আমি যেখানেই খেলি দলের জন্য খেলি: রনি
২০১৪-১৫ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন রনি তালুকদার। কিন্তু সেভাবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ মেলেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই থেমে আছে তার ক্যারিয়ার। পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে বাদ পড়ার প্রায় ৮ বছর পর বিপিএল মাতিয়ে আবার তিনি ফিরেছেন জাতীয় দলে। ৩২ পেরুনো এই ডানহাতি ব্যাটার দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন নিজের প্রতিক্রিয়া।
২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ সফরে টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন রনি। মিরপুরে অভিষেক হয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। এমনিতে টপ অর্ডার ব্যাটার রনি সেদিন নামতে পেরেছিল সাত নম্বরে। ২২ বলে এক ছক্কায় ২১ রানে আউট হওয়ার পর আর এগুতে পারেনি। পাকিস্তান সিরিজে ওয়ানডে দলে থাকলেও পরে কোন স্কোয়াডেই আর জায়গা হয়নি।
গত কয়েক বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টিতে রনিকে দেখা গেছে ঝলক দেখাতে। ওপেন করতে নেমে প্রতি বিপিএলেই কিছু ঝড়ো ইনিংস খেলতেন। কিন্তু ধারাবাহিকতার ঘাটতি তাকে সামনে তুলে আনতে পারছিল না। এবার বিপিএলে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় ঘুচিয়েছেন নিজের দুর্নাম। ১৩ ম্যাচে ৩৫.৪১ গড় আর ১২৯.১৭ স্ট্রাইকরেটে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান করেছেন তিনি। রংপুর রাইডার্সের প্লে অফ খেলায় ছিল তার বড় অবদান। এমন পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন হয়েছে দল নির্বাচনে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পড়েছে তার।
প্রায় ৮ বছর পর ফেরার অনুভূতি
রনি তালুকদার: খুবই ভালো লাগছে। এত বছর পর যে আমাকে সুযোগ দিয়েছে, ভালো খেলার মূল্যায়ন করেছে উনারা, তাতে আমি কৃতজ্ঞ।
২০১৫ সালে বাদ পড়ার পর আড়ালে পড়ে গিয়েছিলেন, জাতীয় দল পর্যায়ে আবার ফেরার আশা ছিল?
রনি: আমি সব সময় লক্ষ্য নিয়েই ছিলাম। জীবনে লক্ষ্য না থাকলে তো কোন কিছু ভালো লাগবে না। আমি যদি ফিট থাকি, আমার বয়স কত? ৩২...তাহলে কেন চেষ্টা করব না? আমি সব সময় ওটাই মাথায় ছিল যে আমি যদি ভালো খেলি সুযোগ আসবেই। সিনিয়র খেলোয়াড়রাও বলত, 'তুই যদি ভালো খেলিস, তোকে সুযোগ দেয়া হবে। স্রেফ ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে হবে।' সিনিয়র খেলোয়াড়, কোচ সবাই উৎসাহ দিত। তাই স্বপ্ন আমি অবশ্যই দেখতাম।
বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারশোর বেশি রান করেছেন। প্রস্তুতিটা কেমন ছিল?
রনি: আগে বেশিরভাগ শট আমি উপর দিয়ে খেলতাম। সব বলই তুলে মারতে চাইতাম। এবার বিপিএলে আগে ইমরান স্যারের (সারোয়ার ইমরান) সঙ্গে অনুশীলন করেছি। উনার কাছে ব্যাটিং ভিডিওগুলো পাঠাতাম। এটা নিয়ে উনার সঙ্গে অনেক কথা হচ্ছিল। সব বল উপরে না মেরে নিচেও মেরে যে রান করা যায় এটা বুঝেছি। কারণ আমি তো পাওয়ার প্লেতে খেলি। বল যদি ভালোভাবে টাইমিং করা যায় তাহলে সেটা বেরিয়ে যাবে (বাউন্ডারির দিকে)। এবার ফোকাস, মাইন্ড সেটআপ, প্ল্যানিং সব ঠিক রেখেছিলাম। সব কিছু মিলিয়ে কাজ করেছি।
জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার চেয়েও ধরে রাখা নিশ্চয়ই কঠিন
রনি: যেকোনো পর্যায়েই নিজের অবস্থান ধরে রাখার একমাত্র উপায় পারফরম্যান্স। সেটা ক্লাব পর্যায়ে হলেও। খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে পারফর্ম করতেই হবে। দেখেছেন আমি বিপিএল হোক, প্রিমিয়ার লিগ হোক যেখানেই খেলি দলের জন্য খেলি। আমি পারফর্ম করে যেন দল জেতাতে পারি, এটা আমার প্রথম উদ্দেশ থাকে। আমি রান করলাম, পারফর্ম করলাম আমার দল হেরে গেল-এটা আমি কখনই চাইনি, এটা আমার ভালোও লাগে না। আমি রান করব যেন দল জেতে সেটা ১০ রান হোক, ৫০ রান হোক বা ১০০ রান। পারফর্ম করে টিকে থাকতে হবে এটা আমি জানি। এজন্য পরিশ্রম করতে হবে, আরো ফিট হতে হবে।
বয়স ৩০ পার হওয়ার পরও এখন জাতীয় দলে ফেরা যাচ্ছে। আগে যেটা দেখা যেত না। সবার জন্য প্রেরণা কিনা
রনি: সেটা তো অবশ্যই। নির্বাচকরা আমাদের সেই বার্তাই দিচ্ছেন। সেটা তো উনারা সব সময় বলে এসেছেন। পারফর্ম করলে বয়স কোন ব্যাপার না। সুযোগ দিবেন।
Comments