ময়মনসিংহে কালবৈশাখী ঝড় হাঁ করে দেখালো দেশের ফুটবলের ক্ষত

১০৫ মিনিট খেলার পর প্রতিপক্ষ দুই দল, রেফারি, ফুটবল সমর্থক সবাই নাখোশ। এমনকি কিছুটা সময় ধরে সবাই থাকলেন বিভ্রান্তও। মঙ্গলবার ময়মনসিংহে আবাহনী এবং বসুন্ধরা কিংসের মধ্যকার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলা আকস্মিক ঝড়, ভারী বর্ষণ ও আলোক স্বল্পতায়  কারণে পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু এর ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা শুধু  খেলা পণ্ড করাই নয়, বরং দেশের ফুটবলের অবকাঠামোগত ব্যর্থতার গভীর ক্ষতগুলো উন্মোচিত করেছে।

রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে উত্তেজনাপূর্ণ প্রথমার্ধ উপভোগ করেন উৎসাহী দর্শক, যেখানে উভয় দল ১-১ গোলে সমতায় ছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা হতাশায় পরিণত হয় যখন এক ঘণ্টা বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ থাকার পর খারাপ আলোর কারণে ১০৫ মিনিটের মাথায় ম্যাচটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

একটি জমকালো ফাইনালের বদলে দেশের ফুটবলের পতনের আরেকটি দুঃখজনক অধ্যায়ে পরিণত হলো।

বাইলজ অনুযায়ী ম্যাচটি যেখানে বন্ধ হয়েছে সেখান থেকে আবার আয়োজন করে ফল নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জানাচ্ছে তারা সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির জন্য বাফুফের দিকেই ছুঁটে যাবে কিছু ন্যায্য প্রশ্ন। কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এমন একটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হলো যেখানে কোনো ফ্লাডলাইট নেই? বৈশাখ মাসে কাল বৈশাখী ঝড় হতে পারে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ছিলো তেমন। তবু হাতে কেন যথেষ্ট সময় রাখা হলো না। কেন ভেন্যুর কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিলো না?

সম্প্রতি প্রবাসী বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিদেশি ফুটবলার এনে জাতীয় দলে একটা ফলাফলের দিকে ঝুঁকেছে বাফুফে। কিন্তু বাফুফে দেশের ভেতরের অবস্থার উন্নয়নে সামান্যই কাজ করেছে। আজকের এই বিশৃঙ্খলা সেই অবহেলাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। সংস্কারের সমস্ত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, বাফুফের বড় ইভেন্টগুলোর জন্য ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারা নিন্দনীয়।

কিছু দৃশ্য ছিল হাস্যকর। ঝড়ের চাপে অস্থায়ী প্রেস বক্স ভেঙে পড়ে, ঢাকার আগত সাংবাদিকরা অরক্ষিত হয়ে পড়েন এবং তাদের কাজ করার জন্য হিমশিম খান। ডাগআউট উড়ে যায়, ফলে বদলি খেলোয়াড়দের খোলা আকাশের নিচে বসতে বাধ্য করা হয়।

হ্যাঁ, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে এর পূর্বাভাস দেওয়া যায়। ফাইনাল মানে সেটা নকআউট ম্যাচ – যেখানে অতিরিক্ত সময় এবং পেনাল্টির সম্ভাবনা থাকে – এটা এমন সময়ে নির্ধারণ করা, যখন কালবৈশাখীর ভরা মৌসুম এবং এমন একটি ভেন্যুতে আয়োজন করা হলো, যা সন্ধ্যায় খেলার জন্য উপযুক্ত নয়, তা অভাবনীয় দূরদর্শিতার অভাবেরই প্রতিফলন।

বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরী দাবি করেছেন  স্টেডিয়ামটি ভেন্যু লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে, যা কেবল পরিকল্পনার অভাব এবং আনাড়ি সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দেয়।

বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা ছিলো। কিন্তু ভেন্যুটি কালিমালিপ্ত হয়েছে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সেখানে খেলতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছে। দর্শক অসদাচরণের জন্য ফিফার জরিমানায় পড়েছে কিংস অ্যারেনা। যা ফুটবলের পরিচিতির সংকট আরও গভীর করেছে।

সমস্যার মূল কারণ হলো বাফুফের দীর্ঘদিনের স্টেডিয়ামগুলোর উন্নয়নে ব্যর্থতা। এদিকে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন জেলা মাঠগুলো অনুন্নত রয়ে গেছে, যদিও জাতীয় স্টেডিয়ামের (পূর্বের নাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম)  সংস্কার কাজের কারণে গত চার বছর ধরে সেগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত, অসমাপ্ত ফেডারেশন কাপ ফাইনাল হয়তো কোনো ফল খুঁজে পাবে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার, সমর্থকদের আস্থা অর্জন এবং খেলোয়াড়দের একটি পেশাদার পরিবেশ দেওয়া – এখনও পরিত্যক্তই রয়ে গেছে। পুরো ঘটনাটি দেশের ফুটবলের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে, যদি শীর্ষ স্তরের প্রতিযোগিতাটিও এত খারাপভাবে পরিচালিত হয়। এবং যতক্ষণ না কর্তাব্যক্তিরা এই সত্যটি স্বীকার করে ব্যবস্থা নেন, ততক্ষণ কোনো বাঁশির আওয়াজই ঘরোয়া ফুটবলের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

4h ago