আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

রোহিত রাজত্বে ভারতের বিশাল জয়

স্রেফ অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে আফগানদের চোখেমুখে

রোহিত রাজত্বে ভারতের বিশাল জয়

স্রেফ অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে আফগানদের চোখেমুখে
রোহিতের ব্যাটে ভারতের বিশাল জয়

যেদিন রোহিত শর্মার, সেদিন বোলারদের কপালে দুর্দিনই লেখা থাকে! আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা রোহিতকে দেখেছে দিল্লি। আর স্রেফ অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে আফগানদের চোখেমুখে। রোহিত খেলেছেন ৮৪ বলে ১৩১ রানের ইনিংস, যা আফগানিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় ইনিংসের অর্ধেক শেষ হওয়ার আগেই।

রোহিতের ব্যাটে আফগানিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্য হেসেখেলেই তাড়া করেছে ভারত। জয় পেয়েছে তারা ৮ উইকেটে। ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছেন রোহিত। আগে যে রেকর্ড ছিল কপিল দেবের, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলার পথে কপিল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৭২ বলে।

রোহিত শুরুটা করেছেন স্বাভাবিকভাবেই, এরপর পঞ্চম ওভারে ফারুকিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মেরে রোহিত রাজত্বের শুরু। ফারুকি-নাভিনদের গায়ে ভালোভাবেই চাপ লেগেছিল। স্লোয়ার, অ্যাঙ্গেল চেঞ্জ, ভিন্ন জিনিষ চেষ্টা করতে গিয়ে লেংথ-লাইন মিস করেছেন। রোহিত মায়াবী সব শটে একের পর এক বাউন্ডারি মেরেছেন। ৩০ বলে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ফিফটি। পাওয়ারপ্লে শেষ করেন ৪৩ বলে ৭৬ রানে থেকে। ভারতের সংগ্রহ তখন ৯৪। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে যদিও একটা সুযোগ পেয়েছিল আফগানিস্তান, মুজিবের বলে মিসটাইমিংয়ে বল আকাশে তুলেছিলেন ৭১ রানে থাকা রোহিত, কিন্ত আফগান দুই ফিল্ডার লং অনে বলের কাছে পোঁছাতে পারেননি সময়মতো।

অপর প্রান্তে থাকা ইশান কিশান পাওয়ারপ্লেতে ১৭ বল খেলে ১১ রানে ছিলেন। নবম বলে গিয়ে প্রথম রান করা কিশান নড়বড়ে শুরুর পর ডানা মেলেন, চড়াও হন নাবির উপর। এত ঝড়ের মাঝে রশিদ খানকে অধিনায়ক শহিদি ১৫তম ওভারের আগে বোলিংয়ে আনেননি। রশিদ এসে রানের স্রোত আটকাতে পারেন কিছুটা। তবে বেশিক্ষণ লাগেনি, ১৮তম ওভারেই রোহিত সেঞ্চুরি পেয়ে যান

ইশান কিশান ওদিকে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার আগেই আউট হয়ে যান। ৪৭ বলে ৪৭ রান করেন ৫টি চার ও দুটি ছক্কা মেরে। কিশান আউট হলেও রোহিতের ছন্দে ছেদ পড়েনি একটুও! চার, চার, ছয়- টানা তিন বলে যখন রোহিত বাউন্ডারি মারলেন, বোলারের পাশে জড়ো হলেন তিনজন, সেই বোলারের নাম রশিদ খান। এই দৃশ্যটাই তো ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়, আফগানদের করুণ দশার কথা! রশিদেরও রেহাই মিলেনি, প্রথম তিন ওভারে ১৪ রান দিয়ে পরের দুই ওভারেই রশিদ দেন ২৫ রান। ২৪ ওভার দুই বলেই দুইশ ছাড়িয়ে যায় ভারত। তবে ২০৫ রানেই থেমে যায় রোহিত রাজত্ব, রশিদকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে তিনি ফিরে যান। ৮৪ বলে ১৩১ রানের ইনিংসে মারেন ১৬টি চার ও ৫টি ছক্কা। রোহিত ফেরার পর কোহলি এসে সহজাত খেলাটাই খেলেন। ৫৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করে ৫৫ রানেই অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন যখন, তখনও বাকি ১৫ ওভার।

টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া আফগানিস্তানের পুঁজিটা এত সহজেই পেরিয়ে গিয়েছিল ভারত। বুমরাহ বাধা টপকাতে পারেনি আফগানরা। ৩৯ রানে চার উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে নিজের সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পেয়েছিলেন বুমরাহ। শুরুর মুভেমেন্টে কঠিন সময় আফগানরা কাটিয়ে দিয়ে ৬ ওভার শেষ করে ২৮ রানে। কিন্ত পরের ওভারে এসেই ইব্রাহিম জাদরানকে কিপারে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন বুমরাহ। ৪টি চারের মারে ইব্রাহিম খেলেন ২২ রানের ইনিংস।

গুরবাজের ব্যাটে পরে আফগানিস্তান পাওয়ারপ্লে শেষ করতে পারে ৪৮ রানে। যদিও কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। ১৩তম ওভারে হার্দিকের বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে ২১ রানেই ফিরে যান গুরবাজ। পরের ওভারে শার্দুলের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে একই পথ ধরেন রহমত শাহ। ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা আফগানদের বিপদ কাটানোর চেষ্টা, শহিদি ও ওমরজাই মিলে করেন দেখেশুনে। সতর্কভাবে খেলে স্ট্রাইক বদল মনোযোগ ছিল এই দুজনের, কিন্ত কুলদীপ ও জাদেজার আঁটসাঁট বোলিংয়ে তা করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। মন্থরগতিতে চলা তাদের ইনিংসে ২৫ ওভার শেষে রান উঠে ১১৪। ওমরজাই গিয়ার পাল্টে কুলদীপ ও জাদেজাকে তিন ছয়ে হাঁকান। শহিদিও সিরাজের ওভারে দুই চার মারলে আফগানরা ত্রিশ ওভার শেষ করে ১৪৭ রানে।

এরপর শহিদি ও ওমরজাই দুজনেই আগ্রাসী রুপ ধারণ করেন, কিন্ত হার্দিক পান্ডিয়া এসে ৬৯ বলে ৬২ রানে থামিয়ে দেন ওমরজাইয়ের আগ্রাসন। নাবি এসে শুরুতে ভুগেছেন ভালোই, তবে অপর প্রান্তে শহিদি তখন হাত খুলতে শুরু করেছেন। চল্লিশ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান হয় ২১১।

ডেথে এসেই পরে গড়বড় বাধে। কুলদীপের বলে এলবিডাব্লিউর শিকার বনে ৮৮ বলে ৮০ রানেই আউট হয়ে যান শহিদি। পরে বুমরাহর এক ওভারেই পরপর দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা, স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে নাজিবুল্লাহ, এলবিডাব্লিউ হয়ে নাবি আউট হন। ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বড় পুঁজির আশা কমতে থাকে আফগানিস্তানের। দিন খারাপ ছিল সিরাজের, তার উপর চড়াও হয়ে রশিদ ও মুজিব সে আশার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্ত আবার বুমরাহ তাদের পথে বাধা হয়ে প্রকট হন! ১৬ রানে ফিরিয়ে দেন রশিদ খানকে। নাভিন ও মুজিবের ছোট্ট ক্যামিওতে স্কোরটা আরেকটু বড় হয়। তবে ২২৪ রানে ৪ উইকেট থেকে দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে ফেলায় তা ২৭২ রানের বেশি হয়নি। যা ভারত ছেলেখেলা বানিয়ে জিতেছে ৮ উইকেটে।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

7h ago