প্রতি ৩ ক্যানসার রোগীর ২ জন মারা যান বিনা চিকিৎসায়

ক্যানসার কোষ। ছবি: সংগৃহীত

১৮ বার ভর্তি চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন ক্যানসার রোগ মজিবর। সেখানে তিনি প্যালিয়েটিভ কেয়ার সুবিধা ছাড়াই মারা যান। মুমূর্ষু রোগীর যন্ত্রণা উপশমের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়।

মজিবর একসময় রিকশা চালাতেন। ক্যানসার হাসপাতালগুলোর কোনো একটিতে ভর্তির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে রাজধানীতে অপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।  

দেশে ৯টি সরকারি ক্যানসার হাসপাতাল থাকলেও সেগুলোতে অকার্যকর রেডিওথেরাপি মেশিন এবং লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে মজিবরের মতো কয়েক শ ক্যানসার রোগীকে প্রতিদিন চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ২০ বছর বয়সী এক ক্যানসার রোগীকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে রেডিওথেরাপি নেওয়ার। 

গত বছরের এপ্রিল মাসে ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ টাকা খরচ করেছে তার পরিবার।

সেন্টার ফর ক্যানসার এপিডেমিওলজি, প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিকিৎসা সুবিধার স্বল্পতার কারণে দুই-তৃতীয়াংশ ক্যানসার রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যান। লোকবল সংকট ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতির অভাব রোগীদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।'

এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ২০১৯ সালে ৮টি বিভাগীয় শহরের ১০০ শয্যার ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।

এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের উচিত বিদ্যমান ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্স অ্যান্ড হসিপিটালের (এনআইসিআরএইচ) সাবেক অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্যানসারের রোগীদের সংখ্যার কথা বিবেচনা করে এটি সঠিক ব্যবস্থা। তবে বিদ্যমান হাসপাতালগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি ও যথাযথ পরিষেবা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্যানসার বিশেষজ্ঞের অভাবও আরও বড় একটি উদ্বেগের কারণ। দেশে মোট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০০-এর বেশি হবে না। তাদের পক্ষে এত বেশি রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।'

এনআইসিআরএইচ একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও সেখানে ১০০ জনের মতো চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের পক্ষে একসঙ্গে মাত্র ১৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব। এটাও ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘ সারির অন্যতম কারণ বলে তিনি জানান।   

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ডা. এম এ সবুর দেশে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের ঘাটতি মেটাতে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

ক্যানসারের ৩টি সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি।

'হাসপাতালগুলোতে এই ৩ ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। আসলে, কেমোথেরাপি প্রদানকারী চিকিৎসক প্রায়শই রেডিওথেরাপিও করেন, অন্যদিকে সাধারণ সার্জনরা ক্যানসার রোগীদের অস্ত্রোপচার করেন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে।'

যদিও দেশে মোট ক্যানসার রোগীর সঠিক সংখ্যার তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয় ২০২০ সালে দেশে ক্যানসার রোগী ছিল প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার।

গ্লোবোকান-এর ২০২০ সালের হিসাব অনুসারে, তাদের মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার রোগী মারা গেছেন। গ্লোবোকান বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ক্যানসার রোগীদের পরিসংখ্যান তৈরি করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

BDR carnage rooted in 'long-term plot', says investigation commission

It was abetted by intelligence failures, gross negligence, and the involvement of several political figures, according to the commission chief

34m ago