রাবির সংঘর্ষ

প্রশাসন-ছাত্রলীগকে দায়ী করে ৮ ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি

সংগঠনগুলোর পক্ষে ৬টি দাবি জানানো হয়
স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়ি ও বিনোদপুর বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: ফাইল ফুটেজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন ও ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে ৮টি ছাত্র সংগঠন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনগুলো দাবি করে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১১ মার্চ বগুড়া থেকে আগত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশের সঙ্গে বাস কন্টাক্টারের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বাস কন্ডাক্টারের সঙ্গে হাতাহাতি হয় আকাশের বন্ধুদের। বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ী আকাশের বন্ধুদের উপর মারমুখী হলে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হয়ে তার নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ শুরু হলে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র (রামদা, চাপাতি, রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প) সহ বিনোদপুর গেটে এসে জড়ো হতে থাকে। ছাত্রলীগ কর্মীদের এই সংঘর্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অপরদিকে বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পুলিশ বক্সে আগুন দিলে আশেপাশের কিছু দোকানেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনা এ পর্যন্ত তরান্বিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় ভিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ পরিস্থিতির কোনো সমাধান না করেই ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি চালায় পুলিশ। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস কন্টাক্টারের সামান্য বাকবিতণ্ডার ঘটনা সংঘর্ষের পর্যায়ে যাওয়া এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় চূড়ান্তভাবে দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ও নির্লিপ্ত অবস্থান।

এই ৮ সংগঠনের মতে, ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। যার ফলে ১২ মার্চ শিক্ষার্থীরা একত্রে ভিসির বাসভবনের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে অবরুদ্ধ ভিসি কোনো সমাধান না দিয়ে তার বাসভবনে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুনরায় সহিংস করে তোলার চেষ্টায় মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জান্নাত জারার নেতৃত্বে রেল লাইনের উপর ডামি পুড়িয়ে চারুকলার রেলগেট অবরোধ করে।

সংগঠনগুলোর পক্ষে ৬টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো:

১. অবিলম্বে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরি উদ্যোগ নিতে হবে।

২. নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

৩. আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. হলে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং মামলার নামে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ হয়রানির শিকার যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাকসু সচল করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নাগরিক ছাত্র ঐক্য (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা)।

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago