কীভাবে বুঝবেন ল্যাপটপ বদলের সময় হয়েছে

মুঠোফোনের পরেই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের তালিকায় আছে ল্যাপটপ। অন্য সবকিছুর মতোই নিত্য প্রয়োজনীয় এ ডিভাইসটির কার্যকারিতাও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করে। ফলে সামর্থ্যের সঙ্গে দর কষাকষি করে নতুন ল্যাপটপ কেনার চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, কত বছর পর এবং কী কী লক্ষণ দেখা দিলে নতুন ল্যাপটপ কেনার প্রস্তুতি নিতে হবে?
ছবি: স্টার

মুঠোফোনের পরেই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের তালিকায় আছে ল্যাপটপ। অন্য সবকিছুর মতোই নিত্য প্রয়োজনীয় এ ডিভাইসটির কার্যকারিতাও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করে। ফলে সামর্থ্যের সঙ্গে দর কষাকষি করে নতুন ল্যাপটপ কেনার চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, কত বছর পর এবং কী কী লক্ষণ দেখা দিলে নতুন ল্যাপটপ কেনার প্রস্তুতি নিতে হবে?

সাধারণত পুরোনো ল্যাপটপ যদি ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয় কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে ল্যাপটপের কোনো দামি যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে নতুন ল্যাপটপ কেনার প্রয়োজন অনুভূত হয়। আর উভয় ক্ষেত্রের মূল কারণ হলো ল্যাপটপের জীবনকালের ব্যাপ্তির ওপর প্রভাব।

এ ক্ষেত্রে প্রথমে আসে ব্যবহারের কথা। আপনি যদি দিনের কিছু সময় ভিডিও স্ট্রিমিং, অনলাইন শপিং কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে ল্যাপটপের ওপর চাপ কম পড়বে এবং বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে। 

অন্যদিকে দিনের বেশিরভাগ সময় ল্যাপটপে অফিসের কাজ বা গেইম খেলে অতিবাহিত করলে স্বাভাবিকভাবে হার্ডওয়্যারের ওপর বেশি চাপ পড়বে। যার ফলে ল্যাপটপের কাজ করার ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করবে। 

এ ছাড়া ল্যাপটপের ধরনের ওপরও এটির স্থায়ীত্ব নির্ভর করে। কেন না নিত্যনতুন শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের তুলনায় পুরোনো বা নিম্ন-গ্রেডের হার্ডওয়্যারের ল্যাপটপ খুব বেশিদিন টেকে না। আবার অসাবধানতাবশত হাত ফসকে ল্যাপটপ পড়ে গেলে, ময়েশ্চারে ঘাটতি হলে, অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে ল্যাপটপের দিন ফুরিয়ে আসছে বলে ধরে নিতে হবে। 

ল্যাপটপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার হলো কুলিং ফ্যান। যা ওভারহিটিং বা অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যার অন্যতম সমাধান। সাধারণত ভারী কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ল্যাপটপের সিপিইউতে চাপ পড়লে এমন হয়। তখন কুলিং ফ্যান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিপিইউ ঠান্ডা করার জন্য কাজ করতে শুরু করে। 

কিন্তু কুলিং ফ্যানে ধুলাবালি, ময়লা জমলে সেটি করা সম্ভব হয় না বলে হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ল্যাপটপের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। তাই প্রতি ৬ মাস পর পর কুলিং ফ্যান পরিষ্কার আছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে হবে। 

তবে, ব্যক্তি বা ব্যবহারভেদে প্রেক্ষাপট এক হয় না বলে কখন নতুন ল্যাপটপ কিনতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর পর পর নতুন ল্যাপটপ কেনার পরামর্শ দেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপের ধরন, ব্যবহারবিধি ও পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে সময় বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে। 

অনেকের মতে, ল্যাপটপের তুলনায় ডেস্কটপ কম্পিউটারের আয়ু বেশি। তাই বলে ল্যাপটপের জীবনকাল যে ক্ষীণ এ ধারণাও সঠিক নয়। 

তবে, আপনি যদি নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী হন কিংবা সামর্থ্যের আওতায় পছন্দের ল্যাপটপ কিনতে পারেন সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। কিন্তু যদি মনে হয় কাছে থাকা ল্যাপটপটি চাহিদা মোতাবেক আউটপুট দিতে পারছে না, তাহলে নতুন ল্যাপটপ নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব বিষয় আপনার সিদ্ধান্তের সহযোগী হতে পারে:

  • ল্যাপটপ যদি ঘন ঘন ক্র্যাশ করতে শুরু করে কিংবা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা করে তাহলে নতুন ল্যাপটপ কেনার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ এসব বিষয় সিপিইউ-এর কার্যকারিতা হ্রাস পেলে দেখা যায়। যা মাদারবোর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় পরিবর্তন করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তবে র‍্যাম, এসএসডি বা এইচডিডি সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিলে নতুন ল্যাপটপ না কিনে কম খরচে অকার্যকর যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করলে সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • ল্যাপটপে থাকা প্রোগ্রাম  এবং অ্যাপ লোডিং হতে বেশি সময় নিলে ধরে নিতে হবে ল্যাপটপের দ্রুতগতিতে কাজ করার ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে ল্যাগিং বা ফ্রিজিং হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে করে বুট আপ করতেও বেশ সময় লাগে। এ অবস্থায় প্রায়ই ফোর্স স্টার্ট করতে হয় বলে পুরান ল্যাপটপ বেশিদিন টেকে না। 
  • ল্যাপটপে যদি নতুন অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা না যায় তাহলে বুঝতে হবে ল্যাপটপটি সাম্প্রতিক ওএস আপডেট সাপোর্ট করতে সক্ষম নয়। যার ফলে প্রয়োজনীয় বাগ ফিক্সিং, সিকিউরিটি আপডেট ও অন্যান্য ফিচারের সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নতুন ল্যাপটপ কেনা উত্তম সমাধান। 
  • এ ছাড়া ব্যবহারকারীর চাহিদা যদি হয় হালকা ওজনের ল্যাপটপ কিংবা দ্রুতগতির গেমিং ল্যাপটপ তাহলে পুরোনো ল্যাপটপ বদলে নতুন ল্যাপটপ কেনা যেতেই পারে।     
  • ল্যাপটপে কাজ করার সময় ব্লু স্ক্রিন অব ডেথ বা বিওএসডি স্টপ এরর দেখা দিলে অনেকেই অবহেলা করে এবং মনে করে রিস্টার্ট দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। যা একেবারেই উচিত নয়। সাধারণত ল্যাপটপে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে এমনটি হয়। এ ক্ষেত্রে নিজে ট্রাবলশুট করলে সমস্যার কারণ জানতে পারলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেকানিকের কাছে নিতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে এটি সমধান হবে নাকি নতুন ল্যাপটপ কেনা বেশি যুক্তিসঙ্গত হবে। 
  • অনেক সময় নতুন ল্যাপটপ কেনার ব্যাপারটি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। জীবনের নতুন পদক্ষেপে যেমন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, নতুন ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেলে পুরোনো ফাইলভর্তি ল্যাপটপ ব্যবহারের চেয়ে নতুন ল্যাপটপ কেনার পরামর্শ দেয় অনেকে। 

 

 

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অব, ওয়ান কম্পিউটার গাই 

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 

 

Comments