টাকারের চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরিতে আয়ারল্যান্ডের দুর্দান্ত দিন
তৃতীয় দিন সকালের সেশনে টেস্ট শেষ করার আভাস ছিল, বাংলাদেশের সমর্থকরাও ছিলেন সেই আশায়। কিন্তু দুর্দান্ত প্রতিরোধের গল্প লিখে খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করল আয়ারল্যান্ড। লরকান টাকার করলেন চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি। হ্যারি টেক্টর, অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন খেললেন ফিফটি ছাড়ানো দারুণ দুই ইনিংস। সাকিব আল হাসানদের হতাশায় পুড়িয়ে পুরো দিন টিকে গেল আইরিশরা।
দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে ৭ম ওভারে ১৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ওই অবস্থা থেকে একশো ওভারের বেশি ব্যাট করে ফেলল তারা। বৃহস্পতিবার মিরপুরে একমাত্র টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ১০৭ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮৬ রান উঠেছে আইরিশদের বোর্ডে। হাতে দুই উইকেট রেখে স্বাগতিকদের থেকে ১৩১ রানে এগিয়ে গেল অ্যান্ড্রু বালবার্নির দল।
দলকে এমন আলো ঝলমলে দিন এনে দেওয়ার মূল কারিগর কিপার ব্যাটার টাকার। পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন কেভিন ও'ব্রায়েন। টাকারের মাধ্যমে আইরিশরা নিজেদের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান পেয়ে গেল চতুর্থ টেস্টে এসে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দলের প্রবল চাপে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে নিজেকে রাঙিয়েছেন টাকার। ১৬২ বলে সর্বোচ্চ ১০৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
১৪৩ বলে ৭১ করে অপরাজিত আছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার ম্যাকব্রেইন। তার সঙ্গে ৯ রান করে ক্রিজে আছেন গ্রাহাম হিউম।
চা-বিরতির পর ৬ উইকেটে ১৯৯ রান নিয়ে নামে আয়ারল্যান্ড। টাকার তখন ৮৯ রানে অপরাজিত। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে খুব একটা সময় নিলেন না তিনি। ১৪৯ বলের দৃঢ়তায় ১৩ চার, ১ ছক্কায় সেঞ্চুরিতে পৌঁছান তিনি। সেঞ্চুরির পরও পেয়েছেন বাউন্ডারি। তবে নতুন বল নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। ইবাদত হোসেনের বলেও চারের খোঁজে ছিলেন ডানহাতি ব্যাটার। তার লফটেড ড্রাইভ কাভারে লাফ দিয়ে হাতে জমান শরিফুল ইসলাম।
১৬২ বলে ১৪ চার, ১ ছক্কায় ১০৮ করে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় গ্যালারির হাতেগোনা দর্শকরা তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। আসলে অভিবাদন জানানোর মতই খেলেন তিনি। সেঞ্চুরির পথে টেক্টরের সঙ্গে ৭২ ও ম্যাকব্রেইনের সঙ্গে ১১১ রানের দুটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জুটি পান টাকার।
নিজের ইনিংসটা গুছিয়েছেন দারুণভাবে। থিতু হতে পর্যাপ্ত সময় নিয়েছেন, ক্রিজে একদম আড়ষ্ট হননি। বরাবরই রানের চাকা রেখেছেন সচল। আলগা বলগুলো কাজে লাগিয়েছেন স্কিলের মুন্সিয়ানায়। পুল, পায়ের কাজ দিয়ে জায়গা বের করে ড্রাইভ, লেট কাট, সুইপ, রিভার্স সুইপের মতো শটের বাহার দেখা গেছে তার ব্যাটে।
অথচ আগের দিন শেষ বিকেলে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে সাকিব ও তাইজুলের ছোবলে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড। ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা আইরিশরা কতক্ষণ আর টিকতে পারবে, এই নিয়ে ছিল আলোচনা। টেক্টর-টাকার-ম্যাকব্রেইনরা মিলে যা করলেন, তাতে সেসব আলোচনাই এখন হাস্যকর পরিণত।
দিনের প্রথম ঘন্টায় বাড়তি সতর্ক থাকল আয়ারল্যান্ড। রান বাড়ানোর কথা ভুলে টিকে থাকায় মন দিল তারা। দিনের শুরুর সময়টা বোলারদের পর্যাপ্ত শ্রদ্ধা দিয়ে বাকি দিনটা নিজেদের করে নিতে চাইলেন তারা। টেক্টর পঞ্চম উইকেটে পিটার মুরের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি পান ১৫৪ বল খেলে।
স্পিনারদের কঠিন বল সামলে পেসে কাবু হন মুর। শরিফুলের বেরিয়ে যাওয়া বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে থামান তার ৭৮ বলে ১৬ রানের ইনিংস।
এরপরই সময়টা নিজেদের করে নেন টাকার-টেক্টর। লাঞ্চ পর্যন্ত খেলে দেন তারা। ৫ উইকেটে ৯৩ রান নিয়ে নেমে লাঞ্চের পরও সাবলীল খেলছিলেন টেক্টর-টাকার। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিফটি তুলে নেন টেক্টর। তাকে দেখাচ্ছিল বেশ স্বচ্ছন্দ। তবে এক সময় গিয়ে ধৈর্য্যুচ্যুতি হয় টেক্টরের। তাইজুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে নিজের বিপদটা ডেকে আনেন তিনি। লাইন মিস করে পরাস্ত হয়ে পা লাগান, রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ৭ চার, ১ ছক্কায় ১৫৯ বলে ৫৬ করে বিদায় নেন তিনি। তার আউটে ভাঙে টাকারের সঙ্গে ৬ষ্ঠ উইকেটে ১৪৫ বলে ৭২ রানের জুটি।
টেক্টরকে হারিয়ে অস্থির হননি টাকার। অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইনকে নিয়ে আরেকটি প্রতিরোধের গল্প লেখেন তিনি। টিকে থাকার সঙ্গে এই দুজন রানের চাকাও রাখেন সচল।
স্পিনারদের ভালোভাবে সামলে ফেলে টাকারকে থামাতে পেসার এনেও লাভ হয়নি। বরং ইবাদত, শরিফুলদের বল তিনি খেলেছেন আরও অনায়াসে। বোলিংয়ে ৬ উইকেট নেওয়া ম্যাকব্রেইন ব্যাট হাতেও দেখান নিজের সামর্থ্য। দুজনের জুটিতে ইনিংস হার এড়িয়ে লিড বাড়াতে থাকে তারা।
শেষ সেশনে নতুন বল নিয়ে এই জুটি ভাঙতে পারে বাংলাদেশ। ততক্ষণে সপ্তম উইকেট জুটিতে এসে গেছে শতরান, টাকারও পেরিয়ে গেছেন সেঞ্চুরি।
এরপর মার্ক অ্যাডায়ারকেও নিয়েও ৮৪ বল টিকে ৩১ যোগ করে ফেলেন ম্যাকব্রেইন। ৪৯ বলে ১৩ করা অ্যাডায়ার তাইজুলের শিকার হলে ৮ম উইকেট হারায় সফরকারীরা। হিউমকে নিয়ে দিনের বাকি সময় অনায়াসে কাটিয়ে দেন ম্যাকব্রেইন।
Comments