বিদেশে উচ্চশিক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখেন দেশের হাজারো শিক্ষার্থী। ভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধনে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের ইমারত ছোঁয়ার সম্ভাবনাও এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী। নানা বিকল্পের ভিড়ে নিজের জন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি সেটা বাছাই করা বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে প্রথম দিকে। 

তবে অনেকেই শুধু আবেদনের যোগ্যতা, ভাষা দক্ষতার স্কোর, জীবনযাত্রার উচ্চমানের ওপর নির্ভর করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে দ্বিধায় ভোগেন। 

তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাডেমিক কৃতিত্ব, আর্থিক সামর্থ্য, ব্যক্তিগত পছন্দসহ কিছু বিষয় মাথায় রাখাও সমানভাবে জরুরি। 
 

একাডেমিক প্রোগ্রামের সুনাম ও গুণমান

বিদেশে অধ্যয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের একাডেমিক খ্যাতি কেমন তা জেনে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা এমনভাবে করা উচিত যেগুলোর রয়েছে বিশ্বব্যাপী র‌্যাঙ্কিং, সাফল্য, সুনাম ও স্বীকৃতি। এজন্য একাডেমিক গুণমান, গবেষণার প্রভাব, অনুষদের খ্যাতি, শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি, নিয়োগযোগ্যতার মতো বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পরামর্শ নিতে পারলে বেশ কাজে দেবে। 

সামগ্রিক খরচ ও আর্থিক সামর্থ্য 

কোথাও অর্থ বিনিয়োগের আগে যেমন চিন্তাভাবনা করতে হয়, তেমনি বিদেশে অধ্যয়নের জন্য খরচ নিয়েও পরিকল্পনা করতে হয়। বিভিন্ন দেশ ও শহরে পড়াশোনা থেকে শুরু করে বসবাসের সামগ্রিক খরচের বাজেট তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, বাসস্থান, খাবার, পরিবহন, স্বাস্থ্য বিমা, বই এবং অন্যান্য বিবিধ খরচ সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু তাই নয়, যে দেশে অধ্যয়ন করার পরিকল্পনা করছেন সেখানকার বিনিময় হার ও মুদ্রাস্ফীতিও বিবেচনায় রাখা উচিত। কারণ এটি পরবর্তীতে খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।

নানা দেশ ও শহরে বসবাসের খরচ তুলনা করার জন্য নুম্বিও বা এক্সপাটিস্তানের মতো অনলাইন টুল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার অর্থায়নে সাহায্য পেতে স্কলারশিপ, অনুদান, ঋণ বা অন্যান্য আর্থিক সহায়তার ফান্ড পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

অধ্যয়নকালীন ও পরবর্তী কাজের সুযোগ 

বিদেশে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট করতে চাইলে সেখানকার প্রোগ্রামে পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট করার সুবিধা কেমন তা যাচাই করতে হবে। পড়াশোনা করাকালীন কী ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এবং পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন পরবর্তী কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে। দেশের চাকরির বাজারে অর্জিত দক্ষতার চাহিদা কেমন এবং উপার্জন সম্পর্কেও জানতে হবে। কাজের সুযোগের বিষয়ে ধারণা পেতে লিংকডইন বা গ্লাসডোরের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে।

জীবনযাত্রার মান ও নিরাপত্তা 

বিদেশে অধ্যয়ন করা মানেই শুধু পড়াশোনায় বিদ্বান হওয়া নয়; নতুন দেশ ও সংস্কৃতি উপভোগ করার বিষয়ও এটির সঙ্গে জড়িত। তাই বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের আগে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, পরিবহন ব্যবস্থা, জলবায়ু, সামাজিক পরিবেশ, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড ও  সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এ জন্য এমন দেশ বেছে নেওয়া উচিত যেখানে জীবনযাত্রার উচ্চমান, আরামদায়ক ও নিরাপদ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। 

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সহায়ক পরিষেবা

শিক্ষার জন্য নতুন দেশে গেলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য প্রথম থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেওয়ার ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবান্ধব সংগঠন ও পরিষেবা। তাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভর্তি নির্দেশিকা, ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম, একাডেমিক কাউন্সেলিং, সাংস্কৃতিক একীকরণ কার্যক্রম, ভাষা সম্পর্কিত সহায়তা, ক্যারিয়ার পরিষেবা ও শিক্ষার্থীবান্ধব আল্যামনাই নেটওয়ার্কের মতো পরিষেবা দেয়ায় বদ্ধ পরিকর এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পছন্দের শীর্ষে রাখা উচিত। এ ছাড়া নিজ দেশের অন্যান্য যেসব শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করছেন তাদের অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি পর্যালোচনা করতে হবে। 

ব্যক্তিগত পছন্দ

বিদেশে পড়াশোনা করার পরিকল্পনার সময় নিজের ব্যক্তিগত পছন্দকেও প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন, দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া নিজের স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল কি না, নতুন দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা, সেখানকার খাবার ও রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও অফ-ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কেমন, অন্য দেশে ভ্রমণ ও অবকাশযাপনের সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে জেনে নিতে হবে। প্রথমে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও, বিদেশে আপনার বিদেশ সামগ্রিক সুস্থতা, প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি পেতে  উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলোর ওপর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

34m ago