গাড়ির ইঞ্জিনের ধোঁয়ার রঙ, কোনটার কী অর্থ
গাড়ির ইঞ্জিন চলার সময় গ্যাস তৈরি হয়। ক্যাটালাইটিক কনভার্টারের মতো কিছু যন্ত্র আছে যেগুলো এই গ্যাসকে বিশুদ্ধ করতে পারে, যার ফলে পরিষ্কার ধোঁয়া বের হয়। তবে বিভিন্ন কারণে গাড়ির ইঞ্জিন থেকে বিভিন্ন রঙের ধোঁয়া বের হতে পারে। একজস্ট পাইপ থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার রঙ বিচার করে গাড়ির ইঞ্জিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
অবস্থাভেদে গাড়ির ইঞ্জিন থেকে বিভিন্ন রঙের ধোঁয়া বের হতে পারে। আপনার গাড়িতে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা, তা আপনি ধোয়ার রঙ দেখে বুঝতে পারবেন। যা আপনাকে গাড়ির অবস্থা সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক হতে সাহায্য করবে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কোন ধোঁয়ার রঙের কী অর্থ হতে পারে।
কালো ধোঁয়া
ইঞ্জিন খুব বেশি জ্বালানী পোড়ালে সেখান থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এরকম হতে পারে। এয়ার ফিল্টারে ময়লা জমে যাওয়ার মতো সাধারণ কোনো কারণেও হতে পারে। আবার ত্রুটিপূর্ণ ফুয়েল ইনজেক্টর বা ভ্যাকুয়াম লিকের মতো বড় সমস্যার কারণেও হতে পারে। এসব কারণে ইঞ্জিন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জ্বালানী পোড়ায় এবং কালো ধোঁয়া বের হয়।
কালো ধোঁয়ার কারণে জ্বালানি উপযোগিতা হ্রাস পায় এবং জ্বালানী খরচ বেড়ে যায়। কালো ধোঁয়া আরও গুরুতর একটি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। কোনো ইঞ্জিন নষ্ট হলে কিংবা নষ্ট হওয়ার পথে থাকলেও এটি হতে পারে। তাই কালো ধোঁয়া চিহ্নিত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবস্থা নিন।
নীল ধোঁয়া
ইঞ্জিনের নীল ধোঁয়া সচরাচর দেখা যায় না। গাড়ির জ্বলন চক্রের (কমবাশ্চান সাইকেল) অংশ হিসেবে কখনও কখনও গ্যাসের সঙ্গে তেল মিশে গেলে এরকম ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনায় পোড়া তেল অন্য কোনো অর্ধ-পোড়া জ্বালানির সঙ্গে মিশে একজস্ট পাইপের মাধ্যমে বের হয়। এর অর্থ হচ্ছে যে, ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে ইঞ্জিন অয়েল পুড়ে যাচ্ছে। যা সাধারণত ভালভ সিল বা পিস্টন রিং পুরনো এবং ক্ষয়ে গেলে হয়ে থাকে। এর কারণে কম্বাশচান চেম্বারে তেল লিক হয়। এছাড়া নীল ধোঁয়া আরও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন বা ইঞ্জিনের তেল আটকে থাকা বা জমে থাকা।
সাদা ধোঁয়া
গাড়ি স্টার্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই যে সাদা ধোঁয়া দেখা যায় তা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এটি কোনও সমস্যাও নয়। মূলত জমে থাকা ঘনীভূত পদার্থ বাষ্পীভূত হওয়ার কারণে এটি হয়। তবে অনবরত সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার অর্থ হতে পারে ইঞ্জিনটি কুল্যান্ট পোড়াচ্ছে। যা একটি লিক হওয়া হেড গ্যাসকেট বা ফেটে যাইয়া ইঞ্জিন ব্লকের কারণে হতে পারে। কুল্যান্ট পুড়তে থাকলে ইঞ্জিনে কুল্যান্টের পরিমাণ কমে যাবে। যার ফলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। যা ইঞ্জিনের ক্ষতি করতে পারে বা ইঞ্জিনকে বিকল করতে পারে। এছাড়া, সাদা ধোঁয়া আরও একটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন বা ত্রুটিপূর্ণ কুলিং সিস্টেমের কারণেও এটি হতে পারে। তাই এই রঙের ধোঁয়া অনবরত বের হলে বিশেষভাবে সতর্ক হোন।
ধূসর ধোঁয়া
বিভিন্ন সমস্যার কারণে গাড়ি থেকে ধূসর ধোঁয়া বের হতে পারে। যেমন, ইঞ্জিন অয়েল পুড়লে এটি হতে পারে। যা কম্বাশচান চেম্বারে লিক তৈরি করতে পারে এবং পরবর্তীতে ক্যাটালাইটিক কনভার্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি সাধারণত একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভালভ স্টেম সিল থেকে ঘটতে পারে। ভালভ স্টেম সিল ভালভগুলোকে পিচ্ছিল রাখে এবং বায়ু ও জ্বালানীর সঠিক অনুপাত বজায় রাখে। এছাড়া পিস্টন রিং বিকল হলে একজস্ট পাইপ থেকে ধূসর-নীল ধোঁয়া বের হতে পারে।
একজস্ট পাইপ থেকে এই ধরনের যে কোনও রঙের ধোঁয়া বের হওয়া ইঞ্জিনে কোনো না কোনো সমস্যা থাকার লক্ষণ হতে পারে। এরকম কিছু দেখা মাত্র সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করা উচিত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং আপনার গাড়িকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়াও, একজস্ট পাইপ থেকে নির্গত ধোঁয়ার রঙ ইঞ্জিনের স্বাস্থ্যের একটি সূচক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কালো ধোঁয়া মানে খুব বেশি জ্বালানি পুড়ছে, নীল ধোঁয়া বোঝায় তেল পুড়ছে, সাদা ধোঁয়া মানে কুল্যান্ট পুড়ছে এবং ধূসর ধোঁয়া বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে, ইঞ্জিন যেন আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার উৎস খুঁজে বের করে তার সমাধান করা জরুরি।
অনুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি
Comments