দুর্গম চরে নারী শিক্ষায় ভূমিকা রাখছে ‘নদী ও জীবন’ বিদ্যালয়

দুর্গম চরে নারী শিক্ষায় ভূমিকা রাখছে ‘নদী ও জীবন’ বিদ্যালয়
তিস্তার বুকে দুর্গম চরে ‘নদী ও জীবন’ বিদ্যালয়। ছবি: এস দিলীপ রায়

চরে মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় ২০০৮ সালের পূর্বে নারী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর পড়াশুনার তেমন একটা সুযোগ পেতেন না।

তবে কিছু সচ্ছল পরিবারের মেয়েরা আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করতেন। ২০০৮ সালে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর চরে 'নদী ও জীবন' নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি তিস্তা নদীর বুকে দুর্গম চরে প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এখন দুর্গম চরের নারী শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

কালিকাপুর চরের লোকজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, একটি বেসরকারি সংস্থার 'নদী ও জীবন' নামে একটি প্রোগ্রাম করার জন্য কালিকাপুর চরে এসেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি চরের লোকজনকে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রেরণা যোগান। তার সহায়তায় চরের লোকজন গড়ে তোলেন বিদ্যালয়টি। এটির নাম দেওয়া হয় 'নদী ও জীবন' নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

কালিকাপুর চরের কৃষক নাজির হোসেন (৬৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী ও জীবন' বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চরের ছেলে-মেয়েরা মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে চরের মেয়েদের শিক্ষিত করতে এ বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আগে এই চরের মেয়েরা সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার সুযোগ পেতো। "নদী ও জীবন" বিদ্যালয়টি হওয়ার পর চরের অনেক মেয়ে উচ্চ শিক্ষিত হয়েছে। বিদ্যালয়টি দুর্গম চরে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়েছে।'

'নদী ও জীবন' নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১ জন শিক্ষক আছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৬ জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৯৮ জন।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মর্জিনা আক্তার ডেইলি স্টারকে জানায়, তাদের আগে চরের অনেক মেয়ে এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষিত হয়েছেন। তিনি এখান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে মূল ভূখণ্ডের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস করবেন এবং তারপর কলেজে পড়বেন।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোবারক আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আর্থিকভাবে সহায়তা করলে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেওয়া হয় না। শিক্ষকরা বিভিন্ন স্থান থেকে এসে বিনা পারিশ্রমিকে চরের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়টি এখনো এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে।'

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন কিছু শিক্ষক যোগদান করেছেন। বিনা পারিশ্রমিকে আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি। চরে নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটানো আমাদের উদ্দেশ্য। বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হলে এটি দুর্গম চরে নারী শিক্ষা বিস্তারে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে।'

লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যালয়টি কেন এখনো এমপিও ভুক্ত হতে পারেনি সেটা বলতে পারছি না। এমপিও ভুক্ত হওয়ার জন্য সব ধরনের কাগজপত্র শিক্ষা অধিদপ্তরে রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago