মাসে ১ লাখ স্মার্টফোন তৈরি করবে প্রাণ-আরএফএল
দেশে মোবাইল ফোন তৈরি শুরু করেছে অন্যতম বৃহৎ কৃষিজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল। বাংলাদেশি এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হতে থাকা ডিজিটাল ডিভাইসের বাজারে প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই মোবাইল সেট উৎপাদন শুরু করেছে।
নরসিংদীর পলাশে ৩০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি কারখানা স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ ফিচার ফোন এবং ১ লাখ স্মার্টফোন তৈরি করা হবে এই কারখানা থেকে। এর প্রথম ব্যাচের ফোন শিগগিরই বাজারে আসতে পারে।
প্রাণ-আরএফএলের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাণ-আরএফএল সবসময় প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করে। এখন প্রথমবারের মতো গ্রুপটি একটি মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবসায় প্রবেশ করছে।'
'মোবাইল ফোনের বাজার অনেক বড় এবং আগামী দিনে এটি আরও বড় হতে চলেছে, তাই আমরা এই সেক্টরে ব্যবসা করার লক্ষ্য নিয়েছি। আমরা আশা করি এটি আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজকে আরও উজ্জ্বল করবে,' বলেন তিনি।
গ্রুপটি প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং শুরুতে প্ল্যান্টে ৫০০ জনের বেশি লোক নিয়োগ করা হবে।
আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আরএফএল ইলেকট্রনিকস 'প্রোটন ব্র্যান্ড' নামে মোবাইল সেটের ব্যবসা পরিচালনা করবে। মোবাইল ফোনের বাইরে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন এবং স্মার্ট হোম অ্যাপ্লায়েন্সও এ কারখানায় তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশে গত কয়েক বছরে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের ব্যাপক কর সুবিধার কারণে এখন সেটি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
সরকারি কর সুবিধা প্রদানের পর থেকে দেশে ১৪টি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, যা প্রায় ১৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সহ আরও ৪টি কারখানা পাইপলাইনে রয়েছে। বার্ষিক হ্যান্ডসেটের বাজার দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয়ের কারণে মোবাইল ফোনের বিক্রি দ্রুত বাড়ছে। ফিচ রেটিংয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, দেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ কোটি ১০ লাখ ফোনের চাহিদা ছিল, যার ৬৩ শতাংশ মিটিয়েছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৬ মাসে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ১ কোটি ৮৫ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি করেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল ফিচার ফোন।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে মোবাইল ফোনের বিক্রি বেড়েছে ৮ শতাংশ। টাকার মূল্যে এই প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় হ্যান্ডসেটের দাম কমেছে ৩৫ শতাংশের চেয়েও বেশি।
তবে সম্প্রতি বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার ও বৈশ্বিক সংকট স্থানীয় শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে এই পরিস্থিতি প্রাণ-আরএফেলের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
বিপণনের পরিচালক কামাল বলেন, 'বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের ফোন কেনার সামর্থ্য নেই। সর্বস্তরের মানুষের চাহিদা মেটাতে আরএফএল সুলভ মূল্যে মোবাইল ফোন বিক্রি করতে চায়।'
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, 'প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ একটি বড় প্রতিষ্ঠান এবং ফোন নির্মাণ খাতে তাদের প্রবেশ একটি ভালো খবর।'
'যদি আরও প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রবেশ করে, তাহলে ভোক্তারা আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে ডিভাইস পাবে। যদি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ডিভাইস রপ্তানি করতে পারে, তাহলে তা আমাদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হতে পারে', যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যে দেশের বাইরে হ্যান্ডসেট রপ্তানি শুরু করেছে। ওয়ালটন গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালে হ্যান্ডসেট রপ্তানি করছে।
বাজারের প্রবেশের পর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।
ওয়ালটন এখন মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ট্যাবও তৈরি করে। স্যামসাং, ভিভো, অপো ও শাওমির মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাজারে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে।
প্রাণ আরএফএল দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গৃহস্থালি পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা নতুন নতুন ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছে।
গ্রুপটি বর্তমানে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকস, বাইসাইকেল, প্যাকেজিং ও তৈরি পোশাক খাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশের ২৫টি জায়গায় তাদের কারখানা রয়েছে এবং প্রাণের পণ্য ১৪৫টি দেশে রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাণ-আরএফএল ৫৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
প্রাণ-আরএফএল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে সরাসরি নিয়োগ দিয়েছে।
Comments