শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং-বুলিং বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে শিগগির

স্টার ফাইল ফটো

শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ পরিবেশে নির্ভয়ে লেখাপড়া করতে পারে, সেটা নিশ্চিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধে নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার।

সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধ কমিটি গঠনের বিধান রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি একটি খসড়া শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। তবে কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত নয়।

খসড়াটিতে মৌখিক, শারীরিক এবং সাইবার- এই ৩ ধরনের বুলিংয়ের সংজ্ঞা উল্লেখ হয়েছে। পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন আচরণের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

খসড়া অনুসারে, বুলিং এবং র‌্যাগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্মকর্তারা গতকাল খসড়া নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এটি চূড়ান্ত করতে আরও এক বা দুটি বৈঠকের প্রয়োজন।'

গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খসড়াটিতে ভাষা-সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন।'

দুজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বৈঠকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোকেও এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

শিক্ষাবিদরা জানান, স্কুলগুলোতে বুলিংয়ের প্রচলন আছে, তবে অপবাদ ও ভয়ের কারণে সেটা প্রকাশ না করায় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এটি প্রায়শই ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। যার ফলে বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়, স্কুলে অনুপস্থিতি বাড়ে, এমনকি ড্রপআউটের ঘটনাও ঘটে থাকে।

২০১৯ সালে ইউনিসেফের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন শিক্ষার্থীর একজন সমবয়সীদের বুলিংয়ের শিকার হয়।

'বিহাইন্ড দ্য নাম্বার: এন্ডিং স্কুল ভায়োলেন্স অ্যান্ড বুলিং' শীর্ষক সমীক্ষা দেখা গেছে, যেসব শিশুরা মাঝেমধ্যেই হয়রানির শিকার হয় তারা অন্যান্য শিশুদের তুলনায় নিজেদের অনেকখানি বেশি (প্রায় ৩ গুণ) বহিরাগত ভাবে এবং ক্লাসে তাদের অনুপস্থিতর সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে।

কী থাকছে নীতিমালায়?

নীতিমালায় পেটানো, থাপ্পড়, লাথি, ধাক্কা, ঘুষি এবং অন্যের গায়ে থুথু দেওয়ার মতো ঘটনাকে শারীরিক নির্যাতন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সাইবার বুলিং এবং র‌্যাগিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও সম্পর্কে অশালীন কিছু লিখে বা পোস্ট করে হেয় করা।

ইচ্ছাকৃতভাবে কারও শরীরের সংবেদনশীল অংশে স্পর্শ বা স্পর্শের চেষ্টা, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, জোরপূর্বক কাপড় খুলে নেওয়া যৌন হয়রানি এবং র‌্যাগিং হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, পেশা, চামড়ার রঙ এবং অঞ্চলের কারণে অপমান বা হেয় করা জাতিগত বুলিং।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, 'যদি বুলিং এবং র‍্যাগিং প্রতিরোধ করা না হয়, তাহলে সমাজে ভালো নেতৃত্ব এবং ভালো নাগরিকের অভাব দেখা দিতে পারে।'

এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

নজরদারি ও শাস্তি

নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন, অভিযোগ বাক্স রাখা এবং ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-বুলিং ও অ্যান্টি-র‌্যাগিং দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বুলিংকারী এবং ভিকটিম উভয়কেই কাউন্সেলিং করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ অন্যদের বুলিং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বুলিংয়ের দায়ে কাউকে বরখাস্ত বা বহিষ্কার করা যাবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী বুলিং করে থাকে তাহলে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির মাধ্যমে তাদের মাসিক পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) সুবিধা স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে বাতিল করা যেতে পারে।

কমিটির কোনো সদস্য বুলিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে।

ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই নীতি কার্যকর হলে শিশুরা আরও নিরাপদ থাকবে।'

বুলিংয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে, এটি স্বচ্ছতার সঙ্গে করা উচিত।'

তিনি বলেন, 'সাইবার নিরাপত্তা আইন বা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার করা যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago