২ গোল হজমের পর ভিনিসিয়ুসের হ্যাটট্রিকে রিয়ালের অসাধারণ জয়

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ছবি: এএফপি

প্রথমার্ধে দুই গোল হজম করা রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াল অসাধারণ কায়দায়। হারের শঙ্কা উড়িয়ে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে স্রেফ তছনছ করে দিল তারা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে তুলে নিল বড় জয়।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মঙ্গলবার রাতে ৫-২ গোলে ডর্টমুন্ডকে বিধ্বস্ত করেছে রিয়াল। আসরে তিন ম্যাচে প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি দ্বিতীয় জয়। ভিএফবি স্টুটগার্টের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে জয়ের পর গত রাউন্ডে তারা লিলের মাঠে হেরে গিয়েছিল।

ডোনিয়েল মালেন ও জেমি গিটেন্সের গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের মাঠে প্রথম জয়ের হাতছানি তখন পাচ্ছিল তারা। কিন্তু কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের ভাবনা ছিল একেবারেই আলাদা। আরেকটি স্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ৩৩ মিনিটের মধ্যে পাঁচবার গোলের উল্লাস করে স্প্যানিশ পরাশক্তিরা।

ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকা রিয়ালের আক্রমণের তীব্র জোয়ারে একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ডর্টমুন্ড। ভিনিসিয়ুসকে থামানোর কোনো উপায় যেন জানা ছিল না নুরি শাহিনের শিষ্যদের। তিনটি গোলের দুটিই তিনি করেন একক নৈপুণ্যে। স্বাগতিকদের বাকি দুই গোলদাতা হলেন অ্যান্টোনিও রুডিগার ও লুকাস ভাজকেজ।

পরিসংখ্যানেও ফুটে ওঠে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের দাপট। গোলমুখে তারা শট নেয় ২১টি। এর মধ্যে লক্ষ্যে থাকে ১০টি। বিপরীতে, ডর্টমুন্ডের নেওয়া আটটি শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে। তাদের কোচ শাহিন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেন। উদ্দেশ্য ছিল হয়তো লিড ধরে রেখে খেলতে থাকা। কিন্তু তাতে ফল আসে উল্টো।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগেও অনেক ক্লাবকে যে অবিশ্বাস্য ও তেতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, ডর্টমুন্ডের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটে। তাই তাদের গত মৌসুমের ফাইনালে হারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার স্বপ্ন অল্প সময়ের মধ্যেই রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। রিয়াল ফিরে আসে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে।

প্রথমার্ধে উত্তেজনাপূর্ণ শুরুর পর কিছুটা থমকে আসে খেলার গতি। তবে আধা ঘণ্টা পেরোতেই প্রাণ খুঁজে পায় দুই দলের লড়াই। ৩০তম মিনিটে ডি-বক্সে সেহু গিরাসির ঠাণ্ডা মাথার পাসে ডাচ ফরোয়ার্ড মালেন লক্ষ্যভেদ করেন।

এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ফের রিয়ালের জালে প্রবেশ করে বল। চার মিনিট পর মালেন ডানদিক থেকে পাস বাড়ান বাঁদিকে। ছুটে গিয়ে বল জালে পাঠান ইংলিশ ফরোয়ার্ড গিটেন্স। দুটি গোলেই ফুটে ওঠে আনচেলত্তির দলের রক্ষণভাগের দুর্বলতা।

ম্যাচে ফেরার জন্য তৎক্ষণাৎ মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। ৩৫তম মিনিটে জুড বেলিংহ্যাম নষ্ট করেন দারুণ একটি সুযোগ। ফাঁকায় থেকেও তার নেওয়া দুর্বল হেড সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেল। পরের মিনিটে বিস্ময় জাগিয়ে দুবার দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় রিয়ালের। রদ্রিগোর শট ক্ররবারে বাধা পাওয়ার পর বেলিংহ্যামের শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে বেরিয়ে যায়।

ডর্টমুন্ডও ব্যবধানে বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। তবে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া তা হতে দেননি। ৩৮তম মিনিটে ইউলিয়ান ব্রান্ডট ও ৪০তম মিনিটে গিটেন্সের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তিনি।

বিরতির পর থেকেই রিয়ালের আক্রমণের জোর বহুগুণে বাড়ে। খোলসে ঢুকে পড়া ডর্টমুন্ডের রক্ষণে বারবার হানা দিতে থাকে তারা। তবে ফেদেরিকো ভালভার্দে ও ভিনিসিয়ুস সুযোগ পেলেও কোবেলকে পরাস্ত করতে পারেনি। খেলার ধারার বিপরীতে মালেনের নেওয়া শটও ঠেকান কোর্তোয়া।

অবশেষে রিয়াল সফলতার মুখ থেকে ম্যাচের এক ঘণ্টায় গিয়ে। তখন পর্যন্ত অনুজ্জ্বল থাকা কিলিয়ান এমবাপে ডানদিক থেকে ক্রস করেন ডি-বক্সে। জোরালো হেডে জাল কাঁপান জার্মান ডিফেন্ডার রুডিগার। শুরু হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজাদের তাণ্ডব।

দুই মিনিটের মধ্যে সমতায় ফেরে রিয়াল। লুকা মদ্রিচের পাস এমবাপে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই ট্যাকলের শিকার হন। সৌভাগ্যক্রমে বল চলে যায় ভিনিসিয়ুসের পায়ে। ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। শুরুতে অফসাইডের বাঁশি বাজালেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি বাজান গোলের বাঁশি।

৮০তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া এমবাপের শট রুখে দেন কোবেল। দুই মিনিট পর কোর্তোয়া কোনোক্রমে পা দিয়ে ঠেকান ম্যাক্সিমিলিয়ান বায়ারের শট। ম্যাচের বাকি সময়ের গল্পটা কেবলই রিয়াল ও ক্লাবটির সমর্থকদের উন্মাদনায় ভেসে যাওয়ার।

৮৩তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠার পর এমবাপেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন ভাজকেজ। সেই পাস প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করলেও ফের দৌড়ে গিয়ে বল দখলে নেন তিনি। এরপর কোণাকুণি শটে দূরের পোস্টে বল পাঠান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। এগিয়ে গিয়ে পূর্ণ পয়েন্ট প্রাপ্তির সুবাস পেতে থাকে রিয়াল।

বাকিটা রাঙান চলতি বছরের ব্যালন দি'অর জয়ের দৌড়ে শক্ত অবস্থানে থাকা ভিনিসিয়ুস। ৮৬তম মিনিটে করেন মনে রাখার মতো একটি গোল। নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে বামপ্রান্ত দিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। গতিতে এমরে চ্যান ও নিকলাস সুলেকে পেছনে ফেলেন। এরপর ভেতরের দিকে এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেন জোরালো শট। তা ঠেকানোর উপায় ছিল না গোলরক্ষকের।

যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ভিনিসিয়ুস। ডর্টমুন্ডের সামান্য ভুলে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পরাস্ত করেন কোবেলকে। বার্নাব্যুর টইটম্বুর গ্যালারিতে গর্জনে ফেটে পড়া দর্শকদের সামনে জার্সি খুলে উদযাপন করেন তিনি।

তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্বের পয়েন্ট তালিকার নয়ে উঠে এসেছে রিয়াল। সমান পয়েন্ট পাওয়া ডর্টমুন্ডের অবস্থান পাঁচে। গোল পার্থক্যে এগিয়ে আছে তারা। শীর্ষে রয়েছে রাতের আরেক ম্যাচে ঘরের মাঠে বোলোনিয়াকে ২-০ গোলে হারানো ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলা। তিন ম্যাচের সবকটিতে জেতায় তাদের অর্জন ৯ পয়েন্ট।

বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে এমন জয় নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে রিয়ালকে। আগামী শনিবার রাতে এবারের মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে নামবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। বার্নাব্যুতেই হবে ম্যাচটি। লা লিগায় ১০ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে রিয়াল। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সা।

Comments

The Daily Star  | English
Protests disrupt city life in Dhaka

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

2h ago