উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

৬ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে রিয়াল-ম্যান সিটির ড্র

ছবি: এএফপি

উত্তেজনাপূর্ণ, জমজমাট, রোমাঞ্চকর, রুদ্ধশ্বাস ও নাটকীয় ম্যাচ বলতে যা বোঝায়, তার সবকিছুরই দেখা মিলল রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির লড়াইয়ে! দুই অর্ধে হলো তিনটি করে গোল। অনবদ্য ফুটবলে শিরোপাপ্রত্যাশী দুই শক্তিশালী ক্লাবই জাগাল জয়ের সম্ভাবনা। যদিও শেষমেশ সমতা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো তাদেরকে। তবে এই দ্বৈরথ নিঃসন্দেহে ফুটবলপ্রেমীদের মণিকোঠায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুদিন।

মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে স্বাগতিক রিয়ালের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে ম্যান সিটি। এমন স্কোরলাইন আসরের শিরোপাধারীদের জন্য সত্যিকার অর্থে সন্তোষজনক। কারণ আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে খেলার সুবিধা পাবে তারা।

কার্লো আনচেলত্তির দলের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন রদ্রিগো ও ফেদেরিকো ভালভার্দে। বাকিটি রুবেন দিয়াসের আত্মঘাতী। অন্যদিকে, পেপ গার্দিওলার দলের হয়ে নিশানা ভেদ করেন বার্নার্দো সিলভা, ফিল ফোডেন ও ইয়োসকো ভারদিওল।

প্রতিপক্ষের মাঠে বল দখলে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সিটিজেনরা। তাদের পায়ে ৬২ শতাংশ সময় ছিল বল। আর আক্রমণে দুই দলই ছিল অসাধারণ। গোলমুখে সিটির নেওয়া ১২টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি। বিপরীতে, রিয়াল গোলমুখে ১৪টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ছয়টি।

দর্শকরা নড়েচড়ে বসার আগেই ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে লিড পেয়ে যায় সিটি। ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশকে ফরাসি ডিফেন্ডার আহেলিয়া চুয়ামেনি ফাউল করায় রেফারি দেন ফ্রি-কিকের নির্দেশ। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে গোলপোস্টে বুদ্ধিদীপ্ত নিচু শট নেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার বার্নার্দো। সেটা ঠেকানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন না ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন। ডানদিকে ডাইভ দিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি তিনি।

পাঁচ মিনিট পর ফের রিয়ালকে রক্ষণ সামলাতে মনোযোগী হতে হয়। বামপ্রান্ত দিয়ে গ্রিলিশ খুঁজে নেন আর্লিং হালান্ডকে। কাছের পোস্টে নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন লুনিন। এরপর গ্রিলিশের ফিরতি প্রচেষ্টা ব্লক করেন জার্মান মিডফিল্ডার অ্যান্তোনিও রুডিগার।

পাঁচ মিনিট পরই অবশ্য সমতায় ফেরার উল্লাসে মাতোয়ারা হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ডানপ্রান্তে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দানি কারভাহালের পাস পেয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে পড়েন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ফরাসি মিডফিল্ডার ডি-বক্সের বাইরে থেকে যে শট নেন, তা লক্ষ্যভ্রষ্টই হতে পারত। তবে সৌভাগ্যক্রমে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার দিয়াসের গায়ে লেগে দিক পাল্টায় বল। সেটা গোললাইন অতিক্রম করা থেকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিল না জার্মান গোলরক্ষক স্তেফান ওর্তেগার।

উজ্জীবিত হয়ে উঠে দারুণ একটি পাল্টা আক্রমণে তিন মিনিটের মধ্যে স্কোরলাইন ২-১ করেও ফেলে রিয়াল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নিজেদের অর্ধ থেকে রক্ষণচেরা পাস দেন জাতীয় দলের সতীর্থ রদ্রিগোর উদ্দেশে। তিনি সামনে এগিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ম্যান সিটির ডি-বক্সে। ততক্ষণে পেছন থেকে দৌড়ে সামনে চলে আসেন সুইস ডিফেন্ডার মানুয়েল আকাঞ্জি। কিছুটা সময় নিয়ে তাকেসহ ওর্তেগাকে বোকা বানান রদ্রিগো। ঠাণ্ডা মাথায় দুজনের পায়ের ফাঁক দিয়ে আলতো করে বল জালে ঠেলে দেন তিনি।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। কিন্তু সুবর্ণ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়ার হতাশায় পুড়তে হয় তাদের। ৩১ ও ৩৩তম মিনিটে রদ্রিগো পারেননি জাল খুঁজে নিতে। ৪২তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট ঠেকিয়ে দেন ওর্তেগা।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে ম্যান সিটির মধ্যে গোলের তাড়না বেশি লক্ষ করা যায়। একের পর এক আক্রমণে লুনিনের পরীক্ষা নিতে থাকেন ফোডেন-বার্নার্দোরা। সেই ধারায় ৬৬তম মিনিটে সমতা ফিরে আসে ম্যাচে। জাতীয় দলের সতীর্থ জন স্টোনসের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের সামনে থেকে জোরালো শটে জাল কাঁপান ইংলিশ মিডফিল্ডার ফোডেন।

পাঁচ মিনিট পর আরেকটি দর্শনীয় গোলে সফরকারীরা ফের লিড নিয়ে ফেলে। চলতি মৌসুম শুরুর আগে সিটিতে নাম লেখানো ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ভারদিওল ইংলিশ জায়ান্টদের জার্সিতে প্রথমবারের মতো লক্ষ্যভেদের স্বাদ নেন। গ্রিলিশের কাটব্যাকে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শট নেন তিনি। দূরের পোস্ট ঘেঁষে বল ঠিকানা খুঁজে নেয় বুলেট গতিতে। কোনো কিছুই করার ছিল না লুনিনের।

কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া রিয়াল ধাক্কা সামলে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে এরপর। ফলে ৭৯তম আরেকবার নাটকীয়তা তৈরি হয় লড়াইয়ে। বাম প্রান্ত থেকে দূরের পোস্টে নিখুঁত ক্রস ফেলেন ভিনিসিয়ুস। বল মাটিতে পড়ার আগেই চোখ ধাঁধানো ভলিতে উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার ভালভার্দে গোল করেন। কেঁপে ওঠে গোটা বার্নাব্যু স্টেডিয়াম। এই দফায় দর্শক হওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না ওর্তেগার।

শেষদিকে সিটির তুলনায় রিয়ালই গোলের জন্য মরিয়া ছিল বেশি। তবে স্কোরলাইনের অচলাবস্থা ভাঙা পড়েনি শেষ বাঁশি বেজে ওঠা পর্যন্ত। ফলে জয়-পরাজয়ের দেখা মেলেনি আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ঠাসা দ্বৈরথে।

এই ম্যাচে সিটির হয়ে খেলতে পারেননি বেলজিয়ান মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। তিনি বার্নাব্যুতে পৌঁছানোর পর শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছিলেন। অন্যদিকে, হলুদ কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় দুই দলের আগামী সাক্ষাতে খেলতে পারবেন না চুয়ামেনি।

আগামী ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। সেদিনই নির্ধারিত হবে কোন ক্লাব পাবে সেমিফাইনালের টিকিট। তবে ইতিহাদে রিয়ালের রেকর্ড একেবারেই মলিন। ওই স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে একবারও জিততে পারেনি তারা। গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের পথে সেমিতে তাদেরকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ম্যান সিটি।

Comments

The Daily Star  | English
High Court

Fresh probe by home ministry needed: HC

The August 21, 2004 grenade attack case should be referred to the home ministry for a fresh probe by a proper and expert investigation agency to ensure justice, observed the High Court in its full verdict

16m ago