যে গবেষণার জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান মানুষকে যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা কখনোই চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে পূরণ হবে না। এ ক্ষেত্রে এন্টেঙ্গেলমেন্ট বিষয়ক গবেষণা কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন এবং কমিউনিকেশনের ভিত্তিস্বরূপ। এর ফলে ভবিষ্যতের কম্পিউটারগুলো হবে এখনকার সুপারকম্পিউটারের চেয়েও অচিন্ত্যনীয় শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির। যে হিসেব সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লেগে যাবে এখনকার সুপারকম্পিউটারের, সেটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার করে ফেলবে কয়েক মিনিটেই!
ছবি: নোবেল প্রাইজ/ফেসবুক

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান মানুষকে যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা কখনোই চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে পূরণ হবে না। এ ক্ষেত্রে এন্টেঙ্গেলমেন্ট বিষয়ক গবেষণা কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন এবং কমিউনিকেশনের ভিত্তিস্বরূপ। এর ফলে ভবিষ্যতের কম্পিউটারগুলো হবে এখনকার সুপারকম্পিউটারের চেয়েও অচিন্তনীয় শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির। যে হিসাব সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লেগে যাবে এখনকার সুপারকম্পিউটারের, সেটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার করে ফেলবে কয়েক মিনিটেই!

ফ্রান্সের অ্যালাইন অ্যাসপেক্ট, আমেরিকার জন এফ ক্লজার ও অস্ট্রিয়ার অ্যান্টন জেলিঙ্গার বেল ইনিকুয়ালিটির পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ ও কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট গবেষণায় বিশেষ অবদানের ২০২২ সালের পদার্থবিদ্যায় নোবেল  পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। 

পদার্থে নোবেলজয়ী ২০২২: (বাঁ থেকে) অ্যালাইন অ্যাস্পেক্ট, জন ক্লজার, ও অ্যান্টন জিলিঙ্গার। ছবি: নোবেল পুরস্কার/ফেসবুক

২০২২ সালের নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত মোট ২২১ জন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার জিতে নিলেন। ঠিক এক শতাব্দী আগে ১৯২২ সালে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান সারথি নীলস বোর পেয়েছিলেন পদার্থেবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার। বিজ্ঞানীদের অবিরত উদ্ভাবন, বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের জয় চলছেই। 

কোয়ান্টাম মেকানিক্স ক্রমশ মানুষের জ্ঞান ও ব্যবহারের সীমাকে প্রসারিত করছে। একে কাজে লাগিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ক্রমশ ধরা দিচ্ছে প্রযুক্তি। আমাদের ভবিষ্যত প্রযুক্তি দুনিয়া ও এর তথ্য আদান-প্রদানের মূলে থাকবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যবহার– এমন সম্ভাবনাময় আবিষ্কারে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবার স্বীকৃতিই এবারের পদার্থে নোবেল। 

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অবর্ণনীয় প্রভাবগুলো এখন বাস্তবিক ব্যবহারে আসতে শুরু করেছে। গবেষণার একটি বড় ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক এবং নিরাপদ কোয়ান্টাম এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ নিয়ে কাজ করার অভূত সম্ভাবনার আহবান করছে। এ সম্পর্কিত একটি দিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এনটেঙ্গেলড অবস্থা। 

যখন দুটি কণা এনটেঙ্গেলড কোয়ান্টাম অবস্থায় থাকে, সে অবস্থায় কেউ একটি কণার অবস্থা পরিমাপ করলে যুগপৎভাবে অন্য কণার অবস্থাও জানা হয়ে যায়। অন্য কণার অবস্থাও জানতে আলাদা করে পরীক্ষা-পর্যপবেক্ষণ কোনোটারই প্রয়োজন হয় না। এমনকি দুটি কণা একে অপর থেকে যত দূরেই থাকুক। এ সম্পর্কিত খুব পরিচিত এক জোড়া মোজার এনালজি। একটি বাক্সে রাখা এক জোড়া মোজা থেকে যেই না একটি মোজা বের করে দেখা হবে সেটি ডান না বাম, তৎক্ষণাৎ অপর মোজাটির তথ্যও বলে দেওয়া যাবে। 

দুটি কণার এন্টেঙ্গেলমেন্ট ধারণা। ছবি: নোবেল প্রাইজ/ফেসবুক

বিষয়টি আরও সহজ করে বলতে দুটো বলের কথা ধরা যাক, যার একটি কালো অন্যটি সাদা। দুটো বল দুদিকে ছুঁড়ে দিলে একদিকের কেউ একটি বল ধরার পর সেটি যদি সাদা হয়, নিশ্চিতভাবে তখন অপরদিকের বলটি কালো হবে বলে দেওয়া যাবে। 

এই বাস্তব ধারণার কল্পনার সঙ্গেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দুনিয়ার গড়মিল। কোয়ান্টাম জগত হলো পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র পর্যায়ে ঘটা বিষয়াদি। আমাদের চিরায়ত ধারণার পরিমাপ দিয়ে বিচার করা যায় না। দৈনন্দিন বাস্তবে সাদা কিংবা কালো রঙ বল দুটোর জন্য আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারিত। যেটি সাদা সেটি শুরুতেও সাদা, পরেও সাদা। 

কিন্তু যখন এই ঘটনাটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগতে ঘটবে তখন ঘটনা আমাদের নিত্য ধারণার সঙ্গে মিলবে না। দুটি এন্টেঙ্গেলড অবস্থার বল পর্যবেক্ষণ করার আগ পর্যন্ত কখনোই বলা যাবে না এটি কী রঙের। কেবল পর্যবেক্ষণ করার পর যেকোনোটি দৈবভাবে কালো কিংবা সাদা হবে। অন্যটি হবে এর বিপরীত রঙের।  

অর্থাৎ, দৈনন্দিন বাস্তবের মতো কোয়ান্টাম জগতের বলটির শুরুতে নির্ধারিত কোনো রঙ বলে কিছু নেই। যেন দুটোই ধূসর, কেবল পর্যবেক্ষণ করার পরই প্রকৃতি ঠিক করে দেবে সেটি সাদা দেখাবে নাকি কালো। বেল ইনিকুয়ালিটিস এই অনিশ্চয়তার ফারাক বের করে দেয়, যাতে বলে দেওয়া যেতে পারে কোন বলটি কালো হবে, কোনটি হবে সাদা। ১৯৬০ সালে জন স্টুয়ার্ট বেল এই গাণিতিক ধারণার (Bell Inequality) অবতারণা করেন। 

জন ক্লজার জন বেলের তত্ত্বকে আরও উন্নত করেছেন, যার ফলে একটি বাস্তব পরীক্ষণ সম্ভব তৈরি হয়। যখন তিনি পরিমাপ নেন, পরিমাপগুলো বেল ইনিকুয়ালিটি লঙ্ঘন করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকেই সমর্থন করে। 

জন ক্লোজারের পরীক্ষণে কিছু ফাঁকফোকর ছিল যা অ্যালাইন অ্যাস্পেক্ট সংশোধন করেছেন। তার সংশোধিত সেটআপে এন্টেঙ্গেলড কণার পরীক্ষণ করা যেত ফলাফলকে প্রভাবিত না করেই। 

আরও পরিমার্জিত যন্ত্রপাতি এবং বহু ধারাবাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে আরেক বিজ্ঞানী অ্যান্টন জিলিঙ্গার এন্টেঙ্গেলমেন্ট কোয়ান্টাম অবস্থাকে কাজে লাগাতে পারলেন। তার গবেষণা দল কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের ঘটনা প্রদর্শন করতেও সক্ষম হয়েছে। কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন হলো কোন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোয়ান্টাম তথ্য স্থানান্তর। 

এন্টেঙ্গেলমেন্ট হয়ে উঠেছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রধান বৈশিষ্ট্যের একটি। এন্টেঙ্গেলমেন্টকে কাজে লাগানো হবে ক্রিপ্টোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং আসন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাস্তবায়নে। এন্টেঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোথাও তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে থামিয়ে দেওয়া যাবে কারও আড়ি পাতার সম্ভাবনাকে। 

তথ্যসূত্র: নোবেল প্রাইজ.ওআরজি, নিউইয়র্কটাইমস, কেভি একাডেমি

 

Comments

The Daily Star  | English

Lifts at public hospitals: Horror abounds

Shipon Mia (not his real name) fears for his life throughout the hours he works as a liftman at a building of Sir Salimullah Medical College, commonly known as Mitford hospital, in the capital

1h ago