কৃত্রিম চামড়ায় ‘টার্মিনেটরের’ মতো রোবট,নিজেই ক্ষত সারিয়ে তুলবে

টার্মিনেটর সিনেমায় ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া সারিয়ে তোলার সক্ষমতা ছিল এর মূল চরিত্রের। ছবি: ইভারেট কালেকশন
টার্মিনেটর সিনেমায় ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া সারিয়ে তোলার সক্ষমতা ছিল এর মূল চরিত্রের। ছবি: ইভারেট কালেকশন

এতদিন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক সিনেমায় দেখা গেছে—মানুষের মতো দেখতে খুনি রোবটরা গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর তাদের 'সিনথেটিক' বা কৃত্রিম চামড়া নিমিষেই সেটা সারিয়ে তুলে আগের রূপে ফিরিয়ে এনেছে। কোনো চিকিৎসক বা কোনো চিকিৎসা ছাড়া নিজেরাই নিজেদের সুস্থ করে তোলে। সিনেমার এই কাল্পনিক দৃশ্যগুলো এখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।

আজ বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সিলিকন ও পলিপ্রপিলিন গ্লাইকলের সমন্বয়ে এক ধরনের কৃত্রিম চামড়া তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে 'টার্মিনেটর' সিনেমার মূল চরিত্রগুলোর মতো করে রোবট বানানো যেতে পারে।

এই কৃত্রিম চামড়াকে মানুষের চামড়ার মতো টেনে বিস্তৃত করলেও তা ছিঁড়ে যাবে না বা এর কোনো ক্ষতি হবে না। এ ছাড়া চৌম্বক বৈশিষ্ট্যের কারণে আলাদা হয়ে গেলেও সেই ছেঁড়া অংশ একত্রিত করে নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারবে এই চামড়া। এ ছাড়া তাপের সংস্পর্শে আনলে এই চামড়ার ২টি পলিমার উপকরণ নরম হয়ে ছড়িয়ে যেতে থাকে। আবার ঠান্ডা হতে থাকলে এটি জমাট বেঁধে আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

টার্মিনেটর থ্রি সিনেমার রোবট যোদ্ধা। ছবি: এএফপি
টার্মিনেটর থ্রি সিনেমার রোবট যোদ্ধা। ছবি: এএফপি

১৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় গরম করা হলে এই পুনর্বিন্যাস ও 'সুস্থ' হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া (অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া আবারও আগের পর্যায়ে ফিরে আসা) শেষ হতে ২৪ ঘণ্টা লাগে।

গবেষণা দল জানিয়েছে, এই চামড়া ব্যবহার করে এমন রোবট বানানো সম্ভব, যাদের প্রয়োজন অনুযায়ী রূপ পরিবর্তন করা যাবে এবং তাদের দেহের কোনো ক্ষতি হলে তা অল্প সারিয়ে তোলা যাবে। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

গবেষণা দল একটি ভিডিওর মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। ভিডিওতে দেখা যায় ১টি রোবটের দেহের ৩টি ভাঙা অংশ টেবিলের ওপর রাখা আছে।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই এই টুকরোগুলো একে অপরের দিকে আগাতে শুরু করে এবং খুব দ্রুত এগুলো একসঙ্গে জোড়া লেগে, পুনর্বিন্যস্ত হয়ে একটি টুকরোয় সমন্বিত হয়। টার্মিনেটর সিনেমায় এ ধরনের একটি দৃশ্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ক্রিস কুপার বলেন, 'মানুষের চামড়ার অনুকরণে কৃত্রিম চামড়া তৈরির পথে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। মানুষের চামড়ার মতো এই চামড়ারও অনেকগুলো স্তর রয়েছে, যেগুলোকে 'সুস্থ' করে তোলার সময় আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

দলটি 'দ্য টার্মিনেটর' সিনেমায় আর্নল্ড শোয়ার্জনিগারের সাইবর্গ চরিত্র তৈরিতে ব্যবহৃত চামড়ার সঙ্গে এ চামড়ার তুলনা করেন। 

টার্মিনেটরের সঙ্গে সেলফি তুলছেন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার। ছবি: রয়টার্স
টার্মিনেটরের সঙ্গে সেলফি তুলছেন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার। ছবি: রয়টার্স

কুপার দাবি করেন, তিনি ও তার সহকর্মীরা মানবদেহের বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট চামড়ার মতো করে এই কৃত্রিম চামড়া তৈরির চেষ্টা চালিয়েছেন।

আরেক গবেষক ড. স্যাম রুট বলেন, 'এর একটি স্তর চাপ অনুভব করবে, অন্যগুলো তাপ ও প্রসারণ অনুভব করতে পারবে।'

কুপার বলেন, 'মানবদেহের চামড়াও আঘাত থেকে সেরে উঠতে সময় নেয়। সেদিন আমার আঙ্গুলের চামড়া কেটে গিয়েছিল। ক্ষতস্থান আগের পর্যায়ে ফিরে যেতে ৪-৫ দিন সময় নিয়েছে।'

'আমাদের মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, বাইরের কোনো সহায়তা ছাড়াই যেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃত্রিম চামড়া নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে, তা নিশ্চিত করা', যোগ করেন তিনি।

এই চামড়া নিয়ে গবেষকদের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে আছে এমন কিছু যন্ত্র তৈরি করা, যেগুলো বড় আকারে ক্ষতির মুখোমুখি হলেও কিছু সময় পর 'সুস্থ' হয়ে উঠবে।

তারা এমন একটি যন্ত্রের কথা বলেন, যেটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পরও নিজে নিজেই আগের রূপে ফিরে আসতে সক্ষম।

অন্য আরেকটি ভিডিওতে তারা দেখায়, বেশ কয়েক টুকরো কৃত্রিম চামড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখা আছে। এগুলো চুম্বকের মতো একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং এক পর্যায়ে জোড়া লেগে যায়।

টার্মিনেটর ২ সিনেমাটি বিশেষ দর্শকপ্রিয়তা পায়। ছবি: ইভারেট কালেকশন
টার্মিনেটর ২ সিনেমাটি বিশেষ দর্শকপ্রিয়তা পায়। ছবি: ইভারেট কালেকশন

তাদের বিদ্যুৎ পরিবহণ করার ক্ষমতাও ফিরে আসতে শুরু করে। এই চামড়ার সঙ্গে যুক্ত একটি এলইডি বাতি কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বলতে শুরু করে সে বিষয়টিও প্রমাণ করে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণার পরের ধাপে চামড়ার স্তরগুলোকে যতটা সম্ভব পাতলা করার চেষ্টা করা হবে এবং এতে বিভিন্ন ধরনের কার্যকারিতাও যোগ করার চেষ্টা চালানো হবে।

এ মুহূর্তে এ চামড়া শুধু চাপ অনুভব করতে পারে। পরবর্তীতে বাড়তি স্তরগুলোতে তাপমাত্রা ও অন্যান্য অনুভূতি যোগ করা হবে।

টার্মিনেটর থ্রি সিনেমার রোবট যোদ্ধা। ছবি: এএফপি
টার্মিনেটর থ্রি সিনেমার রোবট যোদ্ধা। ছবি: এএফপি

ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষক দলটি জানায়, তারা এমন রোবট তৈরি করতে চান, যেগুলোকে 'টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললেও' আবার জোড়া লেগে আগের চেহারায় ফিরে আসতে পারবে।

এ ছাড়া, গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি ও রোগ নিরাময়ের ক্ষমতাসহ বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম চামড়া তৈরির চেষ্টা চালাবেন, যার মাধ্যমে রোবটদেরকে ধরা-ছোঁয়ার অনুভূতি দেওয়া সম্ভব।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, টার্মিনেটরদের সিনেমার পর্দা ছেড়ে বাস্তব জীবনে নেমে আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই।

Comments

The Daily Star  | English

65pc of suicide victims among students are teens: survey

Teenagers (aged 13-19) made up 65.7% of 310 students who died by suicide in 2024, according to a survey by Aachol Foundation.

38m ago