টপলির তোপে শুরুতেই এলোমেলো বাংলাদেশ
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের একাদশে ছিলেন না রিস টপলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে মঈন আলিকে বাইরে রেখে জায়গা দেওয়া হয়েছে তাকে। আর সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন এই বাঁহাতি পেসার। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই ধরলেন জোড়া শিকার। পরপর দুই বলে তিনি সাজঘরে ফেরালেন তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। এরপর সাকিব আল হাসানকেও টিকতে দিলেন না।
মঙ্গলবার ভারতের ধর্মশালায় ইংলিশদের ছুঁড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় মহাবিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে, ১০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৫৭ রান। ক্রিজে আছেন ওপেনার লিটন দাস ৩৫ বলে ৪৪ রানে। তাকে দেখাচ্ছে সাবলীল। বাহারি শটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। তার সঙ্গী অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম খেলছেন ৬ বলে ১ রানে।
বাংলাদেশের দরকার ছিল মজবুত ভিত, ভালো একটি উদ্বোধনী জুটি। কিন্তু সম্ভাব্য সবচেয়ে বাজে শুরুই হয় টাইগারদের। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে তানজিদ ক্যাচ দেন স্লিপে। পরের বলেই ছন্দে থাকা শান্ত পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
প্রথম ওভারে ডানহাতি পেসার ক্রিস ওকসকে টানা তিনটি মারেন লিটন। তবে এই আনন্দের ব্যাপ্তি স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন টপলি। জায়গায় দাঁড়িয়ে ঠিকমতো খেলতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার তানজিদ। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে জনি বেয়ারস্টোর হাতে। ২ বলে তার রান ১। পরের বলেই বড় শিকারের উল্লাসে মাতে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ড্রাইভ করার চেষ্টায় লিয়াম লিভিংস্টোনের তালুবন্দি হন শান্ত। গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ জোটে তার।
১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন ছিল প্রতিরোধ গড়ার। কিন্তু সপ্তম ওভারে সাকিব বোল্ড হন টপলির অসাধারণ একটি ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পে পিচ করে সোজা যাওয়া বল বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট এড়িয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ৯ বলে ১ রান করেন সাকিব। বিপদ আরও বাড়িয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ওকসের বলে ইংলিশ দলনেতা ও উইকেটরক্ষক জস বাটলারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন তিনি। আগের ম্যাচে তিনে খেলা মিরাজ এদিন পাঁচে নেমে ৭ বলে ৮ রান করেন। ফলে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের বিরাট পুঁজি পেয়েছে বাটলারের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড। এতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ পেয়েছে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে তাদের, গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের দখলে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ রান তাড়া করে জিতেছিল তাড়া।
হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস। এর সঙ্গে যোগ হয় বাংলাদেশের হতাশাজনক বোলিং ও ফিল্ডিং। শেষদিকে অবশ্য বোলাররা ঘুরে দাঁড়ান। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৬ রান তুলতে ইংলিশরা হারায় ৬ উইকেট। নইলে তাদের সংগ্রহ চারশ ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল ইনিংসের অনেকটা সময় জুড়ে।
আগ্রাসী সেঞ্চুরি হাঁকানো ডাভিড মালান ওপেনিংয়ে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ১১৫ ও দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে ১৫১ রানের জুটি গড়েন। এরপর আর কোনো জুটি ত্রিশের বেশি এগোতে পারেনি। মালান ১০৭ বলে ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১৪০ রান করেন। রুট ৬৮ বলে খেলেন ৮২ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ চার ও ১ ছক্কা। বেয়ারস্টো ৮ চারে ৫৯ বলে করেন ৫২ রান।
একাদশে ঢোকা অফ স্পিনার শেখ মেহেদী বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। তবে ৮ ওভারে তিনি দেন ৭১ রান। ১০ ওভারে ৭৫ রানের বিনিময়ে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের শিকার ৩ উইকেট। বাংলাদেশের ব্যবহার করা ছয় বোলারের মধ্যে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দেন কেবল সাকিব। ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে তিনি পান ১ উইকেট।
Comments