আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

নতুন করে ‘পুরনো’ ব্যাধিতে আক্রান্ত বাংলাদেশ

চলতি বছর বাংলাদেশ ২১ বার ব্যাটিং করেছে, এর মধ্যে অলআউট হয়ে গেছে ১১ ইনিংসেই।

নতুন করে ‘পুরনো’ ব্যাধিতে আক্রান্ত বাংলাদেশ

ছবি: এএফপি

আধুনিক ক্রিকেটের যুগে ওয়ানডেতেও দলগুলোর ভাবনায় থাকে শুধু রান। আরও দ্রুতগতিতে রান তোলা। উইকেটের কথা ভাবার সময় আছে নাকি! কিন্ত বাংলাদেশ তাল মিলিয়ে চলতে পারছে কই! অলআউট না হয়ে পুরো ওভার খেলি— আগেকার দিনে যেমন এরকম হতো, সেরকম চিন্তার আর সুযোগই নেই। কিন্তু বাংলাদেশ দল এখন নিজেদের সে অবস্থানেই পাচ্ছে। পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলাটাই যে এখন তাদের জন্য মুশকিল হয়ে উঠছে!

চলতি বছর বাংলাদেশ ২১ বার ব্যাটিং করেছে, এর মধ্যে অলআউট হয়ে গেছে ১১ ইনিংসেই। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশের বেশি ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতেই পারেনি পুরো ওভার! এই ব্যর্থতার আকার কেমন, ধারণা মিলবে আগের বছরগুলোর দিকে তাকালে। অলআউট হওয়ার শতকরা হিসাবে গেলে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা ছিল মাত্র ১৩.৩৩ শতাংশ। এর আগের দুই বছরে ছিল সমান ৩৩.৩৩ শতাংশ করে। ২০১৯ সালে ১৮ ইনিংসে ৯ বার অলআউট হওয়ায় তা ৫০ শতাংশ হয়েছিল। আগের দুই বছরেই যদিও শতকরা হিসাব থেকেছিল ৩৫ শতাংশের নিচে। 

২০২৩ সালের চেয়ে বেশি, অলআউট হওয়ার এমন শতকরা হার খুঁজতে গেলে যেতে হয় একেবারে ২০১৬ সালে। ওই বছর ৯ ম্যাচে ৫ বারই সবকটি উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগের সাত বছরের মধ্যে একবার বাদে সবকটি সালেই শতকরা হার ছিল ৩৫ এর নিচে।

আরও সহজ করে বললে, কমপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ যেসব বছরে, তার মধ্যে চলতি বছরের চেয়ে অলআউট হওয়ার শতকরা হার বেশি ছিল সবশেষ সেই ২০০৮ সালে। ওই বছর ২৬ ইনিংসে ব্যাট করে ১৫টিতেই অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।

সব মিলিয়ে ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৮, ২০১৬, ২০১৯ এবং এই বছর— অর্থাৎ ২০২৩ সালেই অন্তত শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ম্যাচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।

যেখানে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ঘিরে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন অনেক ক্রিকেটপ্রেমী, সেখানে চিত্র যেন সেই আগেকার দিনের মতোই। চলতি বছর প্রতি উইকেটে গড় রান তুলেছে ২৭.৮৬। প্রতি উইকেটে গড় রান ত্রিশের নিচে থেকেছে সবশেষ কোন সালে, জানেন? ২০১৬ সালে। সেই বছর বাংলাদেশ খেলেছিল ৯টি ম্যাচ। কমপক্ষে ১০ ম্যাচ ধরলে ত্রিশের নিচে গড় পেতে ফিরে যেতে হয় ২০১৪ সালে। এরপর সবকটি বছরেই উইকেটপ্রতি গড় রান ত্রিশের উপরে এসেছে।

অলআউট হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন যদি করা হয়? ব্যাটিংয়ে দুর্বলতা, এই সহজ-সরল উত্তরের চেয়ে উপযুক্ত আর কোনো উত্তর আছে নাকি! তবে অলআউট হওয়া ইনিংসগুলোতে একটা ধারার খোঁজ পাওয়া গেছে। সেটাও আপনার কাছে অপরিচিত নয়, দেখতে দেখতে বরং অভ্যস্তই। ব্যাটিং ধস, একের পর এক উইকেট হারিয়ে ফেলা। ২০২৩ সালে অলআউট হওয়া ১১ ইনিংসের সাতটিতেই ধস ঘটেছে শুরুতেই।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২/১৭, ৪/৪৯, ৩/৯; পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪/৪৭, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩/২৫, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩/৩৫— দশ ওভারের আগেই ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছিল এমন। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ১০.৪ ওভারে ছিল ৩/৩৬।

এর বাইরে যেসব ম্যাচ, সেখানে পাওয়ার প্লেতে না ঘটলেও পরে নেমেছে ধস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে ২৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। ১৫৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৮২ রানে পরিণত হয়েছিল অল্প সময়েই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে ২৮ রানেই ৪ উইকেট খুইয়েছিল তারা। ১ উইকেটে ৫৫ থেকে ৪ উইকেটে ৮৩ রানে পরিণত হয়েছিল। বিশ্বকাপের আগের সিরিজেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২ রানে ৪ উইকেট চলে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ৬০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ৯২ রানে পঞ্চম উইকেট শেষ। 

একটি ম্যাচকে শুধু এভাবে ধসের আদলে ফেলা যায় না। নইলে যে ১১ ইনিংসে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে ১০টিতেই শুরুতে হোক আর মাঝে, ধস হয়েছেই। অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ফেললে স্বভাবতই যে কোনো দল পিছিয়ে পড়বে অনেকটাই। সেখান থেকে উদ্ধারে কেউ একজন বড় ইনিংস খেলে ফেলবেন, এমনটাও দেখা যায়নি আসলে। ওই অলআউট হওয়া ইনিংসগুলোর একটিতেও কোনো ব্যাটার সেঞ্চুরি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস এসেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। 

বোলিং সহায়ক উইকেটে খেলেছে বলে ব্যাটিংয়ের এই করুণ দশা, সেটা বলারও সুযোগ কই! লাহোর, চেমসফোর্ড, চট্টগ্রাম, ধর্মশালা, মিরপুর— সবখানেই ব্যর্থতার চাদরে মোড়া ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রতিপক্ষই তো সেসব ম্যাচে বড় স্কোর করে দেখিয়ে দিয়েছে, পিচ মূল কারণ নয়, বাংলাদেশ ব্যাটিংয়েই ব্যর্থ হচ্ছে চরমভাবে।

অলআউট হওয়ার এই যে বেহাল চিত্র, সেটা পাল্টাতে তবে কী বাংলাদেশ নির্ধারিত সব ওভার খেলার চিন্তা নিয়েই মাঠে নামবে? নিশ্চয়ই না। এটা তো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের রুগ্ন দশাটাই প্রকাশ করছে কেবল। তাই ব্যাটিংয়ে সফলতার সূর্যের তাপ গায়ে লাগাতে পারলেই হবে। তখন অলআউট ব্যাধিও তখন দূরে পালাবে! 

কিন্ত সেই প্রত্যাশাই যে পূরণ হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের অলআউট ব্যাধি অনুভূত হচ্ছে আরও বেশি করে।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago