এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে: সানজিদা
প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট অর্জনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। অপ্রতিরোধ্য গতিতে তারা উঠে গেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। আগেও একবার আসরের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। সেবার ব্যর্থ হলেও এবার সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা নিংড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তার।
আগামীকাল সোমবার সাফের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে।
এবারের সাফে টানা চার জয় পেয়েছে গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা। প্রতিপক্ষের জালে ২০ বার বল পাঠানোর বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি তারা। মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব শুরু করা নারীরা পরে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেয় ৬-০ গোলে। সাফের গত পাঁচ আসরের সবকটিতে শিরোপা জেতা ভারতকে শেষ ম্যাচে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। আর সেমিফাইনালে সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, কৃষ্ণা রানি সরকার, মনিকা চাকমাদের কাছে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয় ভুটান। ৮-০ গোলে জিতে বাংলাদেশ পায় ফাইনালের টিকিট।
চোখ এখন শিরোপার দিকে। সেটা উঁচিয়ে ধরে দেশবাসীকে উপহার দিতে চান সানজিদা। সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই পর্যন্ত আসতে যারা নারী ফুটবলারদের সাহায্য করেছেন, তাদের অবদানকে করতে চান স্মরণীয়। পাশাপাশি নিজেদের জীবনযুদ্ধকে দিতে চান স্বীকৃতি।
রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে ২২ বছর বয়সী সানজিদা লিখেছেন, 'দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। পাঁচবার সাফের মঞ্চে এসে একবার রানার্সআপ, তিনবার সেমিফাইনাল ও একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি। ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সবসময় রোমাঞ্চকর। এছাড়া, এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখনও আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়ব এমন নয়, এগার জনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাব। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখব না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।'
Comments