চাকরির জন্যে লিংকডইন প্রোফাইল যেভাবে সহায়ক

ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল যুগে চাকরি নামের সোনার হরিণখানাও বিভিন্নভাবে নির্ভর করে ব্যক্তির সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতির উপর। এর মধ্যে লিংকডইনের স্থানটা সবচেয়ে উপরে। অনলাইনে নিয়োগদাতা এবং গ্রহীতা, উভয় পক্ষই লিংকডইনের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সেরে নিতে পারেন। কারো কর্মজীবনের ডিজিটাল পোর্টফোলিও হিসেবে লিংকডইন প্রোফাইল হতে পারে বেশ কার্যকর।

লিংকডইনে অনেক ধরনের ফিচারই রয়েছে। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো এতেও লাইক, কমেন্ট, পোস্ট ইত্যাদি রয়েছে, তবে পুরোপুরি ক্যারিয়ার সংক্রান্ত। লিংকডইন প্রোফাইলকে সর্বোচ্চ উপায়ে ঘষামাজা কীভাবে করা যায়, এ নিয়েই আজকের লেখা।

কিওয়ার্ড ব্যবহার

ফেসবুকে সেলস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন রব ক্যান্সিলা। নিজের ক্যারিয়ার থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কিছু পরামর্শ দেন। লিংকডইনে পোস্টকৃত বিভিন্ন চাকরি বা কাজের পোস্টে কতজন ইতোমধ্যেই দরখাস্ত জমা দিয়েছে, সেটি দেখা যায়। তাই তিনি চাকরির পদের পাশাপাশি আরও কিছু নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড, যেমন 'আর্লি অ্যাপ্লিকেন্ট', 'অ্যাকটিভলি রিক্রুটিং' ইত্যাদি দিয়ে সার্চ করতে বলেন। এতে করে সহজে ফলাফল পাওয়া যাবে এবং প্রথম দরখাস্তকারীদের মধ্যে থাকা যাবে। এভাবে সাক্ষাৎকারের জন্য বাদ পড়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে। ক্যান্সিলারের মতে, 'আপনি হয়তো খুবই যোগ্য ব্যক্তি, কিন্তু দেরি করে এলে হয়তো চাকরিদাতা আপনার দরখাস্ত ধরেই দেখবেন না।'

শিরোনামে শুধু জব টাইটেল নয়

ব্যক্তির নামের নিচে থাকে হেডলাইন বা শিরোনাম অংশটি। নিজেকে ব্র্যান্ড করার একটি ভালো উপায় এটি। সবার আগে চোখে পড়ার মতো এই জায়গাটিতে অনেকেই হয়তো জব টাইটেল বা পদের নাম উল্লেখ করেন। কিন্তু ক্যান্সিলা মনে করেন, এই জায়গাটি আরও ভালো করে কাজে লাগানো যায় আকর্ষণীয় কোনো তথ্য বা ব্যক্তির বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞতা যোগ করার মাধ্যমে। এমন কিছু, যা চাকরিদাতার নজর কেড়ে নেবে। সংবাদের শিরোনাম পড়ে যেমন ঠিক হয়, পাঠক বাকি সংবাদটুকু পড়বেন কি না– ঠিক তেমনি কাজ করে লিংকডইনের শিরোনাম অংশটিও।

সবগুলো অংশ ব্যবহার করুন

হেডলাইন ছাড়াও লিংকডইন প্রোফাইলে অন্য বিভিন্ন অংশ, যেমন– 'অ্যাবাউট', 'ব্যাকগ্রাউন্ড' এবং 'স্কিলস' ইত্যাদি রয়েছে। প্রতিটি অংশই নিয়োগদাতার দৃষ্টি কেড়ে নিতে একেকটি দারুণ সুযোগ। তাই প্রতিটি অংশই ভালোভাবে পূরণ করা জরুরি। অ্যাশলি ওয়াটকিনস নামক একজন জব সার্চ স্ট্র্যাটেজিস্ট জানান, লিংকডইন প্রোফাইলের সর্বোচ্চ অপটিমাইজেশনই তার মূলমন্ত্র। তিনি মনে করেন, প্রোফাইল অপটিমাইজেশন ও নেটওয়ার্কিং– এই দুই ব্যাট-বলে মিলে গেলেই ব্যক্তি তার অভীষ্ট কাজটির আরও কাছাকাছি যাবেন। কেননা তখন চাকরিদাতাদের সার্চ তালিকায় তিনি এগিয়ে থাকবেন। সিভি বা রেজিউমিতে যেসব তথ্য যোগ করা যায় না, সেসবের জন্য লিংকডইন একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম। নিজের সব ধরনের দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে এখানে সাজানো-গোছানো পদ্ধতিতে প্রদর্শন করা যায়।

জ্যাকি কিউভাস নামক একজন হিউম্যান রিসোর্স অ্যাডমিন, যিনি কিনা নিয়োগদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন– তিনি বলেন, 'আমি যখন কারো রেজিউমি দেখি, তখন সেই ভিত্তিতে চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে একটা ধারণা করে নিই। কিন্তু আমি যখন তাদের লিংকডইনে যাই, তখন মনে হয় যে আমার ধারণার বাইরেও তারা অনেক কিছুই করেন।'

স্কিল কুইজে অংশ নিন

লিংকডইন প্রোফাইল পেজ সমৃদ্ধ করার জন্য কিউভাস পরামর্শ দেন 'স্কিলস অ্যান্ড অ্যান্ডোর্সমেন্টস'-এ গিয়ে স্কিল কুইজে অংশ নিতে। এই কুইজগুলোর মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস বা গুগল অ্যানালিটিকসের মতো বিশেষ দক্ষতায় প্রত্যয়ন পাওয়া যায়। আমি সবাইকে এটি করতে শতভাগ পরামর্শ দেব। আপনি যদি যথেষ্ট তথ্য যোগ করেন, এতে নিয়োগদাতার আপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য হবে।

নেটওয়ার্কিং

'ওয়ার্ড অব মাউথ' বলে ইংরেজিতে একটি কথা আছে। লিংকডইনে চাকরির খবর পেতেও এটিই কাজ করে। এ কারণে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি, যে নেটওয়ার্কে একই ধরনের কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন লোকজন থাকবেন। কিউভাসের পরামর্শ মানতে 'কানেক্ট' অপশনটি ব্যবহার করতে হবে। সেইসঙ্গে যার সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন, তাকে একটি বার্তাও পাঠাতে পারেনে, যা আরও বেশি কার্যকর। হাফপোস্টে কিউভাস লেখেন, 'একটি ব্যক্তিগত, কাস্টমাইজড বার্তা পাঠানো খুবই দরকার। যদিও অনেক বেশি কাজ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু লোকের থেকে সাড়া পেতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে অপরপক্ষের মনে হবে যে তার প্রোফাইল কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করে তবেই কানেকশনের অনুরোধটি করা হয়েছে। এতে করে তারাও পাল্টা আগ্রহ বোধ করেন।'

ভয়েস ম্যাসেজের ব্যবহার

একবার সংযুক্ত হবার পর নিয়োগদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা আকর্ষণ কীভাবে ধরে রাখবেন? ভয়েস বার্তা পাঠানো একটি ভালো উপায়। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের লিংকডইন অ্যাপে এই সুযোগ রয়েছে। অন্য সব বার্তা থেকে একটু আলাদা হবে গোছানো একটি ভয়েস ম্যাসেজ বেশ কাজে লাগতে পারে। ক্যান্সিলার মতে, 'যেহেতু বেশি লোক এটি ব্যবহার করছেন না, তাই ভিড়ের মাঝে আলাদা হতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে। কারো বিশেষ মনোযোগ পেতে এটি কার্যকর।' তবে তিনি একথাও বলেন যে প্রথমবার যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভয়েস ম্যাসেজ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

তথ্যসূত্র

হাফপোস্ট

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago