চলে গেলেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে

২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ছবিটি তুলেছিলেন পেলে। ছবি: রয়টার্স

ফুটবল কিংবদন্তি পেলে মারা গেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে সবার আগে উচ্চারিত হয় তার নাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। 

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ২৭ মিনিটে (২৯ ডিসেম্বর) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পেলে। তার মৃত্যুর খবরটি দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সাবেক এই তারকা ফুটবলারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো।

কয়েক বছর ধরে মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত পেলে গত নভেম্বরের শেষ থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে তাকে দেখতে জড়ো হয়েছিলেন।

ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি পেলের দখলে। তার আসল নাম এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। তবে মাঠে পায়ের জাদু দেখিয়ে পেলে নামেই খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি। হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব যা নিয়ে প্রায় সকলে একমত।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মলাশয় থেকে টিউমার অপসারণের পর থেকে নিয়মিত কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছিল পেলেকে। এর আগে ২০১২ সালে তার নিতম্বের অপারেশন ব্যর্থ হয়েছিল। তখন থেকেই সাহায্য ছাড়া হাঁটতে অসুবিধা হতো তার। এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রাক্কালে পেলের ছেলে এদিনহো বলেছিলেন যে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত বোধ করছিলেন।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মিনাস গেরাইস প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন পেলে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে যোগ দেন সান্তোসে। উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত ছোট ক্লাবটিকে তিনি ফুটবলের সবচেয়ে বিখ্যাত নামগুলোর একটিতে পরিণত করেন।

সান্তোসের জার্সিতে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বহু সংখ্যক শিরোপা জেতেন পেলে। পাশাপাশি দুটি কোপা লিবার্তাদোরেস (দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলা হয় যে প্রতিযোগিতাটিকে) ও দুটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ (ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ক্লাবগুলো নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতা) উঁচিয়ে ধরেন।

জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়ে পেলে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জেতেন তিনবার। প্রথমবার মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত আসরে। দ্বিতীয়বার তিনি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পান চার বছর পর চিলিতে। যদিও চোটের কারণে প্রতিযোগিতার বেশিরভাগ অংশে ছিলেন না তিনি। সবশেষ ১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে তৃতীয়বার পরম আরাধ্য সোনালী ট্রফি ছুঁয়ে দেখেন। তার নেতৃত্ব দেওয়া সেলেসাওদের ওই দলটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দলগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

পেলে তার দ্যুতি দিয়ে গোটা দুনিয়া ফুটবলের আলোয় উদ্ভাসিত করেন। কোনো নির্দিষ্ট ফুটবলারের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি আগে-পরে। গত শতাব্দীর প্রথম বৈশ্বিক আইকনদের অন্যতম ছিলেন তিনি। তার বিজয়ীর হাসি ও নম্রতা মুগ্ধ করেছিল ভক্তদের। সেই ধারা থেকেছে চলমান।

পেলেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি 'শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ' হিসেবে অভিহিত করেছিল। এছাড়া, তার দেশ ব্রাজিলের সরকার তাকে 'জাতীয় সম্পদ' উপাধিতে ভূষিত করে।

রয়টার্সকে ২০১৩ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেলে নিজের ফুটবল প্রতিভা নিয়ে বলেছিলেন, 'ঈশ্বর আমাকে একটি কারণে এই ক্ষমতা দিয়েছেন: মানুষকে খুশি করার জন্য। আমি যা-ই করি না কেন এই কথাটি আমি কখনোই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি না।'

হাসপাতাল থেকে পেলের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় ছিলেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত। কিন্তু তাদের প্রার্থনায় সাড়া মেলেনি। ফুটবলের রাজা খ্যাত পেলে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।

Comments

The Daily Star  | English

For the poor, inflation means a daily struggle

As inflation greets Bangladeshis at breakfast time, even the humble paratha becomes a symbol of struggle. Once hearty and filling, it now arrives thinner and lighter -- a daily reminder of the unending calculations between hunger and affordability.

8h ago