আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

বাবার কীর্তি যখন নিজের করে নেন ছেলে

বিশ্বকাপে ডাচদের উইকেটশিকারির যে তালিকা, সেখানে ১৪ উইকেট নিয়ে টিম এতদিন ছিলেন সবার উপরে। ২০২৩ বিশ্বকাপে এসে তার কীর্তিটা গেছে বাসের দখলে— ১৬ উইকেট।

বাবার কীর্তি যখন নিজের করে নেন ছেলে

বাবার কীর্তি যখন নিজের করে নেন ছেলে
ছবি: এএফপি

চলতি বিশ্বকাপের আগে ২০১১ সালে সবশেষ বিশ্বকাপ খেলেছিল নেদারল্যান্ডস। তখন বাস ডি লিডির বয়স ১২ বছরের মতো, ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে চলছেন তিনি। বাবা টিম ডি লিডির মতো বিশ্বকাপে খেলবেন, সেই স্বপ্নও দেখছেন নিশ্চয়ই। সঙ্গে ডাচদের বিশ্বকাপ ইতিহাস নিয়েও তো তার আগ্রহ থাকারই কথা।

নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলার টিম— তার বাবা। বেড়ে ওঠার সময় সেটা মুখস্থই হয়তো হয়ে গেছে বাসের। নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটের ছোট্ট ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যে সেটি। বাবার সুবাদে ক্রিকেটে বাসেরও প্রেমে পড়া। নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেটের বাস্তবতায় বলা যায়, বাবার সুবাদেই ক্রিকেটে নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছেন। ডাচদের বিশ্বকাপ দলে দেশটিতে জন্ম নেওয়া হাতেগোনা যে কয়েকজন আছেন, তাদেরই একজন বাস।

সেই বাস এবার বাবাকেই ছাড়িয়ে গেলেন উইকেট শিকারের সংখ্যায়। রেকর্ডটা সেই ২০০৭ সালের পর থেকেই অক্ষত অবস্থায় ছিল। বিশ্বকাপে ডাচদের উইকেটশিকারির যে তালিকা, সেখানে ১৪ উইকেট নিয়ে টিম এতদিন ছিলেন সবার উপরে। ২০২৩ বিশ্বকাপে এসে তার কীর্তিটা গেছে বাসের দখলে— ১৬ উইকেট। ছেলের হাতেই নতুন মালিকানা বলে রেকর্ড হাতছাড়ায় দুঃখ পাওয়ার বদলে বরং আনন্দিতই হবেন টিম।

বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে বাবা-ছেলে জুটির গল্প
ছবি: এএফপি

আর তার নিজের নামটা তো চিরকালের জন্য খোদাই করে রাখার বন্দোবস্ত করেই রেখেছেন। কারণ, বিশ্বকাপে ১০ উইকেট নেওয়া প্রথম ডাচ বোলার টিম। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে নাম লেখায় নেদারল্যান্ডস। তবে ওই আসর শেষে টিমের উইকেটের খাতায় কোনো দাগ পড়েনি। এরপর ১৯৯৯ সালে নেদারল্যান্ডস জায়গা করে নিতে পারেনি বিশ্বকাপে।

২০০৩ সালে আবার বিশ্বমঞ্চে সুযোগ করে নেয় ডাচরা। সেবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটার মাধ্যমে সারাজীবন গল্প করার রসদ পেয়ে যান টিম। হারলেও ৩৫ রানে ৪ উইকেট পেয়ে তিনি হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ওই চার শিকারের একজনের নাম লিটল মাস্টার খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার। রাহুল দ্রাবিড় নামের আরেক কিংবদন্তির উইকেটও ঢুকেছিল তার ঝুলিতে।

ওই আসরে সব মিলিয়ে ১১ উইকেট পেয়েছিলেন টিম। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে নেন আরও ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে তার নামের পাশে ১৪ শিকার।

২০২৩ সালে এসে ভারতের প্রধান কোচের ভূমিকায় থাকা দ্রাবিড়ের দলের বিপক্ষে টিমের ছেলে খেলতে নামেন বিশ্বকাপে। রোববার গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচের আগে ১৪ উইকেট নিয়ে বাবার পাশেই ছিলেন বাস। বেঙ্গালুরুতে ১৮তম ওভারে ৬১ রান করা রোহিত শর্মার উইকেট পেয়ে এককভাবে শীর্ষে উঠে যান। কিছুক্ষণ পরই টেলিভিশনের পর্দায় ক্যামেরা আটকে থাকে এক ভদ্রলোকের ওপর। তিনি ওই টিম। ছেলের কীর্তি মাঠে বসেই সগর্বে দেখেছেন বাবা।

আরও একটি উইকেট পেয়ে ম্যাচ শেষ করেন বাস। বিশ্বকাপের এক আসরেই নয় ম্যাচে তার শিকার গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ উইকেটে। বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিংয়ের দিনে বাবার মতো ৪ উইকেট পেয়েছিলেন বাস। এবারই বিশ্বমঞ্চে অভিষেক ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানে ৪ উইকেট নেন বাস। 

টিমের আগে বিশ্বকাপে কোনো ডাচ বোলারের ১০ উইকেট পর্যন্ত ছিল না। অথচ এবারই মোট চার বোলার শিকার করেছেন অন্তত ১০ উইকেট। বাস ছাড়া বাকিরা হলেন ১২ উইকেট করে নেওয়া লোগান ফন বিক ও পল ফন মিকেরেন এবং ১০ উইকেট নেওয়া আরিয়ান দত্ত।

২০২৩ বিশ্বকাপে পা রাখতে বাছাই পর্বে জিততেই হতো যে ম্যাচে, সেখানে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির সাথে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন বাস। দলকে বিশ্বকাপে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার পর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও বনে গেছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago