জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তন: উৎসবমুখর পরিবেশে ক্ষোভের আঁচ

জাবি_সমাবর্তন
জাবির অমর একুশের পাদদেশে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ। ছবি: মাহবুব রিনাদ

আগামীকাল শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বিপরীতে অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা, খাবারের তালিকা ও সমাবর্তনের লোগো নিয়ে ক্ষোভও আছে সাবেক শিক্ষার্থীদের।

এবারের সমাবর্তনে অংশ নেবেন প্রায় ১৫ হাজার গ্রাজুয়েট। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।

সমাবর্তন সামনে রেখে গত সোমবার থেকেই নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের গাউনসহ উপহার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

গত কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), সপ্তম ছায়া মঞ্চ, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, অমর একুশ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন, শহীদ মিনার, নতুন কলাভবন, বটতলা, পরিবহন চত্বর ও আবাসিক হলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েটরা গায়ে কালো গাউন আর মাথায় কালো টুপি পরে ফটোসেশনে ব্যস্ত; তাদের সবার চোখে-মুখে দীর্ঘকাল পর প্রিয় ক্যাম্পাসেই সতীর্থদের কাছে পাওয়ার আনন্দ।

তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, এবারের সমাবর্তনে সমালোচনার অন্যতম কারণ হলো নিবন্ধন ফি।

সমাবর্তনে অংশ নিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের যেকোনো একটির জন্য নিবন্ধন ফি আড়াই হাজার টাকা।

এর পাশাপাশি এমফিলের শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ হাজার টাকা, পিএইচডির শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ হাজার টাকা এবং উইকেন্ড কোর্সের সনদধারীদের জন্য ৮ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সদ্য পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিবন্ধনের জন্য যে ফি নেওয়া হয়েছে তা সদ্য পাস করা গ্রাজুয়েটদের জন্য জোগাড় করা কঠিন। তাছাড়া দেশ তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেলেও সমাবর্তনে এর কোনো ছাপ দেখা যায়নি। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাবর্তনের প্রতিটি প্রক্রিয়াই আরও সহজ করা যেত। অনেকে সমাবর্তনে ছেঁড়া পোশাক পেয়েছেন। এমন পোশাক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টিও লজ্জাজনক।'

এর আগে নির্ধারিত সমাবর্তন ফি 'মাত্রাতিরিক্ত' অভিহিত করে তা কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন অনেক সাবেক শিক্ষার্থী। উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এর কিছুই ধোপে টেকেনি।

এদিকে সমাবর্তনে খাবারের তালিকা নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা জানান অনেকে। জানা যায়, খাবারের তালিকায় আছে ছোট আকারের একটি পিৎজা, এক স্লাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল ও পানি।

এছাড়া দরপত্র ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরি ও ৫৬ লাখ টাকার খাবার নিয়েও কথা বলেন কেউ কেউ।

গত বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বক্তব্য দেন। দরপত্র ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্যান্ডেল তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছি। এত স্বল্প সময়ে টেন্ডার দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা সম্ভব হতো না। তাই ডিপিএম (ডিরেক্ট পারচেজ মেথড) ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।'

সমাবর্তনের খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, 'এবার গ্রাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মধ্যাহ্নভোজের দিকে না গিয়ে আমরা প্যাকেট নাশতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিকেলের নাশতা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছে।'

এদিকে নিয়মিতদের সঙ্গে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া নিয়েও আপত্তির কথা শোনা গেছে।

তবে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারের ভাষ্য ছিল, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারে। তাই এখানেও তারা কোনো সমস্যা দেখছেন না।

সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে সাবেক শিক্ষার্থীদের সমালোচনা বা তাদের চাহিদার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম।

তবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে তিনি অভিভূত বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide market disappoints again as prices drop below govt-fixed rates

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

41m ago