‘দ্বন্দ্ব শিক্ষকদের, আমরা কেন বলির পাঁঠা’ হল ছাড়তে চান না কুবি শিক্ষার্থীরা

হল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বুধবার বিকেলের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও, হল ছাড়তে চান না শিক্ষার্থীরা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আজ মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে কয়েকশত শিক্ষার্থী সমবেত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। 

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অংশ নেয়। শিক্ষক সমিতির অনেক সদস্য মানববন্ধনের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। 

দুপুরের তব্র গরমের মধ্যেই কয়েকশত শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন। ছবি: স্টার

মানববন্ধন সঞ্চালনাকারী ছাত্রলীগ নেতা গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অর্নব সিংহ রায় শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাভেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করতে হবে। গত দুই মাস ধরে ভিসি শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে শিক্ষক সমিতির অব্যাহত আন্দোলনে আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে।'

'তাদের দ্বন্দ্বে আমরা কেন বলির পাঁঠা হব?  আমরা এসব নাটকের প্রতিকার চাই,' বলেন এই শিক্ষার্থী। 

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা বলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলনে আমাদের গত দুই মাস ধরে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এদিকে প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিলে, শিক্ষক সমিতি সশরীরে ক্লাস নেবে বলে অনলাইন ক্লাস বর্জন করে। আমাদেরকে নিয়ে এক প্রকার সার্কাস খেলা হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে ক্লাসে ফিরতে চাই। আমরা হল ছাড়তে চাই না।' 

'আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি। এখন হল বন্ধ হলে আমরা কীভাবে পড়াশোনা করব। আমরা হল ছাড়ব না,' বলেন তিনি।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার মতো এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপাচার্য নিজের গা বাঁচানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিউশন করে চলে। তাদের জন্য হল বন্ধ একটা বিপর্যয়।' 

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভিসি-শিক্ষক সমিতির চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও  হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সিন্ডিকেট। যদি কোনো শিক্ষার্থী হলে থাকতে চায় তাহলে হল প্রশাসন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।' 

তিনি বলেন, 'আজ বিকেল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগ করার কথা। তবে হল সিলগালা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।'

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য দুটি বাস দেওয়া হয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে বাস দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়।

এসব বাসে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেও, কিছু শিক্ষার্থী হলে রয়ে গেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে। 

যারা হলে আছেন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে হল প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রক্টর জানান।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের স্থিতিশীল রাখার জন্য শিক্ষক সমিতির দাবি অনুযায়ী, একটি নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির দাবিগুলো পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হবে।' 

তিনি আরও জানান, গত ২৮ এপ্রিলের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে আরেকটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। শুধু ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Consensus Commission’s first meeting with political parties begins

The meeting of the national consensus-building commission is being chaired by Chief Adviser Prof Muhammad Yunus.

13m ago