ছাত্র ইউনিয়ন

‘যাদের নিজেদের ঐক্য নেই, সংকট উত্তরণে তারা আন্দোলন করবে কী করে?’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল আজ শুক্রবার।

১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংগঠনটি। অতীতের গৌরবময় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে এ সংগঠনেরই নেতাকর্মীরা।

কিন্তু অনেকে মনে করছেন, ছাত্রসংগঠনটি হারাতে যাচ্ছে তার সেই পুরোনো গৌরব। সংগঠনটির নেতাকর্মীর সংখ্যা কম হলেও, তিন বছর আগে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে আবার দুইভাগে বিভক্ত হয় ছাত্র ইউনিয়ন।  
  
জাতীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন, তাদের অনেকে এই সংগঠনটির মাঠপর্যায়ের কর্মী থেকে নেতৃত্বস্থানীয় ছিলেন।

কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন এখন আগের মতো জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারছে না বলে মনে করেন অনেকে।

দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সংকটে ছাত্র ইউনিয়ন সরকারের সমালোচনা করে যেকোনো বিষয়ে শক্তিশালী জনমত সৃষ্টি করতে পারত। এখন তারা নিজেরাই বিভক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি এখন চূড়ান্ত অবনতির দিকে। তারই প্রভাব রয়েছে ছাত্র ইউনিয়নেও।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রনেতাদের মধ্যে চিন্তার পরিসর এখন সংকীর্ণ হচ্ছে। পদ-পদবীকে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়নে ভাঙন হলে, সেটি খু্বই দুঃখজনক।'

'যাদের নিজেদের ঐক্য নেই, তারা দেশের সংকট উত্তরণে আন্দোলন করবে কী করে?', প্রশ্ন করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।    

পাকিস্তান আমলেও ছাত্র ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই ভাগ হয় ছাত্র ইউনিয়ন। পরে মেনন অংশের নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়েন।

এরপর ১৯৯৪ সালে সফল সম্মেলনের পর আরও একবার ভাঙনের মুখে পড়ে সংগঠনটি। এসময় পাল্টা কমিটি হলেও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।  

ছাত্র ইউনিয়নে বহিষ্কার ও পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণার পেছনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একটি নির্দেশনাকে কারণ বলে মনে করছেন অনেক নেতা। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা জানান, ৪০তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত কমিটির প্রতি অনাস্থা আনে ইউনিয়নের একাংশ।

এমন প্রেক্ষাপটে সিপিবি পার্টির ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি পুনর্গঠনে রোডম্যাপ দেয়। এটি ছিল ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এ কারণে সেই নির্দেশনা মেনে নিতে রাজি হননি নেতারা। পরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ ১৪ নেতাকর্মীকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে সিপিবি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে ছাত্র ইউনিয়নের বিদ্রোহী অংশ।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ছাত্র ইউনিয়ন আগের মতোই তার গতিপথে রয়েছে।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয় রাজনীতিতে যে পচন ধরেছে, সেটি থেকে নিজেকে রক্ষা করে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে যে আদর্শিক গতিপথ ধরে সামনের দিকে এগুচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, সেটিকে আমি সাফল্য বলে মনে করি।'

'এখন ছাত্র ইউনিয়নে যে বিভাজন রয়েছে, তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই নিরসন হবে', বলেন তিনি।

ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি দীপক শীল অভিযোগ করেন, ছাত্র ইউনিয়ন বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে থাকে। তাদের ভাঙনের পেছনে অন্য কারও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।    

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, 'পুরো সমাজই এখন বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ নেই। যার প্রভাব ছাত্র ইউনিয়নের ওপর পড়ছে।'  

'এ ছাড়াও, ছাত্র ইউনিয়নের যে রাজনৈতিক দর্শন চর্চা করার কথা সেটি হচ্ছে না। ছাত্র ইউনিয়নের আগের যে গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ছিল, সে ধারা থেকে তারা এখন অনেক দূরে। মূল সংকটের কারণ হলো, সংগঠনের স্বার্থের চাইতে যখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থ প্রাধান্য পায়, তখন বিভক্তিগুলো দেখা দেয়,' বলেন তিনি।  

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Yunus calls for peace

Yunus condemns attack at Amar Ekushey Boi Mela, orders swift action

In a statement, the chief adviser denounced the violence, emphasising that it goes against the open-minded spirit of the book fair, which honours the language martyrs of February 21, 1952, according to the CA's press wing

3h ago