২ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ

২ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ 
১২ বলে দরকার ১১। হাতে ২ উইকেট। শ্রীলঙ্কার জমিয়ে তোলা খেলা বুমারেং করে দেন দাসুন শানাকা। বাংলাদেশের চিন্তাও দূর করে দেন তিনি। ১৯তম করতে এসে প্রথম বলটাই করেন ফুলটস। লোপ্পা ফুলটস পেয়ে অনায়াসে ছক্কা মেরে ম্যাচ মুঠোয় নিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। বাকি রান নিতে আর সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। জয় এসেছে ২ উইকেটে। এই জয়ে সুপার এইটে যাওয়ার আশা এখন বেশ চওড়া। 

শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে আটকেও রান তাড়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলো বাংলাদেশ। ৬ রানে ২ ও ২৮ রানে পড়ে যায় ৩ উইকেট। লিটন দাসের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ও তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ে পরে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিতে থাকে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এই দুজনের জুটিতে ৩৮ বলে আসে ৬৪। তাদের বিদায়ের পর আবার তৈরি হয় কঠিন অবস্থা। নুয়ান তুশারার তোপে চাপে পড়া বাংলাদেশ অবশ্য ঠিকই তীরে ভিড়িয়েছে তরি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, কুশাল ১০, কামিন্দু ৪, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*; তানজিম ১/২৪, সাকিব ০/৩০, তাসকিন ২/২৫, মুস্তাফিজ ৩/১৭, রিশাদ ৩/২২, মাহমুদউল্লাহ ০/৪)

বাংলাদেশ:১৯ ওভারে ১২৫/৮ (তানজিদ ৩, সৌম্য ০, লিটন ৩৬, শান্ত ৭, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ১৬*, রিশাদ ১, তাসকিন ০, তানজিম ১*; ধানাঞ্জয়া ***, থুশারা ৪/১৮, থিকশানা ০/২৫ হাসারাঙ্গা ২/৩২, পাথিরানা ১/২৭, শানাকা ০/১১)

ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন

তুশারার জোড়া আঘাতে বিপদ বাড়ল বাংলাদশের

সহজ হয়ে আসা সমীকরণ মেলাতে নেমে ভুল করলেন রিশাদ হোসেন। নুয়ান তুশারার বলে এগিয়ে এসে মারতে বোল্ড হয়ে ফিরলেন ১ রান করে। ঠিক পরের বলেই ইয়র্কার বলে এলবিডব্লিউ তাসকিন আহমেদ। 

কাজ অসামাপ্ত রেখে সাকিবের বিদায়

শেষ ৪ ওভারে দরকার ১৭ রান। সমীকরণ সহজই। তবে প্রতিপক্ষকে ট্রিকি উইকেটে কোন সুযোগ দেওয়ার অবস্থায় তখনো নেই বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় ফিরলেন সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞ ব্যাটার মাথিশা পাথিরানাকে আপার কাট করতে গিয়ে ধরা দেন থার্ড ম্যানে। ১০৯ রানে ৬ উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের। 

ভরসা দিতে থাকা লিটনের উইকেট হারালো বাংলাদেশ

কঠিন উইকেটে শুরু থেকে সাবলীল খেলছিলেন লিটন দাস। এক পাশে তিনি আস্থার ছবি হয়ে উঠায় আগ্রাসী হতে পারেন তাওহিদ হৃদয়ের। হৃদয়ের বিদায়ের পর থামলেন লিটনও। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলি ডেলিভারি বুঝতে পারেননি লিটন। এলবিডব্লিউতে রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। ৩৮ বলে ৩৬ করে ফেরেন লিটন। ৯৯ রানে ৫ম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

টানা তিন ছক্কার পর হৃদয় আউট

ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে পর পর টানা তিন ছক্কা মারলেন তাওহিদ হৃদয়। উড়তে থাকা ব্যাটার ঠিক পরের বলেই এলবিবডব্লিউতে নিলেন বিদায়। ২০ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তিনি দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে গেছেন। ১২৫ রান তাড়ায় ৯১ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে চতুর্থ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন লিটন-হৃদয়। 

লিটন-হৃদয়ের প্রতিরোধ

তিনে নেমে লিটন দাস এখনো পর্যন্ত খেলছেন সাবলীল। খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি, তার সঙ্গে জুটি বেধে থিতু হয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। ২৮ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর এই দুজনের জুটিতে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। 

পারলেন না অধিনায়ক শান্ত 

নিজের খারাপ ছন্দ থেকে বিশ্বকাপ মঞ্চেও বের হতে পারলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। ১২৫  রান তাড়ায় নেমছিলেন ৬ রানে ২ উইকেট পড়া অবস্থায়। তিনি টিকলেন ১৩ বল, করলেন স্রেফ ৭। নুয়ান তুশারার বলে ড্রাইভ করে মিড অফে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

সৌম্যের পর ফিরলেন তানজিদ 

তানজিদ হাসান তামিমও পারলেন না। দ্বিতীয় ওভারে তাকে বোল্ড করে দিয়েছেন নুয়ান তুশারা। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

শুরুতেই সৌম্যের বিদায়

১২৫ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় বলে পড়েছে উইকেট। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার শর্ট বল পুশ করে খেলতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন কোন রান না করা সৌম্য। ১ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

Rishad Hossain
ছবি: বিসিবি

দারুণ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানে আটকে দিল বাংলাদেশ

আগ্রাসী শুরু পাওয়া শ্রীলঙ্কাকে বড় রান করতে দিল না বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদদের দারুণ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ। রিশাদ ২২ রানে ও মোস্তাফিজ ১৭ রানে নেন তিনটি করে উইকেট। তাসকিন আহমেদ ২৫ রানে পান ২ উইকেট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, কুশাল ১০, কামিন্দু ৪, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*; তানজিম ১/২৪, সাকিব ০/৩০, তাসকিন ২/২৫, মুস্তাফিজ ৩/১৭, রিশাদ ৩/২২, মাহমুদউল্লাহ ০/৪)

ম্যাথিউসও পারলেন না

শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার ভরসা ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। কিন্তু খুব বেশি কিছু যোগ করতে পারেননি। ১৭ বলে ১৬ করে তানজিম হাসান সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। 

মোস্তাফিজের তৃতীয় শিকার 

নিজের শেষ ওভারে আরেক উইকেট নিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এলোপাথাড়ি ঘুরাতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন মাহিশ থিকসেনা। ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নিলেন ৩ উইকেট।

তাসকিনের বলে শানাকার বিদায় 

একের পর এক উইকেট তুলে শ্রীলঙ্কাকে এলোমেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ১০০ থেকে ১১৫ রানে ৭ উইকেট পড়েছে তাদের। তাসকিন আহমেদ নিজের শেষ ওভারে আউট করেছেন দাসুন শানাকে। তাসকিনের বাড়তি লাফানো বল কাট করতে গিয়ে এজড হয়ে লিটনের হাতে জমা পড়েন শানাকা। ৭ বলে ৩ রান করা ব্যাটারের ক্যাচ লাফিয়ে নেন লিটন। 

রিশাদের তৃতীয় শিকার ধনঞ্জয়া 

দারুণ বোলিংয়ে তৃতীয় উইকেট নিলেন রিশাদ হোসেন। তাতে ভূমিকা ছিলো কিপার লিটন দাসেরও। তার বলে ঘুরিয়ে পরাস্ত হওয়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ক্রিজ ছেড়ে খানিকটা বেরিয়েছিলেন। লিটন ক্ষিপ্রতায় করেন স্টাম্পিং। ১০৯ রানে ৬ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। 

জোড়া উইকেট নিলেন রিশাদ

ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথা আসালাঙ্কা ঝড় তুলতে না পারলেও তাদের জুটি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ধাপে ৩০ রানের সেই জুটি ভেঙে জোড়া আঘাত হেনেছেন রিশাদ হোসেন। ১৫তম ওভারে তার বলে পর পর ফিরে যান চারিথা আসালাঙ্কা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগে আসালাঙ্কা ক্যাচ দেওয়ার পরের বলেই স্লিপে ধরা দেন হাসারাঙ্গা। ১০০ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। 

বিপদজনক নিশানকাকে থামালেন মোস্তাফিজ 

বাকি ব্যাটারদের বিপরীতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে অক্সিজেন যোগান দিচ্ছিলেন পাথুম নিশানকা। তার ঝলমলে ইনিংসেই সমাপ্তি টেনেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। নবম ওভারে মোস্তাফিজকে পুল করে বাউন্ডারি মারার ঠিক পরের বলেই উড়াতে গিয়ে মিড অফে সহজ ক্যাচ দেন নিশানকা। ৭০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। 

মোস্তাফিজ এসেই নিলেন কামিন্দুর উইকেট 
কুশল মেন্ডিসকে হারালেও পাথুম নিশানকার ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে বড় রানই তুলে নিচ্ছিলো শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাদের আবার ধাক্কা দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজের প্রথম বলে মিড অফ দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচে বিদায় নেন কামিন্দু মেন্ডিস। ৪৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে লঙ্কানরা। 

কুশল মেন্ডিসকে ফেরালেন তাসকিন 
চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা তাসকিন আহমেদ তৃতীয় ওভারে আসেন বোলিংয়ে। প্রথম দুই বলেই তাকে দুই চার মারেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু তৃতীয় স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন লঙ্কান ওপেনার। তৃতীয় ওভারে ২১ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ। 

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস ভাগ্য পক্ষে এসেছে বাংলাদেশের। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুতে সুয়্যিং সুবিধা কাজে লাগাতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টস হেরে আগে ব্যাটিং পেলেও সেটা সমস্যার মনে করছেন না শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। 

ডালাসে বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে শুরু হওয়া ম্যাচটি স্থানীয় সময় শুরু হচ্ছে সন্ধ্যায়। রাতের আলোয় এই ম্যাচের একাদশে বাংলাদেশ রেখেছে তিন পেসার ও দুই স্পিনার। বিশেষজ্ঞ পাঁচ বোলারের বাইরে অনিয়মিত হিসেবে বল করতে পারেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেনেও নাম আছে সৌম্যরের। কিপার ব্যাটার হিসেবে সেক্ষেত্রে তিনে খেলবেন লিটন দাস। 

চোট কাটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফিরেছেন পেসার তাসকিন আহমদ। তবে চোটের কারণেই পাওয়া যাচ্ছে না শরিফুল ইসলামকে, তার বদলে খেলছেন ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিব। 

বাংলাদেশ একাদশে পেসার বেশি হলেও লঙ্কান একাদশে স্পিনার বেশি। অধিনায়ক হাসারাঙ্গার সঙ্গে আছেন দুই অফ স্পিনার মাহিশ থিকসেনা ও  ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। দুই পেসার মাথিশা পাথিরানা ও নুয়ান তুশারা ছাড়া পেস বল করার জন্য আছেন দুই অভিজ্ঞ দাসুন শানাকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে জায়গা হারিয়েছেন সাদেরা সামারাবিক্রমা। 

বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।

শ্রীলঙ্কা একাদশ:  কামিন্দু মেন্ডিস, পাথুম নিশানকা, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া দি সিলভা, চারিথা আসালাঙ্কা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দাসুন শানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকসেনা, মাথিশা পাথিরানা, নুয়ান তুশারা।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

10h ago