আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ধর্মশালায় হেড-ওয়ার্নারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহ

তাসমান পাড়ের দুই দেশের লড়াইয়ের প্রথম অংশে স্রেফ তাণ্ডবই হলো।

ধর্মশালায় হেড-ওয়ার্নারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহ

অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড
ছবি: এএফপি

তাসমান পাড়ের দুই দেশের লড়াইয়ের প্রথম অংশে স্রেফ তাণ্ডবই হলো। ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেডের উদ্বোধনী জুটি ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ডের মাথাব্যথা ধরিয়ে দিলেন ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে। অনিয়মিত স্পিনার গ্লেন ফিলিপস তাদেরকে ফিরিয়ে মাঝে কিছুটা লাগাম টানতে পারলেন রানের চাকায়। তারপরও শেষের ঝড়ে প্রায় চারশ ছোঁয়া বিশাল পুঁজি পেল অস্ট্রেলিয়া।

শনিবার ধর্মশালায় বিশ্বকাপের ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪ বল বাকি থাকতে অলআউট হয়েছে অজিরা। তবে এর আগে স্কোরবোর্ডে তারা জমা করেছে ৩৮৮ রান। টসে জিতে আগে বোলিং নেওয়া কিউইরা কি ভাবতে পেরেছিল, তাদের উপর কী তাণ্ডবটা হতে চলেছে! চোট থেকে সেরে উঠে একাদশে ফিরেই হেড তোলেন ঝড়। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ওয়ার্নার।

ম্যাট হেনরির প্রথম ওভারে দুই চারে শুরু করেন ওয়ার্নার। পরের ওভারে এসে ডানহাতি এই পেসার করে বসেন দুই নো বল। ব্যস! হেডের হাত খুলে যায়। দুটিতেই ছক্কা মেরে পরে আতঙ্কে পরিণত হন তিনি। ফর্মে থাকা ওয়ার্নারও ছিলেন তার পুরো ছন্দে। আক্রমণের মন্ত্র জপে ভালো বলগুলোতে তো বাউন্ডারি বের করেনই, নিজেদের জায়গামতো পেলে আর ছাড়ই দেননি! একের পর এক বাউন্ডারিতে প্রতিপক্ষকে দিশেহারা বানিয়ে ফেলেন।

ইনিংসের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে চিন্তা করতে হচ্ছিল ডেথ ওভারের বোলিংয়ের মতো, রক্ষণেই মন দিতে হচ্ছিল। এমনকি হেডের ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে ঝুঁকিপূর্ণ শট রুখতে মিড অফের ফিল্ডার বাইরে রেখে বল করছিলেন বোল্ট। আগাম সতর্ক হয়ে ইয়র্কারের চেষ্টার সঙ্গে স্লোয়ার মিশিয়ে রক্ষণে সফলও হন এই বাঁহাতি পেসার। পাওয়ারপ্লেতে ৪ ওভার করে ৩০ রানের বেশি দেননি! হেনরির ৩ ওভারেই আসে ৪৪ রান। লোকি ফার্গুসন এসে ওয়ার্নারের হাতে মার খেয়ে বোলিং শুরু করেন ১৯ রানের ওভার দিয়ে। 

কোনোমতেই বাউন্ডারি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাচ্ছিল না নিউজিল্যান্ড। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ১২টি চারের সঙ্গে ১০টি ছয় মারেন দুই অজি ওপেনার। ৪.১ ওভারে পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া দলটি শতরান ছাড়িয়ে যায় ৮.৫ ওভারেই। সে ওভারেই ওয়ার্নার তার ফিফটি পেয়ে যান ২৮ বলে। এরপর হেডের ফিফটি আসে মাত্র ২৫ বলে! ১১৮ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করার পরও তাদের উড়ন্ত যাত্রায় গতি কমেনি।

শেষমেশ ফিলিপস এসে একটি বাউন্ডারি ছাড়া ওভার করতে পারেন। সেটি আসে ইনিংসের ১৩তম ওভার পরে। এরপর টানা আরও চার ওভার বাউন্ডারিবিহীন করতে পারে কিউইরা। আঁটসাঁট লেংথের সঙ্গে দারুণ নিয়ন্ত্রণে দুর্দান্ত বোলিং করেন ফিলিপস। এমনকি প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ ওভার করার সুযোগ হয় তার! টানা ১০ ওভারের সেই স্পেলে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান ফিলিপস। 

ফিরতি ক্যাচে ৬৫ বলে ৮১ রান করা ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে ফিলিপস ভাঙেন ১৭৫ রানের ঝড়ো জুটি। ৫ চার ও ৬ ছক্কার পর থামে ওয়ার্নারের ইনিংস। হেড এর আগেই আউট হতে পারতেন। ব্যক্তিগত ৭০ রানে থাকা অবস্থায় মিচেল স্যান্টনার ফিরতি কঠিন ক্যাচে হাতে জমাতে পারেননি বল। ৭৫ রানে থাকাকালে মিডউইকেটে ফিলিপসের হাত ফসকে বেরিয়ে যায় হেডের দ্রুতগতির শট।

জীবন পেয়ে মাত্র ৫৯ বলেই সেঞ্চুরি হাঁকান বাঁহাতি হেড। তাকেও থামিয়ে দেন ফিলিপস। ১০ চার ও ৭ ছক্কার সাহায্যে ৬৭ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে হেড হন বোল্ড। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে কিউইরা পাল্টা আক্রমণ করে অজিদের। মিচেল মার্শ স্পিনের বিপরীতে স্ট্রাইক বদলাতেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। অন্যপাশে, স্টিভেন স্মিথ ঝুঁকি নিয়ে মিডঅফের উপর দিয়ে খেলতে গেলে কাটা পড়েন আগেভাগে।

মারনাস লাবুশেন এসে ব্যক্তিগত ১ রানেই দিয়ে ফেলেন ক্যাচ। থার্ডম্যানে সেটি ড্যারিল মিচেল ফেলে দিলেও পরে স্মিথের মতোই ১৮ রানেই থেমে যায় লাবুশেনের ইনিংস। তার আগে মার্শের মন্থর ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে স্যান্টনারের বলে বোল্ড হয়ে। ৫১ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে তিনি মারেন মাত্র ২ চার।

বড় কোনো জুটি গড়তে না পেরে মাঝের ৯৯ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে অজিরা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে এরপর ঝড় তোলেন আবার। নিউজিল্যান্ডের লাগাম হয়ে যায় আলগা। তরতর করে বাড়তে থাকে অজিদের রান। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন আগের ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল।

ব্যথায় ফার্গুসনের শেষদিকে বোলিং করতে না পারা নিউজিল্যান্ডের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দেয়। ম্যাক্সওয়েলের পর রান উৎসবে সামিল হন জশ ইংলিস ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কামিন্স তো ১৪ বলেই মারেন ৪ ছক্কা ও ২ চার। ৩৭ রানের ক্যামিও খেলে ফেরার পর ইংলিসও চলে যান ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে।

ইংলিসের পর একই ওভারে বোল্ট ফিরিয়ে দেন অ্যাডাম জ্যাম্পাকেও। শেষ ওভারে মিচেল স্টার্কও আউট হয়ে গেলে চার বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে অস্ট্রেলিয়া। ২৩ ওভারে দুইশ ছুঁয়ে ফেলা অজিরা তাই থামে ৩৮৮ রানে। ফিলিপস ১০ ওভারে ৩৭ রানে নেন ৩ উইকেট। সমান উইকেট নিতে বোল্টের খরচা ১০ ওভারে ৭৭ রান।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

4h ago