গেস্টরুমে না যাওয়ায় জাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

গেস্টরুমে না যাওয়ায় জাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সায়েম হাসান। গত ১৬ ও ১৭ মে শহীদ সালাম-বরকত হলের অতিথি কক্ষে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় গত ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর তিনি লিখিত অভিযোগ দেন।

সায়েম হাসান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রলীগের গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৬ মে কানে অস্ত্রোপচারের কারণে ওই দিন গেস্টরুমে (রাজনৈতিক কারণে) না যাওয়ায় তাকে শহীদ সালাম–বরকত হলের পলিটিক্যাল ব্লকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। পরদিন হল ছেড়ে দিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মাবরুক আল ইসলাম, কার্যকরী সদস্য তানভীর হাসান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আকিব শাহরিয়ার তাকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। সেখানে উপস্থিত সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, খন্দকার সাজ্জাদ কবির, রাতুল রায়, মাবিবুল আলম মুঠোফোনের ভিডিও ক্যামেরা অন করে শিবির, ছাত্রদলের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত জোর করে এমন স্বীকারোক্তি নিতে চেষ্টা করেন। আকিব মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার পকেটে ইয়াবা বড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করতে চান। এ সময় তিনি চিৎকার করে হলের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে, না হয় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার ভয় দেখান। পরে তাকে হলের পলিটিক্যাল ব্লক থেকে কোথাও না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং নজরদারিতে রাখা হয়। ১৯ মে মাথা, কান ও হাঁটুর ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার কথা বলে সাভার রেডিও কলোনিতে মামার বাসায় চলে যান তিনি। পরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

এ ব্যাপারে সায়েম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওরা ছাত্রলীগের আদর্শ থেকে বিচ্যুত নেতা-কর্মী। ওরা তো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। তাই তাদের কাছে বিচার দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যাবে না। ওরা জোর করে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম রিয়াদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযোগের প্রথম কথাটাই তো মিথ্যা। প্রথমত, গেস্টরুমে না আসার জন্য ওকে ডাকা হয়নি। ওকে ডাকা হয়েছে জুনিয়র দিয়ে খাবার আনার জন্য। এটা খারাপ চর্চা। খাবার আনার জন্য তো 'সিক বয়' আছে, ছাত্রকে দিয়ে কেনো?' 

তিনি আরও বলেন, 'তাকে হল থেকে বের করার জন্য জোরজবরদস্তি করা হয়নি বরং সে বন্ধুদেরকে নিয়ে স্বেচ্ছায় বের হচ্ছিলো, সেটা ১৬ তারিখের ঘটনা। এটা নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছে। পরে ১৭ তারিখ সে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামেও গেছে। তাকে আটকে রাখা হয়নি, তাকে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গিয়েছে। তারিখগুলোর সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।'

অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মাবরুক আল ইসলাম জোয়াদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এত কিছু হয় নাই। তাকে যখন ডাকা হয়েছিলো তখন আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিল। এগুলোর প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। যাই হোক, মিথ্যা অভিযোগের ব্যাপারে আমরা একটা বিচার চাই। এটা আমাদেরকে হেনস্তা করা হয়েছে।'

মাদকের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা জানান, হল প্রশাসনকে মাদকের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ও সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে কল দিলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। 

অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের একটি সিলমোহর ও তারিখ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রটি প্রক্টর অফিস গ্রহণ করে এবং হলের অভ্যন্তরীণ ঘটনা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর পাঠিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

শহীদ সালাম-বরকত হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুল মোর্শেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে বৈঠক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আগ্নেয়াস্ত্র বা মাদকের বিরুদ্ধে হল প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যদি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তেমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই হল প্রশাসন থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে ভাবা হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt forms committee to probe last 3 polls

Former High Court justice Shamim Hasnain has been made the chairman of the committee

2h ago