আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

তবুও ম্যাক্সওয়েলের মনে হচ্ছে, আরও ভালো হতো যদি...

যে অবস্থায় জয়ের কথা কল্পনাতেও আনা কঠিন ছিল, সেখান থেকে অতিমানবীয় এক ইনিংসে দলকে জেতালেন। শরীর বেঁকে বসলেও বিস্ময়কর সব শট খেলে ১২৮ বলে ২০১ রানে অপরাজিত থাকলেন। এর চাইতেও ভালো আর কিছু হতে পারে?

তবুও ম্যাক্সওয়েলের মনে হচ্ছে, আরও ভালো হতো যদি...

ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য জয়
ছবি: রয়টার্স

যে অবস্থায় জয়ের কথা কল্পনাতেও আনা কঠিন ছিল, সেখান থেকে অতিমানবীয় এক ইনিংসে দলকে জেতালেন। শরীর বেঁকে বসলেও বিস্ময়কর সব শট খেলে ১২৮ বলে ২০১ রানে অপরাজিত থাকলেন। এর চাইতেও ভালো আর কিছু হতে পারে? যাকে নিয়ে এত কথা, সেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলেরই মত, ইনিংসটা একদম নিখুঁত হলে আরও ভালো হতো!

মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অজিদের ৩ উইকেটের জয়ে একাদশে ফেরা ম্যাক্সওয়েল ছিলেন অনবদ্য। প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে ভাগ্যের সহায়তাও পান তিনি। বিধ্বংসী এই তারকার লোপ্পা ক্যাচ যখন উঠেছিল নূর আহমেদের বলে, শর্ট ফাইন লেগে থাকা মুজিব উর রহমানের হাত ফসকে তা বেরিয়ে গিয়েছিল। তখন ম্যাক্সওয়েলের রান ছিল কেবল ৩৩। এর আগে একই ওভারেই ২৭ রানে থাকা অবস্থায় তার বিপক্ষে এলবিডব্লিয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আঙুল তুলেছিলেন। পরে যদিও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।

মুজিবের ওই সহজ ক্যাচ মিসে পাওয়া জীবন কাজে লাগান দুর্দান্তভাবে। দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তোলার পাশাপাশি গড়েন একাধিক রেকর্ড। তারপরও অসাধারণ ইনিংসে একটু খুঁত খুঁজে পাচ্ছেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'দেখুন, এটা (ডাবল সেঞ্চুরি) যদি (আমাকে আউট করার) কোনো সুযোগ না দিয়ে হতো, তাহলে আরও ভালো হতো। আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম এবং আমি মনে করি, আমি সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, এর আগেও আমি এমন ইনিংস খেলেছি যেখানে জীবন পেয়েছি এবং সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারিনি। তাই আজকে রান তাড়া করে একপাশে অপরাজিত থাকতে পারা, এই ব্যাপারটায় আমি খুব গর্বিত।'

চতুর্থ উইকেটের পতনের পর নামা ম্যাক্সওয়েল সতীর্থদের একের পর এক আসা-যাওয়া দেখতে থাকেন। অষ্টম উইকেটে প্যাট কামিন্সের সঙ্গে যখন জুটি বাঁধেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার রান ৭ উইকেটে ৯১। এরপর শুরু করেন তাণ্ডব। রিভিউয়ের কল্যাণে পাওয়া সুযোগই তার ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরুর কারণ বলে জানান বিগ শো নামে পরিচিত এই ব্যাটার, 'আমার মনে হচ্ছিল, আমি যদি শুধু রক্ষণের চিন্তা করি, তারা (আফগানিস্তান) আমাকে চাপে ফেলতে সক্ষম হবে। ওই এলবিডব্লিউটা, যেটা স্টাম্পের উপর দিয়ে গেল, ওইটাই বোধহয় আমার চিন্তা বদলে দিতে দরকারি ছিল। আমি তখন নিজেকে বলি যে, আমার আরও কিছু শট খেলা শুরু করে দেওয়া দরকার এবং কিছুটা সক্রিয় হতে হবে।'

হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যায় শেষের দিকে তো কেবল এক পায়ে ভর করে শুধু হাতের জাদুই দেখান ম্যাক্সওয়েল। ওয়াংখেড়েতে 'ওয়ান ম্যান শো' চলাকালীন চরম ভোগান্তিতে ছিলেন তিনি, 'আসলে... অবশ্যই, বেশ গরম ছিল দিনের বেলা যখন আমরা ফিল্ডিংয়ে ছিলাম এবং আমি গরমের মধ্যে তীব্রতা নিয়ে তেমন একটা ব্যায়াম করিনি। সেটাই আজ আমায় ধরে ফেলে।'

ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে অন্যপ্রান্তে থাকা কামিন্স এমন পাগলাটে ইনিংস দেখতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। আর অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের মতো আফগান দলনেতা হাশমতউল্লাহ শহিদিকেও ঘিরে ধরেছে অবিশ্বাস!

'আমিও ছিলাম', কামিন্সের সেই অনুভূতিই হয়েছে, 'আমি জানি না, আপনি এটা কীভাবে ব্যাখা করতে পারেন! ম্যাক্সি (ম্যাক্সওয়েল) অপার্থিব ছিল। এটা সেরা ওয়ানডে ইনিংস হতেই হবে।'

'এটা এমন একটা দিন, যেখানে আপনার মনে হবে, "ওই ঘটনার সময় আমিও ছিলাম স্টেডিয়ামে।" আমরা এখানে থাকতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।'

দুইশ ছাড়ানো রানের জুটিতে ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে কী পরিকল্পনা হয়েছিল তা নিয়ে কামিন্স বলেন, 'আপনি শুধু ম্যাক্সিকে তার কাজ করতে দিবেন... মানে, আমি কীভাবে অমন একজনকে কিছু বলতে পারি? সে অসাধারণ ছিল। যখনই আপনি লক্ষ্য তাড়া করবেন, সব সময়ই তার কাছে পরিকল্পনা থাকে। এমনকি দুইশ রান দূরে থাকতেও সে ম্যাচ জেতার পথ খুঁজে বের করছিল।'

কামিন্সের ক্ষেত্রে যেখানে অবিশ্বাসকে ঘিরে ধরেছে মুগ্ধতা, সেখানে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শহিদির মুগ্ধতার সঙ্গে বিষাদও আছে সমান, 'আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য। আমরা খেলায় ছিলাম, আমাদের বোলাররা দারুণ শুরু করেছিল। কিন্তু দিনশেষে (ম্যাক্সওয়েলকে) জীবন দেওয়াটা আমাদের বেদনার কারণ হয়েছে। ওই যে আমরা সুযোগ হারালাম, এরপর ম্যাক্সওয়েল থামেননি। সে সব ধরনের শট খেলেছে এবং আমার তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago