খেলতে খেলতেই যেভাবে জীবনের বোর্ড থেকে বিদায় নেন জিয়া

জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে এনামুল হোসেন রাজীবের সঙ্গে ম্যাচ তখন জমে উঠেছে জিয়াউর রহমানের। আড়াইঘন্টা পেরিয়ে মীমাংসা হতে তখনো ঢের বাকি। কিন্তু কিস্তিমাতের অপেক্ষা অসমাপ্ত রেখেই জীবনের বোর্ড থেকে আচমকা বিদায় নিয়ে নেন জিয়া। পুরো ব্যাপারটা এতই আকস্মিক হয়েছে যে রাজীবের কাছে ঘোরের মতন লাগছে সব।

শুক্রবার বিকেল ৩টায় শুরু হয়েছিলো রাজীব-জিয়ার ম্যাচ। পৌঁনে ছয়টার দিকে চেয়ার থেকে লুটিয়ে পড়ার পর প্রবল চেষ্টাতেও আর ফেরানো যায়নি দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় এই গ্র্যান্ডমাস্টারকে। মাত্র ৫০ বছর বয়েসেই একই সঙ্গে ভালোবাসার দাবা ও জীবনের বোর্ড থেকে চিরবিদায় নিয়ে নেন তিনি।

জিয়ার শেষ সময়টায় উল্টাপাশের চেয়ারে ছিলেন রাজীব। তার সঙ্গেই হয়েছে শেষবারের মতন কথা। দ্য ডেইলি স্টারকে রাজীব জানান যন্ত্রণার সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ,  'আমি আর জিয়া ভাই খেলছিলাম হুট করে তিনি লুটিয়ে পড়ে গেলেন।'

'জিয়া ভাইর মাঝে কোন অস্বস্তির চিহ্ন ছিলো না। উনি ডানদিকে ঝুঁকে আচমকা পড়ে গেলেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নিচ থেকে পানির বোতল নিতে যাচ্ছেন। আমি তখন তাকে ডাকলাম, তিনি সাড়া দিলেন না। সবাই ছুটে এলো, তিনি তখন অজ্ঞান। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো কিন্তু তিনি বেঁচে ছিলেন না।'

নিয়াজ মোরশেদেশের পর ২০০২ সালে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার হন জিয়া। তবে একটা জায়গায় তিনি ছিলেন অনন্য। জিয়া ছিলেন পুরোপুরি পেশাদার দাবাড়ু। দাবা খেলাই ছিলো তার ধ্যানজ্ঞান, নেশা-পেশা সব। জীবনে দাবা খেলার বাইরে অন্য কোন চাকরি করেননি।

বাকি সব দাবাড়ুকে দাবার বাইরে অন্য কোন চাকরি করেন। তিনি ছিলেন পুরোপুরি দাবার উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আয় দিয়েই চলত তার জীবন।

তার একমাত্র সন্তান তাহসিন তাসওয়ার জিয়াও একজন ফিদে মাস্টার। ২০২২ সালে দাবা অলিম্পিয়াডে বাবা-ছেলে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তার স্ত্রী তাসনিম সুলতানা লাবণ্যও একজন সৌখিন দাবাড়ু। অর্থাৎ দাবা দিয়েই ঘেরা ছিলো জিয়ার জীবন।

২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় কঠিন অবস্থায় পড়েন জিয়া। তখন দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, এরপরও অন্য কোন চাকরির খোঁজ করেননি তিনি, এতটাই ছিলো দাবার প্রতি তার ভালোবাসা।

জিয়ার এভাবে লুটিয়ে পড়া ও চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে শুক্রবার দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের সবগুলো ম্যাচই ভেস্তে যায়।

শেষবার প্রতিপক্ষ পাওয়া দাবাড়ুর প্রতি রাজীব নতজানু, নির্দ্বিধায় তিনি তাকে দিলেন সেরার স্বীকৃতি,  'আমি মনে করি জিয়া ভাই বাংলাদেশের সেরা দাবাড়ু। তিনি যা অর্জন করেছেন আমি বা অন্যদের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।'

'মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। চীনে গত বছর এশিয়ান গেমসে পারফরম্যান্স  ভালো না হওয়ায় হতাশ ছিলেন। কিন্তু তিনি তার থেকেও আমার পারফরম্যান্স নিয়ে বেশি ভাবিত ছিলেন।'

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আসরের ফাঁকে কোচিং করাতে শুরু করেছিলেন জিয়া। অনেক স্বপ্ন, পরিকল্পনাও ছিলো। সবই থেমে গেল মাঝপথে। তাতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি দেখছেন রাজীব, 'বাংলাদেশের দাবার জন্য এটা বড় ক্ষতি। তিনি আরও কয়েক বছর সেবা দিতে পারতেন। আমরা দাবা অলিম্পিয়াডে জিয়া ভাইয়ের উপর ভরসা করতাম। কারণ আমরা জানতাম জিয়া ভাইয়ের থেকে বোর্ড-১ এ আর কেউ ভালো না।'

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago