হামজা আসবেন বলে সেজে উঠেছে পুরো এলাকা

hamza choudhury

এমন না যে হবিগঞ্জের এই বাড়িতে তিনি আর আগে আসেননি। ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে একাধিকবার এখানে এসেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। তবে এবারের আসাটা যে ভিন্ন। হামজা এবার পুরোপুরি হয়ে গেছেন বাংলাদেশের, কদিন পর  গায়ে জড়াবেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি। তাকে নিয়ে উন্মাদনাও বিপুল। হামজার আগমন উপলক্ষে হবিগঞ্জের বাহুবলের স্নানঘাট গ্রাম তো বটেই, পুরো সিলেট বিভাগেই একটা উৎসবের আবহ।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটি থেকে ধারে লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলছেন হামজা। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এমন কারো বাংলাদেশের হয়ে নামার ঘটনা ঘটবে প্রথমবার। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হবে হামজার।

হামজার বিদেশিনী স্ত্রী অলিভিয়ার জন্যও বানানো হয়েছে তোরণ।

ম্যাচটি খেলতে সোমবার সকালে যুক্তরাজ্য থেকে সরাসরি ফ্লাইটে সিলেট নামছেন হামজা। সিলেট থেকে গাড়ি করে যাবেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটাবেন এক রাত। হামজার সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছেন তার নিকটজনেরা।

হামজা আসবেন বলে পুরো গ্রামটি একটি উৎসবের ময়দানে পরিণত হয়েছে, পুটিজুরি মহাসড়ক থেকে তার বাড়ি পর্যন্ত ৪-৫ কিলোমিটার রাস্তায় ৫০০টিরও বেশি আলংকারিক তোরণ তৈরি করা হয়েছে। স্নানঘাটের এই কৃতি সন্তানের আগমনে রাজনীতিবিদ থেকে ক্রীড়াপ্রেমী পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়েছেন।

স্থানীয় উদ্যোক্তা মোহাম্মদ মনির খান তার রোমাঞ্চ প্রকাশ করে বলেন, 'হামজার বাড়ি থেকে আমার বাড়ি মাত্র ১০০ ফুট দূরে। সবাই তার আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এমনকি অতীতের বিরোধ থাকা পরিবারগুলোও আনন্দে একত্রিত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য ঐক্য ও গর্বের মুহূর্ত।'

স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া তার গর্ব প্রকাশ করে বলেন, 'এটি একটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি যে আমাদের গ্রামের একজন খেলোয়াড় ইংলিশ লিগে খেলেছে এবং এখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। হামজার বাবা প্রায়ই তার ছেলের বাংলাদেশের প্রতি গভীর সংযোগের কথা বলতেন, এবং এখন সেই ভালোবাসা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।'

হামজা স্থানীয় এলাকায় একটি এতিমখানায় আর্থিক সহয়তা দেন। মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণেও অর্থ দিয়েছেন। এবার এসে এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

অনেক উৎসাহী ভক্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাদিদ হাসান, যিনি হামজাকে এক ঝলক দেখার জন্য তার শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন, 'আমি এত উত্তেজিত আগে কখনো হইনি! শুধু এই ভাবনাটাই অসাধারণ যে একজন তারকা খেলোয়াড়ের এখানে শিকড় রয়েছে। আমি তাকে না দেখা পর্যন্ত যাব না।'

হামজার জন্য গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে একটি বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামীউল ইসলাম বিশ্বাস করেন মজার বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত তরুণ ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবে, 'এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। তার উপস্থিতি বাংলাদেশি ফুটবলের মর্যাদা বাড়িয়ে তুলবে এবং তার প্রভাব আগামী বছরগুলোতে অনুভূত হবে।'

হামজা জন্মগতভাবে একজন বাংলাদেশী মা ও গ্রেনাডীয় পিতার সন্তান। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরীর জন্ম, বেড়ে উঠা হবিগঞ্জেই। যুক্তরাজ্যে গিয়ে তিনি পরে বিয়ে করেন গ্রানাডিয়ানকে। সেই বিয়ের বিচ্ছেদের পর দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় রাফিয়ার। মোরশেদ চৌধুরী সৎ বাবা হলেও হামজার সবকিছুই এখন দেখভাল করছেন।

হামজার বাবা মুরশেদ চৌধুরী উত্তেজনা এবং উদ্বেগের মিশ্র অনুভূতির কথা স্বীকার করেছেন, 'সবাই তার কাছ থেকে বাংলাদেশের জয়ের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে, বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে। আমরা বড় স্বপ্ন দেখলেও আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন। হামজা বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যতে অবদান রাখতে এখানে এসেছে।'

হামজার সফর উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমানের নির্দেশনায় স্থানীয় পুলিশ তার নিরাপত্তার জন্য উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Govt issues ordinance amending Anti-Terrorism Act

Activities of certain entities, and activities supporting them can now be banned

1h ago