ক্যাবল টিভির বিকল্প হয়ে উঠছে নেটফ্লিক্স
দিন দিন ক্যাবল টিভির বিকল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে নেটফ্লিক্স। নিজেদের বানানো কন্টেন্টের চেয়ে আজকাল অন্যদের তৈরি সিনেমা ও সিরিজের দিকেই যেন এই প্ল্যাটফর্মটি বেশি ঝুঁকে পড়ছে।
এই প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ দশ কনটেন্টের তালিকায় প্রায়ই এমন সিনেমা বা সিরিজ দেখা যায়, যা নেটফ্লিক্স অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটিই নেটফ্লিক্সের নতুন ব্যবসায়িক কৌশল।
নেটফ্লিক্সের ক্যাবল টিভি হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক প্রো-রেসলিং অনুষ্ঠান 'ডব্লিউডব্লিউই মানডে নাইট র' এর সম্প্রচার স্বত্ব কিনে নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য দর্শক এই প্রফেশনাল রেসলিং বা পেশাদার কুস্তি দেখার জন্য ক্যাবল টিভির সাবস্ক্রিপশন কিনে থাকেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই অসম্ভব জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠান।
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের সিনেমা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্কট স্টুবারও প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে গেছেন। তার সময়ে টানা তিন বছর নেটফ্লিক্স অস্কারে সবচেয়ে বেশি নমিনেশন পাওয়া ফিল্ম স্টুডিওর খেতাব অর্জন করেছিল।
নেটফ্লিক্সের হাত ধরে বিশ্বে স্ট্রিমিং সেবায় বিপ্লব ঘটে। বিনোদনের জন্য গতানুগতিক টিভি চ্যানেলের বাইরে মানুষকে ভিন্ন এক বিকল্প এনে দেয় নেটফ্লিক্স। দীর্ঘদিন ধরে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যবসা করে আসছিল তারা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজনি, এইচবিও, অ্যামাজন, অ্যাপল টিভির মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আসায় তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে নেটফ্লিক্সকে। ফলে তাদের ব্যবসায়িক কৌশলও বদলেছে।
যে টিভির বিকল্প হিসেবে স্ট্রিমিং সেবা চালু হয়েছিল, সেই টিভির বিভিন্ন সময়ের জনপ্রিয় সিরিজগুলো ধীরে ধীরে স্ট্রিমিং সেবায় যোগ হতে থাকে এবং সেগুলো প্রচণ্ড দর্শকপ্রিয়তাও পায়। নেটফ্লিক্সের এরকম জনপ্রিয় দুটি টিভি সিরিজ হচ্ছে 'স্যুটস' এবং 'ইয়াং শেলডন'।
ডব্লিউডব্লিউই'র সম্প্রচার স্বত্ব প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নেটফ্লিক্সের সহকারী প্রধান নির্বাহী টেড সারান্ডোস।
যদি নেটফ্লিক্স লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তাহলে পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ১০ বছরের জন্য সম্প্রচার স্বত্ব কেনার প্রভাবে ভবিষ্যতে রেসলিং পছন্দ করুক বা না করুক, সব গ্রাহকদেরই সাবস্ক্রিপশন ফি আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে নেটফ্লিক্স নতুন কনটেন্ট তৈরির বদলে অন্যান্য উৎস থেকে দর্শকপ্রিয় কন্টেন্ট নিয়ে আসার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। টেড সারান্ডোস একথা স্বীকারও করেছেন যে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে নিজস্ব কনটেন্টের চেয়ে কিনে আনা কনটেন্ট বেশি উপযোগী।
অবশ্য নেটফ্লিক্সের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের বেলায় এটি খারাপ কৌশলও নয়। নিজস্ব কনটেন্ট তৈরিতে যত খরচ হতো, তার চেয়ে কম খরচে অন্যের তৈরি কনটেন্ট কিনে এবং সেই কনটেন্টে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বেশি আয় করাটা তুলনামূলকভাবে সহজ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের চেয়ে নেটফ্লিক্সের মাসিক ফি বেশি। আগামীতে এই খরচ আরও বাড়তে পারে। তবে কন্টেন্টের সংখ্যা বাড়লে এতে দর্শকরা খুব একটা আপত্তি করবেন না বলেই ভাবছে নেটফ্লিক্স।
তবে নেটফ্লিক্সের নিজস্ব কনটেন্ট যদি কমে যায়, তাহলে গ্রাহকরা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে চলে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
সূত্র: দ্য ভার্জ
Comments