রোনালদোর রেকর্ডের ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে জর্জিয়ার ইতিহাস
বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মিলিয়ে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। কিন্তু তার রেকর্ডের রাতে অঘটনের শিকার হলো শক্তিশালী পর্তুগাল। স্মরণীয় পারফরম্যান্সে র্যাঙ্কিংয়ে ৬৮ ধাপ পিছিয়ে থাকা জর্জিয়া তুলে নিল ইতিহাসগড়া জয়। প্রথমবারের মতো ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসরে খেলতে আসা দলটি নাম লেখাল নকআউট পর্বে।
বুধবার রাতে জার্মানির গেলসেনকিরচেনে ২০২৪ ইউরোর 'এফ' গ্রুপের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে জর্জিয়া। দুই অর্ধে একটি করে গোল করে তারা। এই লড়াইয়ে পূর্ণ পয়েন্ট আদায় করার মাধ্যমে প্রথমবার কোনো বড় আসরে খেলতে এসেই গ্রুপ পর্বের বাধা পাড়ি দিল দলটি।
আগেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করা পর্তুগিজরা খেলতে নামে একাদশে আট পরিবর্তন নিয়ে। কিন্তু প্রথমার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই 'কাভারাডোনা' খ্যাত উইঙ্গার খিচা কাভারাস্কেলিয়ার গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। সমতায় ফিরতে এরপর আক্রমণের বন্যা বইয়ে দেয় দলটি। তবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৭৪ নম্বরে থাকা জর্জিয়াকে টলানো যায়নি। রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণনির্ভর কৌশল বেছে নেয় তারা। সুফলও মেলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে। কাভারাস্কেলিয়াকে অ্যাসিস্ট করার পর ৫৭তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজেই জাল কাঁপান স্ট্রাইকার গিওর্গেস মিকাওতাদজে। ৩ গোল নিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষে তিনিই এককভাবে চলতি ইউরোর শীর্ষ গোলদাতা।
বাকিটা সময় লিড ধরে রাখা জর্জিয়ার সামনে যেমন ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ আসে, তেমনি পর্তুগালও একাধিক সম্ভাবনা তৈরি করে গোলের জন্য। কিন্তু বল আর জালে জড়ায়নি। গোলমুখে পর্তুগিজদের নেওয়া ২২টি শটের মধ্যে পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, জর্জিয়ানরা সাতটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে রাখে তিনটি। তাদের গোলরক্ষক গিওর্গি মামারদাশভিলিও দেখান অসাধারণ নৈপুণ্য। তিনি মোট পাঁচটি সেভ করে জাল রাখেন অক্ষত।
বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে পর্তুগালের হয়ে গোল করার সুযোগ আসে রোনালদো, জোয়াও ফেলিক্স, জোয়াও পালহিনহা, দিয়েগো দালত ও দিয়েগো জোতার সামনে। কিন্তু কেউই পারেননি সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে। আর কোচ রবার্তো মার্তিনেজের দলের হজম করা গোলের দুটিতেই দায় আছে ডিফেন্ডার আন্তোনিও সিলভার। তার ভুলেই পাওয়া বল থেকে আক্রমণে উঠে এগিয়ে যায় জর্জিয়া। এরপর ডি-বক্সে তিনি লুকা লোকোশভিলিকে ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।
শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে জর্জিয়া নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জনের উল্লাসে মাতোয়ারা হলে ম্লান হয়ে যায় রোনালদোর রেকর্ডের রাত। বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলা পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের ইউরোতে এটি ছিল ২৮তম ম্যাচ। সব বড় আসর মিলিয়ে ম্যাচের 'হাফসেঞ্চুরি' নেই আর কোনো ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়ের। ১৪ গোল নিয়ে ইউরোর ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো অবশ্য চলমান আসরে এখনও গোলের খাতা খুলতে পারেননি।
তুরস্কের কাছে হারের পর আগের ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ড্র করা জর্জিয়া গ্রুপ পর্ব শেষ করল ৪ পয়েন্ট নিয়ে। এবারের ইউরোর ছয়টি গ্রুপের তৃতীয় হওয়া দলগুলোর মধ্যে শীর্ষ চারটির একটি হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট পেল তারা। ২০১৬ আসরের চ্যম্পিয়ন পর্তুগালের নামের পাশে ৬ পয়েন্ট। তাদের সমান পয়েন্ট পেয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকা তুরস্ক গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে নকআউট পর্বে উঠল। একই সময়ে হামবুর্গে শুরু হওয়া 'এফ' গ্রুপের আরেক ম্যাচে তারা চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। স্রেফ ১ পয়েন্ট পেয়ে বিদায় নিল চেকরা।
Comments