ঢাবি

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সাংবাদিকতা বিভাগের ক্লাসরুম ও শিক্ষকের রুমে তালা

অভিযোগের যথাযথ তদন্তের দাবি শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ক্লাসরুমে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির দাবিতে ক্যাম্পাসে আজও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা 'যৌন হয়রানির' অভিযোগের যথাযথ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ সোমবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিভাগের তিনটি ক্লাসরুমের দরজা সিলগালা ও অধ্যাপক নাদির জুনাইদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

ছবি: স্টার

বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাবিলা সরওয়ার দুরদানা জানান, শুধু তদন্ত কমিটি করলেই হবে না সুষ্ঠু বিচার ও তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অতীতেও তার বিরুদ্ধে এ ধরনের যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বিভাগ সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ মনোয়ার বলেন, 'আমাদের দাবি, তদন্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া এ ব্যাপারে প্রশাসন থেকে আমাদেরকে এখনো আশ্বস্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছ থেকে স্পষ্ট উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।'

সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ বদরুল হাসান দুপুরে বিভাগে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আচরণের আহ্বান জানান ও প্রশাসনের তাদের দাবির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেন।

পরে শিক্ষার্থীরা পাঁচ ব্যাচের ২১৮ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি নিয়ে মিছিল করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

তবে উপাচার্য সেখানে না থাকায় তারা মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনে যান। সেখানে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর আহাম্মদ বিকাল ৫টার মধ্যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করলে তারা সেখান থেকে সরে আবার বিভাগে যান।

বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা বিভাগেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে দাবি আদায়ে গতকাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করে।

প্রক্টর অফিসে অধ্যাপক জুনায়েদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঢাবির এক শিক্ষার্থী।

অভিযোগকারী গতকাল উপাচার্যের কাছে আরেকটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

এর আগে বিভাগীয় দ্বাদশ ব্যাচের একদল শিক্ষার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ নম্বর দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়।

যোগাযোগ করা হলে, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানান এবং দাবি করেন কোনো তদন্ত হওয়ার আগেই তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছেন।

তিনি গত রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি চাই অভিযোগের তদন্ত হোক, সুষ্ঠু তদন্ত হোক, বিস্তারিত বিশ্লেষণ হোক... আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চাই।'

'তবে কোনো তদন্ত হওয়ার আগে, যেভাবে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং মিডিয়াতে আমার ছবি প্রকাশিত হয়েছে -- আমি এর নিন্দা জানাই। কারণ এখনও কেউ আমার ভাষ্য শোনেনি,' যোগ করেন তিনি।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে এবং ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। গতকাল সকাল থেকে বিভাগের করিডোরে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়।

পরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল গতকাল ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে তারা সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

Comments