অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র নিজেরা লিখে শিক্ষক সমিতির হাতে দিলেন ছাত্রদল নেতারা

রোববার দুপুরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ফটোসেশন। ছবি: স্টার

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ রমা সাহার পদত্যাগপত্র নিজেরাই লিখেছিলেন ছাত্রদল নেতারা। পরে ওই পদত্যাগপত্রে অধ্যক্ষের সই নেওয়ার জন্য তার কক্ষে গিয়ে না পাওয়ায় সেটি কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দেন তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার। ছাত্রদলের তৈরি করা পদত্যাগপত্রের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

ছাত্রদলের লেখা ওই পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, 'আমি প্রফেসর রমা সাহা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে গত ৪ এপ্রিল ২০২৪ থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে পারিবারিক সমস্যার কারণে এই দায়িত্ব আমার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। তাই আমি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।'

এ ব্যাপারে রাজেন্দ্র কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদল নেতারা পদত্যাগপত্রটি নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের দিকে যান। কক্ষটি বন্ধ থাকায় নেতারা তিনতলার শিক্ষক মিলনায়তনে গিয়ে পদত্যাগপত্রটি তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, 'ম্যাডামকে (অধ্যক্ষ রমা সাহা) বলবেন এই পদত্যাগপত্রে সাক্ষর করে তিনি যেন ডিজি অফিসে পাঠিয়ে দেন এবং এরপর যেন আর কলেজে না আসেন।'

এ সময় জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু, সাধারণ সম্পাদক তামজিমুল হাসান কায়েস ও সহসভাপতি অনিক খান জিতুসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান শহিদুল ইসলাম।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পদত্যাগপত্র তৈরি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন। তার দাবি, পদত্যাগপত্রটি লিখে নিয়ে গিয়েছিল সাধারণ ছাত্ররা।

আদনান বলেন, 'পরে আমরা জানতে পারি এটি পদত্যাগ করানোর সিস্টেম না। এ জন্য আমরা আর এগুইনি।'

এছাড়া পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে ডিজি অফিসে পাঠানো কিংবা অধ্যক্ষ যেন আর কলেজে না আসেন—এ জাতীয় কোনো কথা তারা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে বলেননি বলেও দাবি করেন ছাত্রদল সভাপতি।

এ ব্যাপারে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তামজিমুল হাসান কায়েসের ভাষ্য, অধ্যক্ষ রমা সাহা কলেজে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এটি নিয়েই তারা তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কে বা কারা পদত্যাগপত্র নিয়ে গিয়েছিল সেটা তাদের জানা নেই।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া। তিনি বলেন, 'কোনো সরকারি অফিসে গিয়ে ‍দুর্নীতি ধরা কিংবা পদত্যাগে বাধ্য করা—এ জাতীয় কাজ আমাদের নয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।'

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে রমা সাহার পদত্যাগপত্র লিখে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানা ছিল না মন্তব্য করে কিবরিয়া আরও বলেন, 'আমি তাদের ডেকে এ ব্যাপারে সতর্ক করব। বলব, আগামীতে যেন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।'

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

এ নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত ২৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বলপ্রয়োগ না করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে পদায়ন ও নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে।

এদিকে গত ৩১ আগস্ট মানববন্ধন করে শিক্ষকদের জোর করে সই নেওয়া পদত্যাগপত্র বাতিলের আহ্বান জানায় বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিশ)। তাদের ভাষ্য, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago