গুগল সার্চ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সরাবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

ব্যক্তিগত তথ্য সবসময় গোপন রাখাই কাম্য। কিন্তু সেটি যদি গুগল অনুসন্ধানে প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে আপনার কী করা উচিত? 

অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের উপস্থিতি সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যদিও অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কোনো ক্ষতির সৃষ্টি করবে না। তবে এগুলো ভুল হাতে পড়লে অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আপনার সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্যে যাতে যে কেউ প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য খারাপ উদ্দেশ্যযুক্ত ব্যক্তিরা সাধারণত প্রথমে একটি সাধারণ গুগল অনুসন্ধান দিয়ে শুরু করতে পারে। মানুষ যখন আপনার সম্পর্কে গুগলে অনুসন্ধান করবে তখন গুগল আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেন তাদের না দেখায়, সেটি আপনি নিশ্চিত করবেন যেভাবে, তা নিয়েই আজকের আয়োজন।

আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ

গুগল অনুসন্ধান ফলাফলে আপনার ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা কিংবা বাড়ির ঠিকানা স্বাভাবিকভাবে বিপদজনক বলে মনে নাও হতে পারে। আপনি হয়ত এই তথ্যগুলো সামনাসামনি স্বেচ্ছায়ই অনেককে দিয়ে থাকেন। তাহলে আরও কিছু মানুষের এগুলো অনলাইনে খুঁজে পাওয়া নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তিত হতে হবে কেন?

হতে পারে আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শুধু আপনার ঘনিষ্ঠ মানুষ, যেমন: পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী বা ব্যবসায়িক সহযোগীদের দিচ্ছেন। আপনি যখন এই ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর মধ্যে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করেন, তখন আপনার মনে অবশ্যই বিশ্বাস থাকে যে, তারা এই ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে আপনার ক্ষতি করবে না।

কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যখন ইন্টারনেটের মতো প্রকাশ্য জায়গায় থাকে, তখন পুরো দৃশ্যপটই বদলে যায়। সেই তথ্যে কার প্রবেশাধিকার আছে এবং সেটি কী উদ্দেশ্যে, আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

অনেকে এই তথ্য দেখতে পারে এবং আপনার পরিচয় ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণায় ব্যবহার করতে পারে। তার ওপর অনলাইন থেকে যদি স্ক্যামাররা আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে তারা সহজেই আপনার পরিচয় ধারণ করে আপনার নামে জালিয়াতি করতে পারে।

আপনার পরিচয় চুরি ছাড়াও আপনার তথ্য অনলাইনে আপনার বিরুদ্ধে মানুষকে উস্কে দিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে আপনার বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগও আনা সম্ভব। আর আপনার ঠিকানা কিংবা যোগাযোগের বিশদ বিবরণ যদি সেক্ষেত্রে প্রকাশ করা হয়, তা আপনার জন্য মানসিক বা শারীরিক হয়রানিরও কারণ হতে পারে।

এরকম অনেক কিছুর কারণেই আপনি বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। তবে ভাগ্যক্রমে আপনি এর বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। যেহেতু গুগল অনুসন্ধান অনলাইনে কারও সম্পর্কে তথ্য খোঁজার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি, তাই শুরুর দিকে এটি থেকে আপনার তথ্য দূরে রাখা হতে পারে একটি ভালো পন্থা।

গুগল সার্চ থেকে আপনার তথ্য অপসারণের অনুরোধ করবেন কীভাবে?

আপনি যদি আপনার নাম কিংবা আপনার সম্পর্কে অন্য কোনো সার্চ টার্ম গুগল করেন, আর তাতে আপনার সম্পর্কে কোনো সংবেদনশীল তথ্য উঠে আসে, সেক্ষেত্রে এটি থেকে পরিত্রাণে সাহায্যের জন্য গুগলের একটি উপায় রয়েছে।

শুরুতে গুগল সার্চ হেল্প অপশনে যান। সেখানে আপনি সার্চ রেজাল্ট বা অনুসন্ধান ফলাফল থেকে আপনার ডেটা মুছে ফেলার অনুরোধ সম্পর্কিত একটি প্রশ্নযুক্ত ফর্ম পাবেন। ফর্মটি একটু জটিল।

প্রথমে আপনাকে কিছু প্রাথমিক প্রশ্ন করা হবে। সেগুলোর উত্তরের ওপর নির্ভর করে আপনাকে তথ্য অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য একটি ফর্ম অথবা একটি ভিন্ন পৃষ্ঠায় রিডাইরেক্ট করা হতে পারে। 

সঠিকভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে নিচের মতো করে প্রশ্নের উত্তরগুলো দিন-

প্রথম প্রশ্নটি 'আপনি কী করতে চান?'। এর জন্য 'রিমুভ ইনফরমেশন ইউ সি ইন গুগল' নির্বাচন করুন।

দ্বিতীয় প্রশ্নটি 'আপনি যে তথ্যটি সরাতে চান তা কোথায় দেখেছেন তা আমাদের জানান'। এর জন্য 'ইন গুগলস সার্চ রেজাল্টস অ্যান্ড অন এ ওয়েবসাইট' নির্বাচন করুন। এই অপশনটি শুধু তখনই নির্বাচন করুন যদি আপনি কোনো একটি সক্রিয় ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য দেখে থাকেন, যা আপনি গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রবেশ করে দেখেছেন এবং সেটি অপসারণ করতে চান।

তৃতীয় প্রশ্নটি 'আপনি কি সাইটের ওয়েবসাইটের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?'। এর জন্য 'নো, আই প্রিফার নট টু' অপশনটি নির্বাচন করুন। যদি আপনি তথ্যটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য হোস্ট করা সাইটটির অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সঙ্গে যোগাযোগ না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে এটি নির্বাচন করুন। 

এরপর গুগল অনুসন্ধানে প্রাপ্ত পৃষ্ঠাগুলো থেকে আপনি কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সরাতে চান সেগুলো নির্বাচন করুন। এ ক্ষেত্রে একটি নতুন ফর্ম আসার কথা। সেখানে যেসব তথ্য চাওয়া হবে সেগুলো প্রদান করুন। তারপর জমা বোতামে চাপুন। 

তথ্য অপসারণের অনুরোধ জমা দেওয়ার পর আপনি একটি নিশ্চিতকরণ ইমেইল পাবেন। নীচের তালিকাভুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করে গুগল সেই অনুরোধটির মূল্যায়ন করবে। প্রয়োজনে গুগল আপনাকে আরও তথ্য প্রদান করতে বলতে পারে। অনুরোধটি তাদের শর্ত পূরণ করার পর তারা কোনো ব্যবস্থা নিলে সে সম্পর্কে আপনাকে একটি বিজ্ঞপ্তি জানানো হবে।

আপনি কী ধরনের তথ্য সরানোর জন্য অনুরোধ করতে পারেন?

যদিও গুগল বিস্তৃত পরিসরে ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য তথ্য সরানোর জন্য আপনার অনুরোধ গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে এরকম কিছু তথ্য হচ্ছে:

আপনাকে শনাক্ত করা যায় এমন নথির ছবি, যেমন- ড্রাইভিং লাইসেন্স।

আপনার হাতে লেখা স্বাক্ষরের ছবি।

কোনো নাবালকের ছবি।

আপনার সম্মতি ছাড়া প্রকাশ করা আপনার যৌনতাপূর্ণ কোনো ছবি।

আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ।

সরকার-প্রদত্ত কোনো গোপনীয় শনাক্তকরণ নম্বর। যেমন- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর।

আপনার মেডিকেল রেকর্ডের মতো ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল রেকর্ড।

বিভিন্ন জায়গায় লগইনের পাসওয়ার্ড বা পরিচয়পত্র।

চলতি বছর থেকে আপনি আপনার ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং প্রকৃত ঠিকানার মতো ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্যও মুছে ফেলার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

গুগল আপনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে যেসব ক্ষেত্রে

ওপরের সবগুলো শর্ত পূরণ করার পরও গুগল আপনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এর কারণ হতে পারে আপনি যে তথ্যটি সরাতে চান তা-

জনসাধারণের স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন- আপনি যদি অতীতে আপনার পেশাদার অসদাচরণ সম্পর্কিত তথ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করেন, তাহলে তা প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।

সংবাদযোগ্য কোনো তথ্য। যেমন- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ধারণকারী কোনো সংবাদ কিংবা নিবন্ধ।

সরকারি কিংবা অন্যান্য দাপ্তরিক কোনো উৎস থেকে সরবরাহকৃত তথ্য। যেমন- ডিবি বা পুলিশ থেকে দেওয়া তথ্য।

আপনি যে বিষয়বস্তু সরাতে চান সেটি যদি প্রকাশ করা ওয়েব পৃষ্ঠায় আর প্রদর্শিত না হয়, সেক্ষেত্রে গুগল তার ব্যবহারকারীদের এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তে 'গুগলস আউটডেটেড কনটেন্ট রিমুভাল টুল' ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।

তথ্য নামিয়ে ফেলার অনুরোধ মঞ্জুর হওয়ার পর কী হবে?

যেহেতু গুগল সার্চ শুধু একটি সার্চ ইঞ্জিন। তাই তারা কেবল তাদের ক্যাশ করা তথ্যের অনুলিপি মুছে ফেলতে সক্ষম হবে। তারপর এটিকে অনুসন্ধান ফলাফলে আসা থেকে বিরত রাখতে পারবে। তবে তথ্যগুলোর মূল অনুলিপিগুলো প্রকাশ করা সাইটেই থেকে যেতে পারে।

তথ্য প্রকাশকারী সাইটটি যদি গুগলের ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ব্লগার দ্বারা হোস্ট করা হয়। তাহলে আপনি ব্লগারের কনটেন্ট পলিসি ভায়োলেশন টুল ব্যবহার করে তা সরিয়ে নিতে পারেন। যদি সাইটটির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কনটেন্টগুলো প্রাথমিকভাবে নামানোর পর আবার একই ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি করে, সেক্ষেত্রে গুগল সম্পূর্ণ ব্লগটি সরিয়ে নেওয়া কিংবা মালিকের গুগল অ্যাকাউন্টও স্থগিত করতে পারে।

গুগলের কোনো পণ্যে যদি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সরাসরি প্রকাশ করা হয়, আর আপনি যদি সেই তথ্য সরাতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি বিস্তৃত পরিসরের গুগল ট্রাবলশুটার টুলটি ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন 

সর্বোপরি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে সুরক্ষিত করার সর্বোত্তম উপায় হলো- প্রথমেই সেই তথ্য যেন সেখানে দেখা না যায় তা নিশ্চিত করা। এজন্য যখনই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করার প্রয়োজন হবে, চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব কম প্রকাশ করার।

কোথাও আপনার ব্যক্তিগত ইমেইল দেওয়ার বিকল্প হিসেবে, আপনি চাইলে টেম্প-মেইল ডট অর্গের মতো সাইট থেকে অস্থায়ী ইমেইল ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফোন নম্বর চেয়ে থাকে। সেগুলোয় আপনি ব্যক্তিগত ফোন নম্বরের পরিবর্তে ডিসপোজেবল ফোন নম্বর ব্যবহার করতে পারেন।

একটি ওয়েবসাইট যত বড় বা নিরাপদ মনে হোক না কেন, সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। ডেটায় অনুপ্রবেশ প্রায়ই ঘটতে পারে, আর তাতে আপনার সংবেদনশীল তথ্যও পড়তে পারে বিপদে।

তথ্যসূত্র: মেক ইউজ অব

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

His testimony was recorded by the International Crime Tribunal's investigation agency following a questioning session held yesterday

1h ago