জয়-লেখকের মর্জিতে চলে ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গত ৪ বছর ধরে 'অগণতান্ত্রিক' পদ্ধতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

২০১৯ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শীর্ষ নেতারা নির্বিচারে ছাত্র সংগঠন পরিচালনা করায় সংগঠনের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা পিছিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে সংগঠনটি এভাবে পরিচালিত হয়নি।

জয় ও লেখকের কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বারবার কল ও মেসেজ পাঠানো হলেও তারা এর জবাব দেননি।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে ২ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিতে হবে। কিন্তু বর্তমান কমিটি গত ৪ বছরে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

১ বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১১৬টি জেলা ইউনিটের মধ্যে অন্তত ৬৭টিতে কমিটি গঠন করতেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। কিছু জেলায় কাউন্সিল হয়নি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

উদাহরণস্বরূপ, বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি দেওয়া হয় ২০১১ সালে। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১ দশক আগে। ছাত্রলীগের অন্যতম প্রভাবশালী ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে।

জয় ও লেখক কেন্দ্রীয় কমিটির একটিও দ্বি-মাসিক বৈঠক করেননি। ফলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা ও সাংগঠনিক বিষয়ে তাদের মতামত, এমনকি অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারেননি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। কার্যনির্বাহী পরিষদের মতামত না নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। কমিটির অন্য নেতাদের পদে থাকা ছাড়া কোনো ভূমিকা নেই।'

শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা গত ১০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি কার্যালয়ে জয় ও লেখকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে যান।

কিন্তু দপ্তর সচিব তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। তারা সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। এরপর সুবিধাজনক সময়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে বসার প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা। এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে আসেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জয় ও লেখককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন তিনি। আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রব্বানী ঘুষ নেওয়াসহ অন্যান্য বিতর্কে পদ হারানোর পর শেখ হাসিনা এই সিদ্ধান্ত নেন।

এই ঘোষণার ৪ মাস পর শেখ হাসিনা তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করেন।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ২ বছর পর পর সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।

'গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই স্বাভাবিক'

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনটিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১৩ (খ) ধারায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও ২ বছর আগে শেষ হয়েছে।

পরবর্তী কমিটি নির্বাচনের জন্য ২ বছরের মধ্যে নতুন কাউন্সিল করতে হবে। তবে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই সময়সীমা ৩ মাস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি বলেন, 'কিন্তু বিদ্যমান কমিটি নতুন কাউন্সিল করেনি বা আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়াদও বাড়ায়নি।'

সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সংগঠন পরিচালনা করার কথা নয়।

ছাত্রলীগের ওই সহ-সভাপতি বলেন, আগের ৬টি কমিটিও প্রায় ৪ বছর পদ দখল করে ছিল।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩০১ জনের বেশি সদস্য থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে এর সদস্য সংখ্যা ৭০০।

শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা অভিযোগ অনুযায়ী, 'শোকের মাসে (আগস্ট) কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫০০ জনেরও বেশি নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'

সূত্র জানায়, জয় ও লেখক এককভাবে এই নেতাদের নির্বাচন করে শুধু চিঠি পাঠিয়ে সংগঠনের সদস্য করেছে।

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, জয় ও লেখক ৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের ১৩টি কমিটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোনো কাউন্সিল না করেই এই কমিটি দেওয়া হয়েছে, যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, 'সংবিধান লঙ্ঘন করা শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়মে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের মতো একটি সংগঠন এভাবে পরিচালিত হচ্ছে দেখে আমরা খুবই হতাশ।'

 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago