ইনিংস ব্যবধানে জেতার সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

Shakib Al Hasan
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

আগের দিনের খেলা শেষে আইরিশ ব্যাটার হ্যারি টেক্টর নিজেদেরকে দেখছিলেন সমান পাল্লায়। দ্বিতীয় দিনের খেলার পর পুরো টেস্ট ম্যাচই শেষের আভাস। দেড়শো ছাড়ানো লিড পাওয়ার পর শেষ বিকেলে টপাটপ ৪ উইকেট তুলে বড় জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ।

এই টেস্টের আগে বাংলাদেশ বলছিল প্রতিপক্ষকে দাপট দেখিয়ে হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে চায় তারা। বুধবার মিরপুরে দ্বিতীয় দিন পর সেই দিকেই যাচ্ছে সব কিছু। ইনিংস হার এড়াতে এখনো আয়ারল্যান্ডের চাই  ১২৮  রান, হাতে আছে ৬ উইকেট।

মিরপুরের চেনা বাইশগজে ফণা তুলছেন সাকিব আল হাসান আর তাইজুল ইসলাম। তাদের ঘূর্ণিতে তেমন কোন জবাব খুঁজে পাচ্ছে না আইরিশরা। ১৭ ওভার ব্যাট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৭ রান তুলেছে তারা।

১৫৫ রানে পিছিয়ে খেলতে নেমে হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থা হয় আয়ারল্যান্ডের। প্রথম ইনিংসে ৬৫ ওভার পর বল করতে এলেও সাকিব এবার প্রথম ওভারেই আক্রমণে আসেন। সাফল্যও আনেন শুরুতে। জেমস ম্যাককুলামকে এলবিডব্লিউতে বিদায় করেন তিনি।

চতুর্থ ওভারে আরেক ওপেনার মুরে কামিন্সকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। তার ভেতরে ঢোকা বলের মতিগতি বুঝতে পারেননি আইরিশ ব্যাটার।

তিনে নেমে অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি তাইজুলের সোজা বল টার্ন করবে ভেবে ছেড়ে দিয়ে হয়ে যান বোল্ড। খানিক পর আবার আঘাত তাইজুলের। এবার কার্টিস ক্যাম্ফার তাইজুলের টার্ন আর বাউন্সে হন কাবু। টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল হালকা ব্যাটে স্পর্শ করে কিপারের গ্লাভসে জমা পড়েন তিনি, রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি। ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় আয়ারল্যান্ড।

এরপর অবশ্য একটা প্রতিরোধ এসেছে তাদের কাছ থেকে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা হ্যারি টেক্টর আর পিটার মুর উইকেট পতনের স্রোত আটকান। ৬৩ বল টিকে থেকে ১৪ রান যোগ করেন দুজন।

 

এর আগে পুরো দিন ব্যাটিংয়ে দাপট দেখান স্বাগতিক ব্যাটাররা।  প্রতিপক্ষ অনভিজ্ঞ, বোলিংও হচ্ছিল ধারহীন। বাংলাদেশের যদিও সুযোগ ছিল বিশাল পুঁজি গড়ার। মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির পরও শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিনশো ছাড়িয়েই থামে বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ডের ২১৪ রানের জবাবে দিনের শেষ সেশনে ৩৬৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।  দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৬ রান করেছেন মুশফিক। অধিনায়ক সাকিব ৯৪ বলে ৮৭ ও লিটন দাস করেন ৪১ বলে ৪৩। সাতে নেমে অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান। বাংলাদেশ রান উঠায় ওয়ানডে গতিতে। ওভারপ্রতি রান তোলার গতি ছিল ৪.৫৮। আগ্রাসী খেলতে গিয়ে অবশ্য বড় রানের সম্ভাবনাও মাটি হয়েছে। সাকিব-লিটনদের দেখা গেছে বাজে শটে আত্মাহুতি দিতে।

দিনের শুরুতে সামান্য ভয়ের কারণও ছিল। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটার মুমিনুল হক মার্ক অ্যাডায়ারের বলে বোল্ড হয়ে গেলে ৪০ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপরই চতুর্থ উইকেটে খেলা বদলে দেন সাকিব-মুশফিক। সাকিব ক্রিজে এগিয়েই ঝুঁকি নিয়ে খেলতে থাকেন। থিতু হয়ে তার ব্যাট হয়ে উঠে চওড়া। মুশফিক সময় নিয়ে থিতু হয়েছেন, তবে এরপরই আইরিশ বোলারদের আলগা বোলিং তাদের কাজটা করে দিয়েছে সহজ।

স্পিনাররা ওভারে অন্তত তিনটি করে আলগা বল দিয়েছেন। সেসব বেশিরভাগ কাজেও লাগান বাংলাদেশের ব্যাটাররা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৫৯ রান আনতে স্রেফ ১৮৮ বল লাগে তাদের। মাত্র ৪৫ বলে ফিফটি করে বড় কিছুর দিকেই ছুটছিলেন  সাকিব। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে সাকিব আউট হলেও মুশফিক কোন ভুল না করে স্পর্শ করেন দশম সেঞ্চুরি।

৫ উইকেটে ৩১৬ রান চা-বিরতির পর নেমে বেশিদূর এগুনো যায়নি। সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক ম্যাকব্রেইনের বলে স্লগ সুইপের চেষ্টায় গিয়েছিলেন। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে সোজা ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৬৬ বলের উপস্থিতিতে ১৫ চার, ১ ছয়ে ১২৬ রান করেন তিনি। খানিক পর ম্যাকব্রেইনের বলে বোল্ড হয়ে যান তাইজুল ইসলাম। টেকেননি শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেনও। ৩৫৪ রানে পড়ে যায় ৯ উইকেট। খালেদ আহমেদকে এক পাশে রেখে অবশ্য নিজের ফিফটিটা তুলে নেন মিরাজ। লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটকে এগিয়ে এসে উড়াতে স্টাম্পিং হয়ে থামেন মিরাজ। থামে বাংলাদেশের ইনিংসও।

এরপরই নতুন বল হাতে নিয়ে আইরিশদের উপর চেপে বসেন সাকিব-মিরাজ। দ্বিতীয় দিন শেষেই বড় জয়ের ভিত তৈরি করে ফেলেছেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

11h ago