চবি

শাটল ট্রেনে আহত ৩ শিক্ষার্থী আইসিইউতে, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর আজ শুক্রবার চবি ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গতকাল রাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর আজ শুক্রবার ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছবি: সিফায়াতউল্লাহ/স্টার

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর আজ শুক্রবার চবি ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সরেজমিনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনার, জিরো পয়েন্টসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলো ফাঁকা ছিল। দুপুরের পর ছেলেদের হলগুলো সামনে কিছুটা জটলা দেখা গেলেও, মেয়েদের হলের আশপাশে ছিল নীরবতা। তবে ক্যাম্পাসের দোকানগুলো খোলা পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ‍রুম্পা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙচুরের ঘটনার পর সবাই ভয়ের মধ্যে আছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থী হল থেকে বের হচ্ছেন না।'

শাহজালাল হলের সামনে দেখা হয় এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকালের দুর্ঘটনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই ফের আন্দোলনের কথাবার্তা বলছেন।'

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৯টার দিকে শাটল ট্রেনের ছাদে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় চৌধুরীহাট স্টেশন এলাকায় একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। 

আহতদের উদ্ধার করে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আহতদের মধ্যে ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। 

তারা হলেন-বাংলা বিভাগের আমজাদ হোসেন সোহাগ (১৮) ও খলিলুর রহমান (২২) এবং জনপ্রশাসন বিভাগের আংসুইনু মারমা (২১)।

এছাড়া মাথায় আঘাত পাওয়া ৫ শিক্ষার্থীকে নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন। 

এদিকে রাতে ওই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে উপাচার্যের বাসভবন, কার্যালয়, পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে।

আজ উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া সিসিটিভি মনিটর ও রিসিভারগুলো আঙিনায় পড়ে আছে। ভবনের দরজা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে কাঁচের টুকরো।

টেলিভিশন, এসি, সোফা, চেয়ার, ফুলের টবসহ সবকিছু ভাঙচুর করা হয়েছে।

উপাচার্যের বাসভবনে দায়িত্বপালনকারী নিরাপত্তারক্ষী আবুল কালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতে ৩০০-৪০০ জন গেটের ব্যারিয়ার ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আমরা ভয়ে পাহাড়ের উপরে অবস্থান নেই। ফিরে দেখি, সবকিছু তছনছ করে চলে গিয়েছে।'

এদিকে, পরিবহন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়েছে।

পরিবহন পুলের নিরাপত্তারক্ষী আবুল কাশেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাড়িগুলো রক্ষা সম্ভব ছিল না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত ছিলেন।'

জিরো পয়েন্টে ওয়াচ টাওয়ারের সামনে পুড়িয়ে দেওয়া চেয়ার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। 

স্বাভাবিক সময়ে ওয়াচ টাওয়ারে বসে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা দৈনন্দিন তদারকি করতেন। ভবনটির কাঁচ, দরজা ভেঙে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

জিরো পয়েন্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল মইনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চেয়ার পোড়ানো দেখে মনে হচ্ছে যে পুলিশের ওপর ভাঙচুরকারীদের ক্ষোভ বেশি ছিল।'

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকা পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। 

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির প্ররোচনা ছিল।'

জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্যাম্পাসের ফাঁড়ির সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২২ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

সিসিটিভির রেকর্ডার পোড়ানোর বিষয়ে পুলিশ অবগত আছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। 

Comments