রিয়ালকে তাদের মাঠেই গুঁড়িয়ে দিল বার্সেলোনা

রবার্ত লেভানদোভস্কি। ছবি: এএফপি

লা লিগায় টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি নিয়ে খেলতে নামা রিয়াল মাদ্রিদ মুখ থুবড়ে পড়ল। যাদের দখলে এই কীর্তি, সেই বার্সেলোনার কাছে স্রেফ উড়ে গেল তারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের গুঁড়িয়ে এবারের আসরের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান মজবুত করল হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

শনিবার রাতে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে রিয়ালকে তাদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বার্সা। রক্ষণভাগে দৃঢ়তা দেখানোর পাশাপাশি উজ্জ্বল ছিল তাদের আক্রমণভাগ। ম্যাচের সবগুলো গোলই আসে বিরতির পর। অসাধারণ ছন্দে থাকা পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ত লেভানদোভস্কি দুই মিনিটের মধ্যে দুবার জাল খুঁজে নেন। এরপর ব্যবধান বাড়ান স্প্যানিশ উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল ও ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া।

যন্ত্রণাদায়ক এই হারে থামল লা লিগায় রিয়ালের টানা ৪২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার যাত্রা। শেষবার তারা এই প্রতিযোগিতায় হেরেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে ২-১ গোলে। স্পেনের শীর্ষ লিগে টানা ৪৩ ম্যাচ জেতার রেকর্ড বার্সেলোনা গড়েছিল ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে।

বল দখলে এগিয়ে থাকা কাতালানরা আক্রমণেও দাপট দেখায়। ম্যাচের ৫৮ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে গোলমুখে তারা শট নেয় ১৫টি। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল সাতটি। বিপরীতে, গোলপোস্টে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের নয়টি শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে।

গত সপ্তাহে বার্নাব্যুতেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৫-২ গোলে জিতেছিল রিয়াল। ভিনিসিয়ুস করেছিলেন চমৎকার হ্যাটট্রিক। কিন্তু এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে, ফ্লিকের অধীনে চলতি মৌসুমে বদলে যাওয়া বার্সা টানা দুটি কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ফল নিয়ে। রাফিনিয়ার হ্যাটট্রিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর লা লিগার শিরোপাধারী রিয়ালকেও ধরাশায়ী করল।

লম্বা পাসে বারবার প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করে লস ব্লাঙ্কোরা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও শৃঙ্খলা রেখে তাদেরকে প্রায় প্রতিবারই অফসাইডের ফাঁদে ফেলে বার্সা, সব মিলিয়ে ১২ বার। বিশেষ করে, ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে ছিলেন ভুক্তভোগী। অনেকবার অফসাইডের ফাঁদে পড়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ভালো সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকেও পাওয়া যায়নি চেনা ছন্দে।

১৩তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি তৈরি করে বার্সেলোনা। নিজদের অর্ধ থেকে পাউ কুবারসি পাসে দারুণভাবে ব্যাকহিল করেন লেভানদোভস্কি। ফাঁকায় বল পেয়ে ডি-বক্সের দিকে ছুটে যান ইয়ামাল। কিন্তু তার নেওয়া দুর্বল শট গোলরক্ষক আন্দ্রিই লুনিন লুফে নেন সহজেই।

২১তম মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে রাফিনিয়ার নেওয়া শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। দুই মিনিট পর প্রথমবারের মতো রিয়াল ভীতি ছড়ায় সফরকারীদের গোলমুখে। মাঝমাঠের কাছে আহেলিয়া চুয়ামেনির পাস ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যান ভিনিসিয়ুস। ডি-বক্সে ঢুকে জুলস কুন্দে ও কুবারসিকে কাটিয়ে নেন গড়ানো শট। তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

২৯তম মিনিটে পেদ্রির দূরপাল্লার শট রুখে দেন লুনিন। এরপর পাওয়া কর্নারে ইনিগো মার্তিনেজের হেড ক্রসবার ঘেঁষে চলে গেলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি বার্সেলোনার। দুই মিনিট পর রিয়াল উল্লাসে মাতলেও তা টেকেনি বেশিক্ষণ। নিশানা ভেদ করা এমবাপে অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করে দেন রেফারি।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই লেভানদোভস্কির নৈপুণ্যে চালকের আসনে বসে পড়ে বার্সেলোনা। ৫৪তম মিনিটে মার্ক কাসাদোর থ্রু পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শটে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। এরপর ৫৬তম মিনিটে আলেহান্দ্রো বালদের ক্রসে লাফিয়ে হেড করে দ্বিগুণ করেন ব্যবধান। চলতি লিগে গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে থাকা লেভানদোভস্কির গোল হলো ১১ ম্যাচে ১৪টি।

৬৪তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের পাসে ইনাকি পেনিয়াকে একা পেয়ে যান এমবাপে। কিন্তু তার প্রচেষ্টা বার্সা গোলরক্ষক এগিয়ে এসে ব্যর্থ করেন। দুই মিনিট পর আবার নিশানা খুঁজে নিলেও এমবাপেকে হতাশ হতে হয়। ফের বেজে ওঠে অফসাইডের বাঁশি।

পরের মিনিটেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতে পারত লেভানদোভস্কির। গোলমুখে রাফিনিয়ার পাস পেয়ে ফাঁকা জালের দিকে শট নেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বল পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে আরেকবার সুযোগ আসে লেভানদোভস্কির সামনে। এই দফায় ইয়ামালের পাসে তার জোরালো শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৭১তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে এমবাপের আরেকটি শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান পেনিয়া। রিয়ালের ফেরার আশা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে।

৭৭তম মিনিটে জয় একরকম নিশ্চিত করে ফেলে বার্সেলোনা। বামপ্রান্ত থেকে রাফিনিয়ার পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের বুলেট গতির শটে কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ইয়ামাল। সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে এল ক্লাসিকোয় গোলের কীর্তিও গড়লেন তিনি (১৭ বছর ১০৬ দিন)।

৮৪তম মিনিটে আরও একটি গোল হজম করতে হয় অসহায় লুনিনকে। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা পাসে রাফিনিয়াকে খুঁজে নেন ইনিগো। সঙ্গে লেগে থাকা লুকাস ভাজকেজকে গতিতে পেছনে ফেলেন তিনি। এরপর চিপ করে বল জালে পাঠিয়ে গোটা বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দেন।

এল ক্লাসিকোতে টানা চার হারের পর জয়ের স্বাদ পেল বার্সেলোনা। লিগের পয়েন্ট তালিকার চূড়ায় থাকা দলটির অর্জন ১১ ম্যাচে ১০ জয়ে ৩০ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে সাত জয় ও তিন ড্রয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে অবস্থান করছে রিয়াল।

Comments

The Daily Star  | English

All killings, rights abuses must be probed

Volker Turk says about crimes committed before, after Aug 5

2h ago