হামজা-শামিতদের কেবল জার্সি নয়, একটা ‘সিষ্টেমও’ দরকার

সিঙ্গাপুরের কাছে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরে আশাভঙ্গ করেছে। তবে আলফাজ আহমেদ এটাকে কেবল স্রেফ হার নয়, সব সরঞ্জাম হাতে থাকার পরও সুযোগের অপচয় হিসেবেও দেখছেন। মোহামেডানকে লিগ জেতানো কোচের মতে, 'অবশেষে আমরা যন্ত্রাংশগুলো পেয়েছি, কিন্তু কীভাবে মেশিনটি জোড়া লাগাতে হয় তা জানি না।'

অনেক বছর পর এই প্রথম বাংলাদেশ দলে হামজা চৌধুরী এবং শমিত শোমের মতো বিশ্বমানের মিডফিল্ডার যুক্ত হয়েছে। যারা কিনা খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করার টেকনিক্যাল সক্ষমতা রাখেন। তবুও সেদিন দলের জেতার তীব্র তাড়নার মাঝে তারা অসহায় হয়ে পড়ছিলেন, কারণ তারা এমন এক সিষ্টেমের মধ্যে আছেন যা তাদের কাজটা করতে সহায়তা করছিলো না।

'হামজা বল পেয়েছিল কিন্তু কাকে পাস দেবে?'  আলফাজের প্রশ্ন। এরপর তিনি গোটা দলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। হামজার মতো মিডফিল্ডারকে কেবল  পজেশন ধরে রাখা বা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করার জন্য দলে আনা হয় না। তাকে এবং শমিতকে আনা হয় খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে, আক্রমণ শুরু করতে এবং আক্রমণকারীদের জন্য জায়গা তৈরি করতে। কিন্তু এর বদলে যা দেখা গেল তা হল কৌশলগত বিভ্রান্তি – একটি মিডফিল্ড যা খুব সংকীর্ণ, বিচ্ছিন্ন উইঙ্গার, আক্রমণভাগে ধারহীনতা এবং সামগ্রিকভাবে খেলার ছন্দের অভাব।

কেবল ব্যক্তিগত খেলোয়াড়দের ঠিকভাবে ব্যবহার না করাই নয়, আলফাজ মাঠের পুরো সারফেস কাজে না লাগানোর দিকেও ইঙ্গিত করেন। তার মতে বা পায়ের খেলোয়াড় সোহেল রানা বাম পাশে উন্মুক্ত ভূমিকা নিতে পারতেন। তার বদলে নামা মোহাম্মদ হৃদয়ের সংযুক্তি দলকে ভারসাম্যহীন করেছে।  হামজা বেশিরভাগ পাস ডানদিকে দিলেও, হৃদয় তাল রেখে বাম দিকে কোনও সমর্থন দেননি, যার ফলে মাঠ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল – বিকল্প সীমিত হয়ে গিয়েছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই, বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক ক্ষমতা কমে যায়।

সোহেলের মতন তাজ উদ্দিনকেও না রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করেন আলফাজ, তাজ ভুটানের বিপক্ষে ভালো খেলেছিলেন। তার প্রশ্ন, 'সত্যি বলতে – বাংলাদেশের খেলার পরিকল্পনা কি ছিল? রক্ষণাত্মক খেলে সুযোগ পেলে প্রতি আক্রমণে গোল করা? সেই কৌশল তো ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়ে।'

গোল হজম করায় গোলরক্ষক মিতুল মারমার ভুল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আলফাজ এক্ষেত্রে রক্ষণের ভুলই দেখেন বেশি, 'রক্ষণাত্মক কাঠামোও ভালো ছিল না, কারণ সিঙ্গাপুরের ৭ নম্বর খেলোয়াড়কে প্রথম গোল করার সময় আমাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের তাকে আটকানো উচিত ছিল। গোলরক্ষক বল ঘুষি মেরে সরানোর পরও ফলো-থ্রু করার কোনো পদক্ষেপ ছিল না। প্রথম গোলটি, রক্ষণাত্মক ট্র্যাকিংয়ের একটি ব্যর্থতা।'

কিন্তু কৌশলের বাইরেও, দলটির ওপর একটি মানসিক চাপ ছিল। ঘরের মাঠে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। স্টেডিয়াম ছিল দর্শকে পূর্ণ। সমর্থকরা প্রস্তুত ছিল বড় কিছুর। তবে খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছিল তারা অনুপ্রেরণার বদলে আবহের ভারে আক্রান্ত, 'উচ্চ প্রত্যাশা আরেকটি কারণ ছিল, সবকিছু হারানোর পরই তারা প্রাণপণে খেলেছিল।'

'অহেতুক চাপ নেওয়া, দলের মূল শক্তি মিডফিল্ডকে পুরোপুরি কাজে না লাগানো, সেই অনুযায়ী দল না সাজিয়ে আমরা রক্ষণশীল সিদ্ধান্তের জালে নিজেদের আটকে রেখেছিলাম।'

ঘরোয়া মৌসুমের সেরা এই কোচের প্রশ্ন, 'বিদেশী প্রতিভা  থাকা সত্ত্বেও যদি তাদের কার্যকরভাবে ব্যবহার না করা হয় তবে তার মানে কী?' সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে বদলের গল্প প্রবাসীদের আগমনে। সেই তাদেরও যদি পুরনো সিষ্টেমে খেলানো হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা কিছুই শিখিনি, 'হামজা এবং শামিত গেম-চেঞ্জার হতে পারেন। একইভাবে রাকিব হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম এবং ফাহামেদুল ইসলামও পারেন, যদি তারা সঠিক জায়গায় বল পান। কিন্তু কোচ যদি এমন একটি সিস্টেম তৈরি না করেন যা তাদের একত্রিত করে এবং তাদের সেরাটা বের করে আনে তবে এর কোনও অর্থই নেই।'

বাংলাদেশ যদি ৪৭ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন দেখতে চায়, তবে নিরাপদ ফুটবলের সময় শেষ। এখন সময় এসেছে স্মার্ট ফুটবল খেলার, সাহসী ফুটবল খেলার – এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – দলের শক্তি অনুযায়ী খেলার। নাহলে, এটা কেবল লাল-সবুজ জার্সিতে প্রতিভাদের সাজিয়ে এক হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় লড়াই করতে বলার মতোই হবে।

Comments

The Daily Star  | English
yunus tarique meeting begins in london

Yunus-Tarique meeting ongoing

Amir Khosru, Humayun Kabir accompany the BNP acting chairperson to The Dorchester

1h ago