে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মেয়ে মরিয়ম মান্নানের বাসায় গিয়েছিল। সেখানে বসেই তারা এসব পরিকল্পনা সাজান। ২৭ আগষ্ট বিকেলে মরিয়ম মান্নান ঢাকা থেকে বিকাশের মাধ্যমে খুলনায় মায়ের কাছে ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ৯৮০ টাকা ক্যাশ আউট করেছিলেন তিনি। সেদিন রাতেই তিনি আত্মগোপনে যান।

২৭ আগষ্ট দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদী। পরে ২৮ আগস্ট মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর মামলা করেন।

ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিুকল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়। এতে গ্রেপ্তারের পর তারা কিছুদিন কারাভোগও করেন।

পরে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রহিমা বেগম আদালতে দাবি করেন, তিনি অপহৃত হয়েছিলেন।

মামলাটি তদন্ত করেছেন খুলনা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা করেছেন। সর্বশেষ তাদের ফাঁসাতেই ওই নাটক সাজানো হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।'

আবদুল মান্নান আরও বলেন, 'রহিমা বেগম ও তার মেয়েদের বিরুদ্ধে ছেলে মিরাজ ও তার স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।'

তদন্ত প্রতিবেদনে রহিমা বেগমের ৫ প্রতিবেশীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে রহিমা বেগম মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

8h ago