উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে লুনিনের নৈপুণ্যে সিটিকে হারিয়ে সেমিতে রিয়াল

ছবি: এএফপি

নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আলাদা করা গেল না দুই ক্লাবকে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট শেষেও থাকল সমতা। ম্যানচেস্টার সিটির আক্রমণের তীব্র ঝাপটা সামলে লড়াইয়ে টিকে রইল রিয়াল মাদ্রিদ। অবধারিতভাবে তাই রোমাঞ্চকর ম্যাচ গড়াল পেনাল্টি শুটআউটে। সেখানে দুটি শট সেভ করে নায়ক বনে গেলেন গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন। শিরোপাধারীদের ছিটকে দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠল আসরের রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

বুধবার রাতে সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের খেলা ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতেছে রিয়াল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গত সপ্তাহে দুই পরাশক্তির প্রথম লেগের ম্যাচ ড্র হয়েছিল ৩-৩ গোলে।

প্রথমার্ধের শুরুর দিকে রদ্রিগোর গোলে রিয়াল এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে সেই গোল শোধ করে দেন ম্যান সিটির কেভিন ডি ব্রুইনা। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে বার্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট আটকে দেন রিয়ালের ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক লুনিন। তাই লুকা মদ্রিচের শট এদারসন ফিরিয়ে দিলেও তা যথেষ্ট হয়নি সিটির জন্য।

গত মৌসুমে এই মাঠেই সেমির ফিরতি লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠার পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল সিটি। এবার তাদের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান থেমে গেল শেষ আটেই। ফলে শেষ হয়ে গেল তাদের ট্রেবল জয়ের স্বপ্নও।

অথচ গোটা ম্যাচেই কোণঠাসা ছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের মুহুর্মুহু আক্রমণ রুখে দিয়ে শেষমেশ তারাই করে বাজিমাত। ৬৭ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন সিটি গোলমুখে ৩৩টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে নয়টি। অন্যদিকে, স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়ালের নেওয়া আটটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল তিনটি।

ম্যাচের দশম মিনিটে প্রথমবারের মতো কোনো দল বল লক্ষ্যে রাখতে পারে। গোলপোস্টের অনেক দূর থেকে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার নেওয়া শট অবশ্য অনায়াসে লুফে নেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদারসন।

স্রেফ দুই মিনিট পরই দর্শনীয় একটি পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতে রিয়াল। শুরুটা হয় ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যামের থেকে। সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তিনি ডান প্রান্তে খুঁজে নেন ফেদেরিকো ভালভার্দেকে। এরপর ডি-বক্সে বল পান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তার পাসে রদ্রিগোর প্রথম শট এদারসনের পায়ে লেগে ফিরে আসলেও বিপদমুক্ত হয়নি। ফিরতি শটে আর কোনো ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। বল পাঠিয়ে দেন জালে।

গোল হজমের পর তেতে ওঠা ম্যান সিটি প্রথমার্ধের বাকি অংশে বইয়ে দেয় আক্রমণের বন্যা। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মেলেনি তাদের। ১৭তম মিনিটে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড বার্নার্দোর ক্রসে আর্লিং হালান্ডের হেড পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। দুই মিনিট পর তীব্র আফসোসে পুড়তে হয় নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারকে। তার আরেকটি হেড বাধা পায় ক্রসবারে।

২৭তম মিনিটে ডি ব্রুইনার কোণাকুণি শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান আন্দ্রি লুনিন। পরের মিনিটে হালান্ডের হেড পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি রিয়ালের গোলরক্ষককে। ৩৩তম মিনিটে ডি ব্রুইনার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বেশ ওপর দিয়ে। তিন মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে জ্যাক গ্রিলিশের শট জার্মান ডিফেন্ডার অ্যান্টোনিও রুডিগারের পা ছুঁয়ে বাইরের দিকের জালে লাগলে বেঁচে যায় সফরকারীরা।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ফিল ফোডেনের দূর থেকে মারা শটও খুঁজে পায়নি প্রত্যাশিত ঠিকানা। ফলে গোলমুখে ১১টি শট নিয়ে তিনটি লক্ষ্যে রেখেও পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয় সিটিজেনদের।

দ্বিতীয়ার্ধেও একই ধাঁচে খেলতে থাকে স্বাগতিকরা। বিপরীতে, রিয়াল রক্ষণাত্মক কৌশল থেকে বের হয়নি। ৪৭তম মিনিটে ইংলিশ মিডফিল্ডার গ্রিলিশের শট ঠেকান লুনিন। চার মিনিট পর গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল সিটি। ডি ব্রুইনার থ্রু বল হালান্ড নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই নাচো ফার্নান্দেজ তা আলতো টোকায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু লুনিনকে ফাঁকি দিয়ে তা চলে যাচ্ছিল জালের দিকে। শেষ মুহূর্তে প্রায় গোললাইন থেকে বল বিপদমুক্ত করেন নাচো।

চাপ ধরে রেখে অবশেষে ৭৬তম মিনিটে সমতাসূচক গোলের দেখা মেলে। বদলি জেরেমি ডকুর ক্রস রুডিগার ব্লক করার পর সৌভাগ্যজনকভাবে বল পড়ে যায় ডি ব্রুইনার পায়ে। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ডি-বক্সের ভেতর থেকে প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উঁচু শটে নিশানা ভেদ করেন।

দুই মিনিট পর ডি ব্রুইনার দূরপাল্লার শট আঙুলের টোকায় রুখে দেন লুনিন। চার মিনিট পর অবিশ্বাস্য এক মিস করে বসেন ডি ব্রুইনাই। ডি-বক্সের ভেতরে ফাঁকায় থেকেও মানুয়েল আকাঞ্জির পাস থেকে বল উড়িয়ে মারেন তিনি। 

১-১ গোলে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে একটি করে দারুণ সুযোগ পায় দুই দল। তবে সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। ৯৯তম মিনিটে ডি-বক্সে অরক্ষিত ফিল ফোডেন পারেননি ঠিকমতো বলে পা লাগাতে। আর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে এদারসনকে একা পেয়েও রুডিগার বল মারেন বাইরে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ছিল না উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণ।

এরপর টাইব্রেকারে লুনিনের বীরত্বে লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দেয় রিয়াল। হুলিয়ান আলভারেস, ফোডেন ও এদারসন জাল খুঁজে পেলেও বার্নার্দোর দুর্বল সোজা শট লুফে নেওয়ার পর কোভাচিচকেও হতাশ করেন লুনিন। অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মদ্রিচ না পারলেও বেলিংহ্যাম, লুকাস ভাজকেজ, নাচো ও রুডিগার সফল পেনাল্টি নেন।

সেমিফাইনালে ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে রিয়াল। আরেক কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে ঘরের মাঠ আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্ন ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্সেনালকে। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানের আগ্রগামিতায় তারা পেয়েছে শেষ চারের টিকিট।

Comments

The Daily Star  | English

Govt yet to receive any letter from Tulip: Shafiqul

Tulip has written to Yunus as she wants to meet him in London to clear up a "misunderstanding" after corruption allegations made by the interim govt led her to resign from the UK government

1h ago