ইরাসমাস স্কলারশিপে আবেদন প্রক্রিয়া

১৯৮৭ সালে শুরু হয়ে এটি বিগত ৩০ বছরে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সম্মানজনক শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ইরাসমাস স্কলারশিপে আবেদন প্রক্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স ও জয়েন্ট মাস্টার্সে পড়াশোনার সুযোগ দেয় ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তিনশ'র বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও ১৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

১৯৮৭ সালে শুরু হয়ে এটি বিগত ৩০ বছরে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সম্মানজনক শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ কেন এত জনপ্রিয়

বিশেষ করে জয়েন্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামে ৪টি সিমেস্টার ভিন্ন দেশে ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক দেশ থেকেই আলাদা মাস্টার্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট দেওয়া হয় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে।

উচ্চতর গবেষণা, নতুন নতুন দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পাশাপাশি এই স্কলারশিপের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে- মাসিক অর্থায়নে শিক্ষার্থীর ভ্রমণ, স্বাস্থ্যবীমা ও গবেষণা সম্পর্কিত সব খরচ বহন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণা সংক্রান্ত ফিসহ বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স, সেমিনার, সামার স্কুল, উইন্টার স্কুল প্রভৃতি সব কিছুরই সুবিধা পাওয়া যায় বিনামূল্যে।

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে যা পাওয়া যাবে

  • শতভাগ টিউশন ফি ওয়েভার
  • ২ বছর প্রতি মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো উপবৃত্তি
  • যাতায়াত ভাতা
  • সিমেস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকেট

কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন

 স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি (প্রথম ডিগ্রি) অর্জন করতে হবে বা স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে থাকতে হবে এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগেই গ্র‍্যাজুয়েট হতে হবে। স্নাতক ডিগ্রি না পেলেও স্নাতক সমতুল্য ডিগ্রির সার্টিফিকেট অর্জন করেও ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে সেই প্রোগ্রামটি অধ্যয়নরত দেশের জাতীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।

২০২৩-২৫ শিক্ষাবর্ষে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুতপা চাকমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কেউ যদি স্নাতকের পরপরই ইরাসমাস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে প্রথমেই আইএলটিএস পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণযোগ্যতা পায়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা সিভিতে যোগ করার জন্য স্নাতক পাশের পূর্বে স্বল্প পরিসরে কাজ করতে পারলে সুবিধা হবে।

যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন

১. অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল না পেলেও আবেদন করা যাবে।

২. জিআরই টেস্ট স্কোর জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও চলবে।

৪. কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক নয়।

৫. ১৬ বয়সের পর থেকে আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং এর পরে বয়সের কোনো বাধানিষেধ নেই।

৬. কম সিজিপিএ থাকলেও আবেদন করা যাবে (প্রোগ্রামভেদে পূর্বে ২.৫০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়েছে)।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের আবেদনপত্র প্রোগ্রাম অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তবে যেসব ডকুমেন্ট প্রায় সব প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে-

  • ২টি রেকমেন্ডেশন লেটার
  • লেটার অব মোটিভেশন
  • অফিসিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (উচ্চ মাধ্যমিক ও ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমতুল্য)
  • পূরণকৃত আবেদনপত্র
  • সিভি
  • পাসপোর্ট বা আইডির স্ক্যান কপি
  • প্রুফ অব রেসিডেন্স
  • ইংরেজি দক্ষতা নির্ধারক পরীক্ষার স্কোর ইত্যাদি।

প্রত্যেক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে রাখতে হবে এবং প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলে সুবিধা হবে। এসব ছাড়াও আইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর অর্জন করতে হবে। বিকল্প হিসেবে, একটি ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট বা ডুয়োলিংগো পরীক্ষার ফলাফলও জমা দেয়া যাবে।

আবেদন প্রক্রিয়া

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রত্যেক প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে।

তারপর কোর্স, আবেদন প্রক্রিয়া ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কনটাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে।

আবেদনের সময়

নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময় প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি বা মার্চের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে থাকে।

সম্ভাব্য খরচ

সুতপা চাকমা বলেন, আবেদন করতে কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। স্কলারশিপ পেলে পরবর্তীতে পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য উপবৃত্তি পাওয়া যায় ঠিকই। তবে স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ; ক্ষেত্রবিশেষে পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্ট প্রেরণ;  পাসপোর্ট, ভিসার জন্য আবেদন, বিমানের টিকেট ইত্যাদির জন্য কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিমানের টিকেট খরচ পরবর্তীতে স্কলারশিপ থেকে রিফান্ড করা হয়। আর পছন্দকৃত দেশের দূতাবাস দেশে না থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হতে পারে।

স্কলারশিপের মেয়াদ শেষে বিদেশে স্থায়ী বা দেশে ফেরত আসার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায়, কেউ চাইলে চাকরির ব্যবস্থা ও ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে অবস্থান করতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

10h ago