তিস্তার চর কালিকাপুর

কৃষক মোসলেম উদ্দিন যখন শিক্ষক

কৃষক মোসলেম উদ্দিন যখন শিক্ষক
বিনা বেতনে চরের শিশুদের পড়ান কৃষক মোসলেম উদ্দিন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিস্তা নদীর বুকে চর কালিকাপুর। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের এই চরের বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন। তিনি পেশায় একজন কৃষক।

৭৭ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন এখনো কর্মচঞ্চল মানুষ। তিনি চরের শিশুদের শিক্ষিত করতে স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষাদান করে আসছেন।

চরে একসময় মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তিনি তার ২ ছেলে ও ৪ মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করতে পারেননি।

২০০৮ সালে এই চরে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় 'নদী ও জীবন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়'। এটি প্রতিষ্ঠায় তিনি শ্রম দিয়েছিলেন।

১৯৬৯ সালে ২৩ বছর বয়সে মোসলেম উদ্দিন এসএসসি পাস করেন। সে সময় তার চরে তিনি ছিলেন একমাত্র এসএসসি পাস ব্যক্তি। মূল ভূখণ্ডে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে তিনি পড়াশুনা করেছিলেন।

কৃষক মোসলেম উদ্দিন যখন শিক্ষক
কৃষক মোসলেম উদ্দিন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দারিদ্রের কারণে তার উচ্চশিক্ষা লাভ করা হয়নি। চরে ফিরে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন মোসলেম উদ্দিন। ২ বিঘা জমি চাষাবাদ করে স্ত্রী বিনো আরা বেগমকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এক সময় তার ২০ বিঘা জমি ছিল। ভাঙনের কারণে তা এখন তিস্তার পেটে।

মোসলেম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন চরে অনেক ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষিত। তাদের অনেককে আমি পড়িয়েছি। এখনো চরের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি।'

আরও বলেন, 'সংসারে অভাব আছে। কিন্তু চরের শিশুদের পড়ালেখা শেখাতে কখনই হতাশ হইনি।'

মোসলেম উদ্দিন ইংরেজিতে তুলনামূলক দক্ষ। এছাড়া তিনি অংকসহ অন্যান্য বিষয়ও পড়ান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'নদী ও জীবন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে' শিক্ষার্থীদের পড়াতে সারাদিন কাটিয়ে দেন মোসলেম উদ্দিন।

এছাড়া চরের অনেক শিক্ষার্থী সকালে ও বিকালে তার বাড়িতে গিয়ে পড়াশুনা করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয়। এই বিদ্যালয়ে ১১ শিক্ষক আছেন।

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩৬ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।

কৃষক মোসলেম উদ্দিন যখন শিক্ষক
নদী ও জীবন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোসলেম উদ্দিন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার ডেইলি স্টারকে বলে, 'মোসলেম স্যার আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে ইংরেজি পড়ান। এছাড়া তিনি অংক ও অন্য বিষয়ও পড়ান।'

অভিভাবক আজিজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়েও ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। এজন্য তিনি পারিশ্রমিক নেন না। তিনি চরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছেন।'

'নদী ও জীবন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়'র প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পারিশ্রমিক ছাড়াই মোসলেম উদ্দিন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। ৭৭ বছর বয়সেরও তিনি বেশ পরিশ্রমী। শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।'

তিস্তার চর কালিকাপুরে ৪ শতাধিক পরিবারের বাস। এখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মূল ভূখণ্ড থেকে চরটির দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। বর্ষায় নৌকা চলাচলের একমাত্র ভরসা। শুষ্ক মৌসুমে বালু চর পায়ে হেঁটে যেতে হয়।

একসময় চরম দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হতো এখানকার বাসিন্দাদের। বর্তমানে এই চরে ভুট্টাসহ নানান ফসলের চাষ হচ্ছে। এতে সচ্ছল হচ্ছেন চরের মানুষ। এখন তারা তাদের শিশুদের শিক্ষিত করতে অনেক বেশি সচেতন।

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

9h ago