আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

দাপুটে দক্ষিণ আফ্রিকায় মাথানত নিউজিল্যান্ডের বিশাল হার

১৯০ রানের বড় জয়ে প্রোটিয়ারা এখন সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

দাপুটে দক্ষিণ আফ্রিকায় মাথানত নিউজিল্যান্ডের বিশাল হার

ছবি: এএফপি

বড় পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার রেসিপিই যেন পেয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা! এবার তাদের শিকার নিউজিল্যান্ড। ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানের বিশাল সংগ্রহের পর বোলিংয়ে নামা প্রোটিয়ারা কিউইদের আটকে দিয়েছে ১৬৭ রানেই। ১৯০ রানের বড় জয়ে তারা এখন সাত ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। পয়েন্ট সমান হলেও নেট রান রেটের হিসাবে স্বাগতিক ভারতকে টপকে গেল তারা।

বুধবার পুনেতে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামা নিউজিল্যান্ডের মেরুদণ্ড শুরুতেই ভেঙে দেন প্রোটিয়া পেসাররা। মার্কো ইয়ানসেন ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন। সঙ্গে জেরাল্ড কোয়েটজি ১ ও কাগিসো রাবাদা নেন ২ উইকেট। শেষে কেশব মাহরাজ এসে বাঁহাতি স্পিনে ৪ উইকেট নিয়ে উৎসবে সামিল হন। এতে ১৯৯৯ সালের পর প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।

মাত্র তিন কিউই ব্যাটার দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেন। ৩৬তম ওভারেই অলআউট হয়ে যাওয়া দলটির এটি টানা তৃতীয় হার। এতে সাত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পথ কঠিন করে ফেলল তারা।

রান তাড়া করতে গিয়ে ইয়ানসেনের তোপের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় ওভারেই ডেভন কনওয়েকে এক অঙ্কেই ফিরিয়ে দেন ইয়ানসেন। তার অতিরিক্ত বাউন্সে লাফিয়ে ওঠা বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ২ রানেই ফিরে যান কনওয়ে। রাচিন রবীন্দ্রকেও বাউন্সারে ৯ রানেই ফাইন লেগে ক্যাচ বানিয়ে আউট করে দেন ইয়ানসেন। ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলা নিউজিল্যান্ড পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৫১ রানে।

একপাশে উইল ইয়াং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে যাচ্ছিলেন। কোয়েটজি এসে দুর্দান্ত লেংথ বলে তাকে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেলেন। ইয়ং আউট হন ৩৭ বলে ৫ চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে। অধিনায়ক টম ল্যাথাম রান করতে বেকায়দায় পড়ে যান কাগিসো রাবাদার বোলিংয়ে। ছন্দে থাকা রাবাদা পুরস্কারও পেয়ে যান পরে। ল্যাথাম ক্যাচ তুলে দেন কাভারের হাতে। ১৫ বলে ৪ রানের ইনিংসে যখন ল্যাথামের ভোগান্তি শেষ হয়, নিউজিল্যান্ড ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অসাধ্য সাধনের মুখে পড়ে যায়।

সেটা অসম্ভবের পর্যায়ে চলে আসে ১৯তম ওভারে ড্যারিল মিচেলও আউট হয়ে গেলে। মহারাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে যান মিচেল। ৩০ বলে ২৪ রানে থেমে যান এই ইনফর্ম ব্যাটার। ৯০ রানেই অর্ধেক উইকেট খুইয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।

৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়াটা তাই তাদের জন্য তখন কেবল লক্ষ্য তাড়াই থাকে না, নেট রান রেটের দেখভাল করার প্রয়োজনও চলে আসে। ওদিকে রাবাদার ঝাঁজ তখনও কমেনি। পরের ওভারে এসে মেডেন নিয়ে ঝাঁজাল বোলিংয়ে ছয় ওভারের স্পেল শেষ করেন মাত্র ১৬ রানে। 

নিউজিল্যান্ডকে মাথানত করার কাজে এরপর যোগ দেন স্পিনার মহারাজ। মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন এক অঙ্কেই। একশ পাড়ি দেওয়ার আগেই সপ্তম ষষ্ঠ উইকেট পড়ে যায় কিউইদের। ২০ রানে পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেল শেষ করা ইয়ানসেন এসে ফিরিয়ে দেন টিম সাউদিকেও। এরপর জিমি নিশামকেও মহারাজ দ্রুত বোল্ড করে দিলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা ১১০ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে।

একপাশে যাওয়া-আসার মিছিল দেখা গ্লেন ফিলিপস পরে তোলপাড় শুরু করেন। মহারাজকে দুই ছয় মারেন, সঙ্গে নিয়মিত চার বের করে ৪৬ বলে ফিফটির দেখা পেয়ে যান। শেষমেশ ইনিংসটাকে ৬০ রানের বড় করতে পারেননি। তবে চারটি করে ছক্কা ও চারে সাজানো সেই ইনিংসেই নিউজিল্যান্ড যেতে পারে ১৬৭ রান পর্যন্ত।

 

এর আগে টস জিতে বোলিং নিয়ে নিউজিল্যান্ড শুরু করেছিল দুর্দান্ত। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষে স্বস্তিতে থাকতে পারেনি দলটি।

প্রথম ৫ ওভারে ২২ রানের বেশি দেয়নি কিউইরা। নবম ওভারে টেম্বা বাভুমাকেও ফিরিয়েও দেয় তারা। ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ফিরে যান ২৮ বলে ২৪ রানে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে একপাশে কিউই বোলাররা বেঁধে রেখেছিলেন বিধ্বংসী ডি ককের ব্যাটের লাগাম। তবে ধীরগতিতে শুরু করা বাঁহাতি ওপেনারই পরে তাদের কাল হয়ে ওঠেন।

৬২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ডি কক। প্রথম ১০ ওভারে ৪৩ আনা দক্ষিণ আফ্রিকা ২১তম ওভারেই দলীয় শতরান পেরিয়ে যায়। আরেক প্রান্তে ফন ডার ডুসেনও শুরু করেছিলেন কিছুটা মন্থর গতিতে। তবে ফিফটি ছুঁতে বল নেন ৬১টি। ডি ককের সঙ্গে তার দ্বিতীয় উইকেট জুটিটা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে এরপর। ৩৬ ওভারেই দুইশ পেরিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ডি কক চলতি বিশ্বকাপের চতুর্থ শতক পেয়ে যান ১০৩ বলে।

সেই দলীয় ৩৮ রানে জুটি বাঁধা ডি কক ও ডুসেনের কাউকেই আউট করার পথ খুঁজে পাচ্ছিল না কিউইরা। নবম ওভারে অবশ্য ডি ককের আউট হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু টিম সাউদির বলে গ্লেন ফিলিপস দুরূহ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি। ডি কক তখন ছিলেন ব্যক্তিগত মাত্র ১২ রানে।

ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে প্রবেশের আগেই ডি কক-ডুসেনের জুটি দুইশ ছুঁয়ে ফেলে। কিন্তু ওখানেই থেকে ২৩৮ রানে ভেঙে যায় জুটিটি। ডি কক পয়েন্টে সাউদির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ১১৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলে। তার ইনিংসে ছিল ১০ চার ও ৩ ছক্কার মার।

নিউজিল্যান্ডের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেয় পেসার ম্যাট হেনরির চোট। নিজের ষষ্ঠ ওভার করার সময়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৫.৩ ওভার করে চলে যাওয়া হেনরির বোলিং কোটা পূর্ণ করতে চিন্তায় পড়তে হয় কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামকে। জিমি নিশাম ও ফিলিপসেই ভরসা রাখেন ল্যাথাম। তবে শেষ ১০ ওভারে চলে প্রোটিয়া ঝড়।

১০১ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছানো ডুসেন ১৩৩ রানে সাউদির বলে শেষমেশ বোল্ড হয়ে যান। ১১৮ বলের দুর্দান্ত ইনিংসে মারেন ৯ চার ও ৫ ছয়। চারে নামা ডেভিড মিলারও তাণ্ডব চালান। ২ চারের সাথে ৪ ছক্কায় ২৯ বলেই ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে আউট হয়ে যান মিলার। ৩০ বলে ৫৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

শেষ বলে এইডেন মার্করাম ক্রিজে এসেই ছক্কা মেরে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ আরেকটু বাড়িয়ে নেন। ৪ উইকেটে ৩৫৭ রানে থামে তারা। শেষ ১০ ওভারেই দলটি তোলে ফেলে ১১৯ রান। হেইনরিখ ক্লাসেন অপরাজিত থাকেন ৭ বলে ১৫ রানে।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

6h ago