বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি, ডুবেছে আমনের খেত

ছবি: স্টার

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তিস্তাপাড়ের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্দি রয়েছেন দুই জেলার ২২টি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজন তাদের গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে বিপুল পরিমান আমন ধানের খেত তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এবার বন্যায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রোববার সকাল ৯টা থেকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে চলে এসেছে। অনবরত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে থাকায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসা বন্ধ হলে তিস্তার পানি নেমে যাবে। এখন তিস্তা পাড়ে স্বল্প মেয়াদি বন্যা চলছে।

ছবি: স্টার

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও তা ভাটিতে রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে। তিস্তা পাড়ের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো থেকে এখনো নদীর পানি নামতে শুরু করেনি।

লালমিনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান এলাকার পানিবন্দি রহমত উল্ল্যাহ (৭০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শুক্রবার রাত থেকে তারা পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড় ও পাউরুটি খেয়ে বেঁচে আছেন। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম কষ্ট পোহাচ্ছেন। ঘরের ভেতর ২-৩ ফুট নদীর পানি রয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজাহার উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের কৃষক নবির হোসেন (৬৫) বলেন, ঘরের ভেতর পানি থাকায় গতকাল ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ঝুঁপড়িতে গরু-ছাগল সঙ্গে নিয়ে আছেন।  তার দশ বিঘা জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কী পরিমান আমন ধানের খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা হয়নি। মাঠপর্যায়ের কৃষি বিভাগের লোকজন কাজ করছেন। আমন ধানের খেত বন্যার পানির নিচে আরো ২-৩ দিন তলিয়ে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমন ধানের খেত। রোববার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ সাংবাদিকদের জানান, তিস্তাপাড়ের পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পানিবন্দি লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago