বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ও মাহমুদউল্লাহর উদযাপন

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক সময় দলীয় সাফল্য আসার অবস্থা ছিল না, তখন ব্যক্তিগত যেকোনো অর্জনকে অনেক বড় করে দেখানো হতো। তখনকার বাস্তবতায় সেটাই হয়তো ছিল আদর্শ।  কিন্তু এই সময়ে এসে এই একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়া কতটা মানায়?

মুম্বাই থেকে

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ও মাহমুদউল্লাহর উদযাপন

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক সময় দলীয় সাফল্য আসার অবস্থা ছিল না, তখন ব্যক্তিগত যেকোনো অর্জনকে অনেক বড় করে দেখানো হতো। তখনকার বাস্তবতায় সেটাই হয়তো ছিল আদর্শ।  কিন্তু এই সময়ে এসে এই একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়া কতটা মানায়?

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার ম্যাচে বিশ্বকাপের সম্ভাবনাও কার্যত শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে সেটা ছাপিয়ে নিশ্চিত হারা অবস্থায় সেঞ্চুরির পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের লাফিয়ে করা উদযাপন উঠে এসেছে আলোচনায়। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে যুক্তি-তর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দলের বিশাল হারের মাঝে এমন উদযাপন মাননসই হলো তো?

সেমিফাইনালে খেলার আশা নিয়ে ভারতে এসেছিল সাকিব আল হাসানের দল। সেই বড় স্বপ্ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই বাস্তবতার বিচারে হাতছাড়া হয়ে গেছে। অথচ এমন দিনে কিনা ব্যক্তিগত অর্জন কেড়ে নিচ্ছে সব আলো! প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি ফিরে গেল সেই শুরুর দিনগুলোতে, যেখানে দলের হারের মাঝেও বড় হয়ে উঠত ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, তাতেই খুঁজতে হতো সান্ত্বনা?

একটা কথা আছে, 'ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ।' কিন্তু কথাটা বাংলাদেশের বাস্তবতায় ছাপার অক্ষরেই বোধহয় সীমাবদ্ধ। এখানে সব ক্ষেত্রেই চর্চাটা ঠিক উল্টো। ব্যক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত অর্জনও উদযাপন করার মতন বিষয়। কিন্তু সেটা দলের প্রেক্ষাপট ছাপিয়ে গেলে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিনা, এটাও প্রশ্ন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক সময় দলীয় সাফল্য আসার অবস্থা ছিল না, তখন ব্যক্তিগত যেকোনো অর্জনকে অনেক বড় করে দেখানো হতো। তখনকার বাস্তবতায় সেটাই হয়তো ছিল আদর্শ।  কিন্তু এই সময়ে এসে এই একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়া কতটা মানায়?

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৪৯ রানে হেরেছে। ওয়ানডে ম্যাচ ১৪৯ রানে হারা মানে রীতিমতো বিধ্বস্ত হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশ দলের কিছু ছবি বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এক ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে দলীয় ব্যর্থতা আড়াল পড়ে যাচ্ছে না তো?

মঙ্গলবার রাতে মুম্বাইর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৩৪ বলে জিততে তখন দরকার ১৬৯ রান! যেকোনো বাস্তবতায় অসম্ভব কাজ।  বিশাল হারের পথে থাকা ওই অবস্থায় মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দেন লাফ। হয়তো বিশ্বকাপের আগে বাদ পড়া নিয়ে খেদ ছিল তার মনে, উদযাপনে সেটা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু দলের হারতে থাকা অবস্থায় এই উদযাপন কি সবার ভালো লেগেছে? মাহমুদউল্লাহ হয়তো ব্যক্তিগত সাফল্যে উদ্বেল হতেই পারেন। কিন্তু গোটা দলও যেভাবে তার সেঞ্চুরি উদযাপন করছিল, তাতে বাংলাদেশের জেতার মানসিকতা কি একটু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি?

না, মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ৩৮৩ রান তাড়ায় ৪২ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর তিনি নেমেছিলেন, খানিক পর ৫৮ রানে পড়ে ৫ উইকেট। ১৫ ওভারের মধ্যে ম্যাচ জেতার সকল সম্ভাবনা থেকে সরে যায় বাংলাদেশ। ওই অবস্থায় থেকে দারুণ ব্যাট করেছেন। টেল এন্ডারদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। বিশ্বকাপে জায়গা ছিল তার অনিশ্চিত, সুতোর উপর ঝুলতে থাকা ক্যারিয়ারে এবার নেমেছিলেন প্রবল চাপ নিয়ে, তাতে দেখিয়েছেন মনোবল, দেখিয়েছেন তাড়নাও। ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিতে যোগ করেছেন একটি নতুন পালক। তাকে বাহবা দিতেই হবে। তার কাজটুকু তো তিনি করেছেন। কিন্তু এই অর্জনেই কি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবে বাংলাদেশ?

ক্রিকেটাররাই বলেন, দল না জিতলে সেঞ্চুরিও মূল্যহীন। আর দল জিতলে ২০ রানের ইনিংসও মূল্যবান। সেই কথাটা কতটা তারা ধারণ করেন, তা অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু দলীয় খেলায় দলের সাফল্য, ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে আর কোনো কিছু কি বড় হতে পারে?

২০১৯ বিশ্বকাপে ছয়শ ছাড়ানো রান করেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু দল তিন ম্যাচের বেশি জিততে পারেনি। এই বিশ্বকাপে তিন ম্যাচও জিততে পারবে কিনা তা নিয়ে এখন সংশয়। সেটা যদি না হয়, বাংলাদেশ সান্ত্বনা খুঁজবে কি দিয়ে? নিশ্চিত হারা ম্যাচে ব্যক্তিগত অর্জন যে আজকের দুনিয়ায় তেমন কেউ মনে রাখে না।

কুস্তির মতো ক্রিকেট খেলায় নিশ্চিত ফল দেখলে খেলা থামিয়ে একদলকে বিজয়ী করার রীতি নেই। নিশ্চিত ফল জেনেও তাই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। শত শত ক্রিকেট ম্যাচে এমন উদাহরণ আছে, যেখানে খেলার প্রায় অর্ধেক বাকি থাকতে কী হতে যাচ্ছে সব পরিষ্কার। এসব পরিস্থিতিতে কোনো কোনো পর্যায়ে জিততে থাকা দলের তীব্রতাও কিছুটা কমে আসে।

কিছু ইনিংস খেলাকে করে লম্বা কিন্তু ম্যাচে এর কোনো প্রভাব থাকে না। 'মান বাঁচানো' নামক এক শব্দে কেউ কেউ এসব পরিস্থিতিকে মহিমান্বিত করতে পারেন, কিন্তু স্মরণীয় করে রাখা মুশকিল। দলীয় খেলায় দলের ফলের বাইরে আর কোনো কিছু ছাপিয়ে উঠলে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সমীহটাও কি বাড়বে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও জরুরি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP places several demands to Yunus, including removal of 'one or two' members of interim govt

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir led the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

2h ago